বাংলার ভোর প্রতিবেদক
বাংলাদেশ কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. মাসুদ করিম বলেছেন, সংরক্ষণাগার বদলে দিচ্ছে পেঁয়াজ বাজারের পরিস্থিতি। দু’এক বছরের মধ্যে বাংলাদেশে পেঁয়াজের কোনো ঘাটতি থাকবে না। বাংলাদেশ এখনই পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। শুধুমাত্র সংরক্ষণ ব্যবস্থা না থাকায় পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়। এজন্য পেঁয়াজ সংরক্ষণাগার তৈরি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৩০০টি পেঁয়াজ সংরক্ষণাগার তৈরি করা হয়েছে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের এই সংরক্ষণাগার দেখে বেসরকারি পর্যায়ে আরও প্রায় তিন হাজার সংরক্ষণাগার তৈরি হয়েছে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের এই সংরক্ষণাগার ভেল্কিতে বদলে যাচ্ছে দেশের পেঁয়াজ বাজারের চিত্র।
রোববার দুপুরে যশোর সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক হোটেল অডিটোরিয়ামে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর আয়োজিত জাতীয় কৃষি বিপণন আইন ও নীতি বিষয়ক সচেতনতামূলক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। দু’ দিনব্যাপি এই কর্মশালার দ্বিতীয় দিন রোববার সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন।
কর্মশালায় বাংলাদেশ কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মাসুদ করিম আরও বলেন, দেশে কৃষির উন্নয়ন, সম্প্রসারণে যে ভূমিকা রাখা হয়েছে বিপণনে তেমনটি হয়নি। এ কারণে কৃষককে তিন টাকায় ফুলকপি বিক্রি করতে হচ্ছে। যদি এই সবজি-ফসল সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে দৃষ্টি দেওয়া হতো; তাহলে বাজার পরিস্থিতি এমন থাকতো না। কৃষক যেমন যৌক্তিক মূল্য পেতেন, তেমনি ভোক্তাও সহনীয় মূল্যে পণ্য কিনতে পারতেন।
সংরক্ষণের কারণে পেঁয়াজ বাজারের পরিস্থিতির পরিবর্তন তুলে ধরে মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মাসুদ করিম বলেন, গতকালের (শনিবারের) তথ্য; ফরিদপুরের সালতার পেঁয়াজ চাষি কাজী মঈনুদ্দিন ১২ হাজার কেজি পেঁয়াজ সংরক্ষণাগারে সংরক্ষণ করেছিলেন। সংরক্ষণ সময়ে এই পেঁয়াজের দাম ছিল চার লাখ ২০ হাজার টাকা। সেই পেঁয়াজ তিনি বিক্রি করেছেন ১১ লাখ ২৫ হাজার টাকায়। আরেকজন কৃষক (৮ মে.টন) তিন লাখ টাকার পেঁয়াজ সংরক্ষণ করে পরে বিক্রি করেছেন ৬ লাখ ৭৬ হাজার টাকায়। অর্থাৎ উৎপাদিত পেঁয়াজ তিন থেকে ছয় মাস সংরক্ষণ করতে পারলে কৃষক যেমন ভাল লাভ পাবেন; তেমনি দেশে পেঁয়াজের কোনো সঙ্কট থাকবে না। এমনকি পেঁয়াজ রফতানি করাও সম্ভব হবে। কারণ শুধুমাত্র সংরক্ষণের অভাবে দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পঁচে যায়।
তিনি আরও বলেন, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করে। একই সাথে কৃষি পণ্য বাজার ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে কাজ করছে। কৃষি বিপণন ব্যবস্থার উন্নয়নে অনেক কাজ বাকি রয়েছে। সব কাজ সম্পন্ন করতে হলে বিনিয়োগ দরকার। এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সরকার কৃষি পণ্য বিপণন ব্যবস্থার উন্নয়নে বিনিয়োগের বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছে।
ফিড দি ফিউচার বাংলাদেশ পলিসি প্রকল্পের সহায়তায় অনুষ্ঠিত কর্মশালায় বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষি বিপণন অধিদপ্তর খুলনার উপপরিচালক (উপ-সচিব) শাহনাজ বেগম। কর্মশালায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন প্রধান কার্যালয়ের সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম। বক্তব্য রাখেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপ-পরিচালক ড. মো. মোশাররফ হোসেন, যশোরের সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা কিশোর কুমার সাহা ও পলিসি লিংক’র সিনিয়র ম্যানেজার আশিক বিল্লাহ। কর্মশালার দ্বিতীয় দিনে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাগণ অংশগ্রহণ করেন। এর আগে শনিবার এই কর্মশালায় পণ্য উৎপাদক, ব্যবসায়ী, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধি অংশ নেন।