বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোর সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নিরবে সক্রিয় হয়েছে তৃণমূলের অনেক বিএনপি নেতাকর্মী। উপজেলা নির্বাচনের প্রথমদিকে বিএনপি নেতাকর্মীদের তেমন ভূমিকা না থাকলেও ধীরে ধীরে তাদের সংশ্লিষ্টতা বেড়েছে। যদিও দলীয়ভাবে নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়ে সাধারণ মানুষকে নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। দল নির্বাচন বর্জনের পরও বেশ কিছু নেতাকর্মী নির্বাচনে সম্পৃক্ত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণও করেছে জেলা বিএনপি। সদর উপজেলা নির্বাচনেও যারা প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে নির্বাচনে সম্পৃক্ত হয়েছে-তাদের দিকে নজর রাখছে জেলা বিএনপি।
নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগামী ৫ জুন সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। এই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরা হলেন, আনারস প্রতীক নিয়ে বর্তমান চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী, শালিক প্রতীক নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মোহিত কুমার নাথ, মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে যুবলীগ নেতা তৌহিদ চাকলাদার ফন্টু, আনোয়ার হোসেন বিপুল দোয়াত কলম প্রতীক, শফিকুল ইসলাম জুয়েল কাপ পিরিচ প্রতীক, ফাতেমা আনোয়ার ঘোড়া প্রতীক ও শাহরুল ইসলাম জোড়া ফুল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন।
এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ জন প্রার্থী সুলতান মাহমুদ বিপুল টিউবওয়েল, শেখ জাহিদুর রহমান লাবু বৈদ্যুতিক বাল্ব, শাহাজান কবির শিপলু চশমা, কামাল খান তালা ও মনিরুজ্জামান উড়োজাহাজ প্রতীক এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিনজন জ্যোৎস্না আরা বেগম মিলি কলস, বাশিনুর নাহার ঝুমুর ফুটবল এবং শিল্পী খাতুন হাঁস প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সদর উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৭ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে তিনজন প্রার্থীর সবাই আওয়ামী ঘরানার। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা এই প্রার্থীদের মাঝেই ছোট বড় ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছেন। ফলে প্রার্থীদের কেউ কেউ নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে তৃণমূলের বিএনপি নেতাদের হাত করেছেন। গোপন সর্ম্পকের মাধ্যমে তারা ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের বিএনপি নেতাকর্মীদের ভোটের মাঠে সক্রিয় করেছেন। এই নেতাকর্মীরা এলাকাভিত্তিক বিএনপি নেতাকর্মীদের নিরবে সক্রিয় করছে ভোট প্রদানের জন্য। এক্ষেত্রে মোটা টাকার আর্থিক লেনদেনেরও অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে, বিএনপি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, জাতীয়ভাবে বিএনপি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এজন্য দেশজুড়ে নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচিও পালিত হয়েছে। যশোরে গত ১৮ মে নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়ে লিফলেট বিতরণ করেন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। বিএনপি’র এই আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রথম দিকের নির্বাচনে বিএনপির নেতাকর্মীদের তেমন সংশ্লিষ্টতা দেখা যায়নি। এ কারণে প্রথম ধাপে মণিরামপুর উপজেলায় ৩১ শতাংশ এবং কেশবপুরে ২৮ শতাংশ ভোট পড়ে। দ্বিতীয় ধাপে শার্শায় ১৮, ঝিকরগাছায় ২৪ ও চৌগাছায় ৩১ শতাংশ ভোটগ্রহণ হয়। কিন্তু এরপর তৃতীয়ধাপে বাঘারপাড়া ও অভয়নগরে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংশ্লিষ্টতা বেড়ে যাওয়ায় প্রায় ৫০ শতাংশ পড়ে। বিষয়টি বিএনপি’রও দৃষ্টিগোচর হয়। এজন্য নির্বাচনে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে অভয়নগরের বেশ কিছু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে বিএনপি সাংগঠনিক ব্যবস্থাও গ্রহণ করে। কিন্তু তারপরও যশোর সদর উপজেলা নির্বাচনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মাঠে নেমে পড়েছেন বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
যশোর সদরের চুড়ামনকাটি ইউনিয়নে বেশকিছু নেতাকর্মীকে সাথে নিয়ে নির্বাচনী মাঠে নামার অভিযোগ রয়েছে ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাস্টার মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি দাবি করেছেন, দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে তিনি নির্বাচনী মাঠে নামেননি। আর কোনো নেতাকর্মী নেমেছে কিনা তাও জানা নেই।
হৈবতপুর ইউনিয়নে বিএনপি সমর্থিত ইউপি মেম্বর শামসুল আলমও নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় বলে অভিযোগ উঠেছে। যদিও তিনিও অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তারা ভোটের মাঠে যাচ্ছেন না। নির্বাচনে সক্রিয় থাকার অভিযোগ রয়েছে চাঁচড়া ইউনিয়নের আজিম মোড়ল ও জাহাঙ্গীর হোসেনের বিরুদ্ধে।
বিএনপি সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, যশোর সদর উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটিতেই পাঁচ থেকে ২০ জন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের শীর্ষ বিএনপি নেতাকর্মী নির্বাচনের মাঠে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সক্রিয় রয়েছেন। বিএনপি তাদের ব্যাপারে কড়া নজরদারি করছে। দলীয় নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক পদক্ষেপ গ্রহণেরও প্রক্রিয়া চলছে।
যশোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, যশোরের সাত উপজেলার নির্বাচনে বিএনপির ভোট বর্জনের ডাক সফল হয়েছে। সাধারণ মানুষ ভোট দিতে যায়নি। এ কারণে ভোটের হার অনেক কম। তারপরও যা দেখানো হয়েছে, তাতে ইভিএম’র কারসাজি রয়েছে। সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও বিএনপি নেতাকর্মীরা ভোট দিতে যাবে না।
তবে সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু জানান, ইতোপূর্বে যারা নির্বাচনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভূমিকা রেখেছে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। যশোর সদরেও যারা নির্বাচনের মাঠে নেমেছেন বলে রিপোর্ট রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত হচ্ছে। তদন্তের মাধ্যমে নির্বাচনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।