বাংলার ভোর প্রতিবেদক
দেশের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কর্মবিরতির কারণে বিপাকে পড়েছে পরীক্ষা দিতে আসা হাজারো শিক্ষার্থী। চার দফা দাবিতে বাংলাদেশ সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির ডাকে সোমবার যশোর জিলা স্কুল, যশোর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, মণিরামপুর সরকারি উচ্চবিদ্যালয় এবং মণিরামপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা কর্মবিরতি পালন করেন। এর ফলে বিদ্যালয়গুলোতে চলমান ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা এবং দশম শ্রেণির নির্বাচনী পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।

সোমবার বেলা সাড়ে ১১টা। যশোর জিলা স্কুলের মূল ফটকে এসে ফিরে যেতে দেখা যায় ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী মুবিন হোসেনকে। তার হাতে পরীক্ষার প্রবেশপত্র ও কলম। নিরাপত্তাকর্মীর কাছে জানতে পারে, “স্যাররা বলেছেন, আজ (সোমবার) পরীক্ষা হবে না।” মুবিন জানায়, সোমবার দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত তার আইসিটি (তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি) পরীক্ষা ছিল। সে দুশ্চিন্তায় আছে, “আগামীকালের (মঙ্গলবারের) পরীক্ষা হবে কি না, সেটাও জানতে পারছি না।”

বেলা ১১টা ৫৩ মিনিটে একই অবস্থা হয় ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র মুনকার নাঈম রুশদী ও ইয়াসির আরাফাত মাহিনের। তারা স্কুল ফটক দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় জানায়, আগে থেকে পরীক্ষা স্থগিতের কোনো খবর তারা জানতে পারেনি। বিদ্যালয়ে এসে শুনছে পরীক্ষা হবে না।

যশোর জিলা স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ জয়নুল আবেদীন শিক্ষার্থীদের অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, “কর্মবিরতির কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা সাময়িক অসুবিধায় পড়েছে। আমরা তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে পরীক্ষা স্থগিতের বিষয়টি জানাইনি। তারা বিভিন্নভাবে জেনেছে। অনেক শিক্ষার্থী আজ (সোমবার) বিদ্যালয়ে এসে জেনেছে। এ জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি।”

শিক্ষকদের কর্মবিরতির কারণে পরীক্ষা স্থগিত হলেও, সব বিদ্যালয়ে আগে থেকে নোটিশ দেয়ার ব্যবস্থা ছিল না।
যশোর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কেবল রোববার রাতে তাদের ফেসবুক পেজে একটি নোটিশ দিয়ে জানায় যে ‘অনিবার্য কারণবশত’ আজকের পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। অন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সকালে ও বিকেলের পালায় পরীক্ষা দিতে এসে পরীক্ষার গেটে এই খবর জানতে পারে।

যশোর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নুরুল ইসলাম বলেন, “তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে ছাত্রীরা যাতে ভোগান্তিতে না পড়ে, সে জন্য বিদ্যালয়ের ফেসবুক পেজে রোববার রাতে পরীক্ষা বন্ধের ব্যাপারে একটি নোটিশ দিয়েছি।”
যশোর জিলা স্কুল সূত্র জানায়, বিদ্যালয়টিতে দুই পালায় পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। সকালের পালা (৯টা থেকে দুপুর ১২টা) এবং বিকেলের পালা (১টা থেকে বিকেল ৪টা)। সোমবার স্থগিত হওয়া পরীক্ষাগুলো হলো-সকালে সপ্তম ও নবম শ্রেণির তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি পরীক্ষা। বিকেলে ষষ্ঠ শ্রেণির তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি, অষ্টম শ্রেণির ধর্ম এবং দশম শ্রেণির ইংরেজি প্রথম পত্রের পরীক্ষা। বার্ষিক পরীক্ষা আগামী ৭ ডিসেম্বর এবং নির্বাচনী পরীক্ষা ১১ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

এদিকে, সরকারি মাধ্যমিক শিক্ষকেরা তাদের দাবি পূরণ না হলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তাদের মূল দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, ‘সহকারী শিক্ষক’ পদটিকে বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারভুক্ত করে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গেজেট দ্রুত প্রকাশ করা। বিদ্যালয় ও পরিদর্শন শাখায় কর্মরত শিক্ষকদের বিভিন্ন শূন্য পদে নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদায়ন দ্রুত কার্যকর করা। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের আলোকে বকেয়া টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের মঞ্জুরি আদেশ তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রদান করা। ২০১৫ সালের আগের মতো সহকারী শিক্ষকদের ২ থেকে ৩টি ইনক্রিমেন্টসহ অগ্রিম বর্ধিত বেতন সুবিধা বহাল করে গেজেট প্রকাশ করা।

Share.
Leave A Reply Cancel Reply
Exit mobile version