বাংলার ভোর প্রতিবেদক
বুধবার দুপুরে তিনটা। দেশের সর্ববৃহৎ মটর পার্টস ও টায়ার টিউব যন্ত্রংশের ব্যবসায়ীদের মার্কেট যশোর শহরের আরএনরোড। এই রোডের নতুনবাজার এলাকার একটি চায়ের দোকানটিকে ঘিরে ভিড়। কেউ চা পান করছেন; কেউ বা সিগারেট টানছেন। দোকানটিতে এসব ব্যক্তিদের খাবারে ভিন্নতা থাকলেও আড্ডার বিষয়বস্তু এক। সবারই মুখে একটাই বিষয়বস্তু; সেটা হলো- কে হচ্ছেন মটর পার্টস ও টায়ার টিউব নির্বাচনের সভাপতি-সম্পাদক। কোন প্যানেল হচ্ছেন বিজয়ী। তা নিয়ে চলছে চুলচেরাা বিশ্লেষণ। শুধু এই দোকানটি নয়; আরএন রোডের প্রতিটি দোকানেই এখন নির্বাচনের আমেজ। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী প্যানেলের ব্যানার পোস্টার আর প্যান্ডেলে সাজ সাজ রব।
৭ বছর পর বৃহস্পতিবার (আজ) বাংলাদেশ মটর পার্টস ও টায়ার টিউব ব্যবসায়ী সমিতি যশোর সার্কেলের দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন। আর এই নির্বাচনকে ঘিরেই সমগ্র আরএন রোড, মণিহার এলাকায় উৎসবের আমেজ। এদিন সমিতির মিলনায়তে সকাল ৯টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোট দিবেন সংগঠনটির ৯৪৭ জন ভোটার। এবারের নির্বাচনে দুটি প্যানেল থেকে থেকে ৫২ জন এবং স্বতন্ত্র ৩ জনসহ মোট ৫৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সমিতির দ্বিতীয়তলার মিলনায়তনে ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। এদিকে, নির্বাচনে দুটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও অধিকাংশ ভোটার ও ব্যবসায়ীরা বলছেন ভিন্ন কথা। একটি ভঙ্গুর সমিতিকে উন্নত ও আধুনিক সমিতিতে রুপান্তর করা ঠান্ডু-বাপ্পি পরিষদ বিজয়ী হবেন। বিগত সময়ে নেতৃত্ব দিয়ে অবকাঠামাগত উন্নয়নের সঙ্গে সমিতিকে ব্যবসায়ীবান্ধব করেছে ঠান্ডু-বাপ্পি পরিষদ। ফলে সাধারণ ভোটাররা এই পরিষদকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করবে এমনটি আশাবাদ তাদের।
নির্বাচ কমিশন সূত্রে জানাগেছে, ঠান্ডু-বাপ্পি পরিষদে নেতৃত্ব দিচ্ছেন পার্টস ব্যবসায়ীদের পরিচিত মুখ ও সমিতির সিনিয়র সদস্য আরাফাত অটোস শাহিনুর হোসেন ঠান্ডু। তার সঙ্গে আছেন নিউ যশোর মটরস স্বত্বাধিকারী সেলিম রেজা বাপ্পি। এছাড়া মেসার্স হোসেন মটরস স্বত্বাধিকারী শেখ আলাউদ্দিন, এস এন মটরস স্বত্বাধিকারী মশিয়ার রহমান, হাজি মটরস রাবেয়া মটরস স্বত্বাধিকারী উজির হোসেন, ডিএস মটরস স্বত্বাধিকারী মনিরুজ্জামান দিলু, স্বপ্ন অটো স্বত্বাধিকারী রাজু আক্তার, টিসি মটরস আব্বাস আলী, সুলতান মটরস স্বত্বাধিকারী সুলতান আহম্মেদ, শফি আয়রন স্টোরের স্বত্বাধিকারী নাজিম আহম্মেদ, সিমান্ত এন্ড তুহিন মটরস স্বত্বাধিকারী তুহিন, বিসমিল্লাহ ট্রেডিং আব্দুল জলিল, হ্যাভেন অটোস মিরাজ উদ্দীন, শাহানা এন্টারপ্রাইজ আজিজুল ইসলাম, রিজিয়া অটো শাকিল আহমেদ, খান অটোস স্বত্বাধিকারী অলিউর রহমান, রুশো এন্টারপ্রাইজ স্বত্বাধিকারী শাহ নেওয়াজ রুশো, নিউ অটো কর্ণার স্বত্বাধিকারী আব্দুর রহিম, আলিফ ব্যাটারি এন্ড মটরস স্বত্বাধিকারী রাজু আহমেদ, মেঘনা বিয়ারিং এন্ড অটোস স্বত্বাধিকারী হাফিজুর রহমান হাফিজ, মেসার্স মিতু অটোস আব্দুল আলীম, হাসান এন্টারপ্রাইজের আবুল হাসান, ফাতেমা অটো স্বত্বাধিকারী হুমায়ন কবির রাজিব, আজিজ অটো মোবাইল স্বত্বাধিকারী ইউসুফ হোসেন। এছাড়া সংস্কার ও উন্নয়ন পরিষদের নেতৃত্বে রয়েছেন কাসেদুজ্জামান সেলিম ও এজাজ উদ্দিন টিপু। বাকি তিনজন হলেন স্বতন্ত্র।
তবে বিগত কমিটির নেতৃত্ব দেওয়া শাহিনুর হোসেন ঠান্ডুকে আবারও আস্থায় রাখতে চায় দেশের বৃহৎ মটর পার্টস ব্যবসায়ীরা। তাদের ভাষ্য, বিগত সময়ে করোনা ও মামলা জটিলতায় ৭ বছর নির্বাচন না হলেও ভঙ্গুর সমিতিকে আধুনিক ও যুগোপযুগি সমিতিতে রুপান্তরিত করেছেন শাহিনুর হোসেন ঠান্ডু। তিনি ভাঙ্গাচোরা পুরাতন অফিসের স্থলের দুতলা বিশিষ্ট সমিতির অফিস নির্মাণ করেছেন। বিগত সময়ে ব্যবসায়ীবৃন্দদের বসার মতো জায়গা ছিলো না। এখন সেখানে তিনি আধুনিকমানের অফিস কক্ষ, খেলাধুলা রুম, মিলনায়তন, সভাপতি সম্পাদকের আলাদা কক্ষ রয়েছেন। যেখানে নীচতলায় অযুর ব্যবস্থা ও ওয়াশরুমসহ সুসজ্জিত হলরুম নির্মাণ করেছি। অফিসে দোকান বন্ধ করে বিভিন্ন খেলাধুলা করে থাকে। দ্বিতীয় তলায় উপযোগী মিটিংরুম, সভাপতি সম্পাদকের আলাদা রুম করা হয়েছে। পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যখন প্রশাসন মাঠে ছিলো না। তখন কার্যনির্বাহী কমিটি ব্যবসায়ীদের সাথে নিয়ে কাজ করেছি। ব্যবসায়ীদের সম্পদ রক্ষায় এক মাসের বেশি সময় রাতে ডিউটি করেছি। চাঁদাবাজি, সব অপকর্ম থেকে ব্যবসায়ীদের রক্ষার্থে সকল ধরনের কাজ করেছি। ২০১৮ সালের ভ্যাট অফিস আমদানিকারকের বিআইএন লক করেছিলো। এই কমিটি রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানরে সঙ্গে আলোটনা করে বিআইএন আনলক করেছি। এছাড়া প্রতিনিয়ত এই কমিটি ব্যবসায়ীদের স্বাস্থ রক্ষার্থে কাজ করে যাচ্ছে।
ভোটাররা জানান, পরিবর্তনের নামে মিথ্যা ইশতেহার ঘোষণা করেছে অন্য প্রতিদ্বন্দী প্যানেল। মিথ্যা বুলি দিয়ে অবাস্তব ইশতেহার দিয়ে ব্যবসায়ীতের স্বপ্ন দেখাচ্ছে তারা। আদো তাদের সেই মিথ্যা আশ্বাস ইশতেহার গ্রহন করেনি আরএন রোডের ব্যবসাযীরা। যার ফলশ্রুদিতে ব্যবসায়ীরা ঠান্ডু বাপ্পি পরিষদকে বেছে নিয়েছে।
এই বিষয়ে জানতে শাহিনুর হোসেন ঠান্ডু বলেন, ‘জীবনের বড় একটি অংশ পার্টস ব্যবসায়ীর সঙ্গে কাটিয়েছি। নাড়ি নক্ষত্র সবকিছু জানি। ব্যবসায়ীদের মতামতের ভিত্তিতে আমাাকে সভাপতি করেছিলেন। তার মতামতের ভিত্তিতে কাজ করেছি। একটি ভঙ্গুর কমিটিকে উজ্জীবিত করেছি। কমিটির বড় একটি সময় করোনাকালে পার করেছে। এবার ভোটাররা নির্বাচিত করলে-যশোরের কমিটিকে কেন্দ্রের সাথে সংযুক্ত করা হবে। সমিতির নিজস্ব খরচে প্রতিবছর সমিতির সকল সদস্যদের নিয়ে সাধারণ সভা ও পিকনিক করা হবে। সকলের সামনে আয় ব্যয় হিসাব প্রদান করা হবে। প্রতিবছর ইফতার মাহফিল ও দোয়ার অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হবে। আগামিতে সমিতির ভবনের তৃতীয় ও চতুর্থ তলার কাজ করা হবে। নির্বাচনের পরে সকল সদস্যদের উপস্থিতিতে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান, সাধারণ সভা, আপ্যায়নসহ বিনোদনের ব্যবস্থা করা হবে। করোনা ভাইরাস ও মামলার কারণে ৪ বছর নির্বাচন হতে বিলম্ব হয়েছে। আগামীতে দুই বছর পর পর নির্বাচেনর আয়োজন করা হবে। সাধারণ সভায় সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে ব্যবসায়ীদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সিন্ধান্ত নেওয়া হবে। প্রতবছর মেডিক্যাল ক্যাম্প, স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি পালন করা হবে। প্রতিবছর সদস্যদের বিভিন্ন খেলাধুলার আয়োজন করা হবে। কাস্টমস ও প্রশাসনের সাথে যে কোন সমস্যায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা হবে।
এই প্যানেলের আরেক প্রার্থী উজির হোসেন বলেন, আমরা ব্যবসায়ীদের উন্নয়নের পাশপাশি পরিবারের একজন সদস্য হয়ে ব্যবসায়ীদের সকল বিপদে পাশে থাকতে চাই। জন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, সংস্কার করার নামে যারা প্যানেল নিয়েছে; তাদের ইশতেহার বাস্তবসম্মত নয়। আমরা ব্যবসায়ীদের সকল আশা পূরণের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।
Subscribe to Updates
শিরোনাম:
- ফুলের চাষ সম্প্রসারণ ও উন্নতমানের বীজ সংরক্ষণের মতবিনিময়
- যশোরে কৃষকদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপিত
- ঝিকরগাছায় বাস উল্টে খাদে, আহত ২০
- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফখরুলসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা
- যশোর পৌর আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক বিপু গ্রেফতার
- সংকটে পাশে থাকায় ভোটারদের আস্থায় ঠান্ডু-বাপ্পি পরিষদ
- ঐক্যের মধ্যদিয়ে ভারতের আধিপত্য প্রতিহতের ঘোষণা
- শ্যামনগর থানা থেকে লুট হওয়া ৬০ রাউন্ড গুলি ও শ্যুটার গান উদ্ধার
সংকটে পাশে থাকায় ভোটারদের আস্থায় ঠান্ডু-বাপ্পি পরিষদ
মটর পার্টস ও টায়ার টিউব ব্যবসায়ী সমিতির নির্বাচন আজ