স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ
যশোর বড় বাজারে নিত্যপণ্যের দাম মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন সম্পূর্ণ ব্যর্থ বা অমনোযোগী থাকায় নিত্যপণ্য বিক্রেতারা মনগড়া দাম হাঁকিয়ে চলেছেন। এ ক্ষেত্রে স্বল্প আয়ের মানুষ ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। বিশেষ করে সবজির বাজারে দু’ একটি ছাড়া কোনটিরই দাম সাধারণের নাগালে নেই। এতে করে সীমিত আয়ের মানুষের কাছে সবজিও হয়ে উঠেছে অনেকটা বিলাসী পণ্যের মত। এর ফলে সংসার চালাতে রীতিমত হিমশিম খাচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষ।
এদিকে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে সারাদেশে নিষিদ্ধ হয়েছে ইলিশ মাছ ধরা, বিক্রি ও মজুদ। যদি সার দেশের ন্যায় যশোরের বাজারেও ইলিশ মাছ মজুদ ছিল প্রচুর। বলা হয়েছে নিষিদ্ধকালীন সময়ে আইন অমান্যকারীদের কমপক্ষে ১ বছর থেকে ২ বছর সশ্রম কারাদণ্ড অথবা পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। আইনী এ প্রচার পত্র বিতরণ করেছে যশোর মৎস্য অধিদপ্তর।
এদিকে চলতি মৌসুমে ইলিশ মাছ বেঁচাকেনার শেষ দিনে শুক্রবার যশোরের মাছ বাজারে ক্রেতা সমাগম ছিল বেশি। এদিন শহরের বড় বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ইলিশ মাছ ৪৫০ টাকা থেকে ২৮শ’ টাকা পর্যন্ত কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতা সমাগম বেশি থাকলেও ইলিশ মাছের বাড়তি দামের কারণে অনেক ক্রেতা মাছ না কিনে ফিরে গেছেন। আবার শেষ মুহূর্তে আশানুরূপ মাছ বিক্রি করতে না পারায় ব্যবসায়ীরা লসের শংকা করছেন।
বড় বাজারের ইলিশ মাছ ব্যবসায়ী বজলুর রহমান বলেন, এ বছরের মধ্যে চলতি সপ্তাহ ধরে মাছের দাম একটু বেশি যাচ্ছে। শনিবার রাত ১২ টার পর থেকে ইলিশ মাছ বিক্রি বন্ধ। এ মৌসুমে আর মাছ আসবে না। মাছের দাম যখন ভালো যাচ্ছিলো তখনি মাছ ধরা বন্ধ হয়ে গেল। এক কেজি দুই তিন শত গ্রামের ইলিশ মাছ ২৮শ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। লোকজন টুকটাক মাছ যা কিনতে আসছে খারাপ না। শেষ সময়ে এসে বেঁচা কেনা একটু ভালো হচ্ছে।
টুটুল বিশ^াস নামে অন্য এক ব্যবসায়ী বলেন, আমরা ছোট সাইজের ইলিশ মাছ বিক্রি করি। বরিশাল থেকে এই মাছ যশোরের আড়তে আসে। আমরা সকালে সেখান থেকে কিনে বিক্রি করি। যেমন দামে কিনতে পারি তেমন দামে বিক্রি করি। চার থেকে পাঁচ পিসে কেজি ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৪ শ থেকে সাড়ে ৫শ টাকা পর্যন্ত। দুই থেকে ৩ পিসে কেজি ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১২শ টাকা কেজি। প্রতিদিন গড়ে ৮০ থেকে ১২০ কেজি মাছ বিক্রি করেন তিনি।
বাজারে ইলিশ মাছ কিনতে আসা ঝুমঝুমপুর এলাকার রাবেয়া খাতুন নামে এক মহিলা বলেন, বাজারে ইলিশ মাছের দাম অনেক বেশি। তারপরও বছরে দুই একদিন বাচ্চাদের মুখে ইলিশ তুলে দিতে না পারলে নিজের কাছে খারাপ লাগে। বাজারে ইলিশ মাছের দাম কমানোর দাবি করেন তিনি।
এছাড়া বাজারে ডিমের দামও চড়া। সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে ডিম। প্রতিহালি ব্রয়লার মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৬০ টাকা। মাছ, মাংসের বিকল্প হিসেবে খাদ্য তালিকায় একবেলা ডিম রাখা এখন বিলাসিতার অংশ।
বড় বাজারের ডিম ব্যবসায়ী আকুজ্জামান বলেন, পাইকারি বাজারে ডিমের দাম বেশি। আমরা খুচরায় সীমিত লাভে ডিম বিক্রি করছি। তারপরও ডিমের সরবরাহ কম। পাইকারি বিক্রেতারা ও বড় বড় ব্যবসায়ীরা বলছেন ডিমের ঘাটতি। এখন যে দামে ক্রয় করছি তার সাথে মজুরি, পরিবহন খরচ ধরে বিক্রি করছি।
শেখহাটি বাবলাতলা এলাকা থেকে ডিম কিনতে আসা সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, আমাদের দেশ এখন মগের মুল্লুক হয়ে গেছে। বড় বড় ব্যবসায়ীরা সিণ্ডিকেট করে ডিমের দাম বাড়াচ্ছে। প্রশাসনের উচিৎ তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির ব্যবস্থা করা। এভাবে চলতে পারে না।
এদিকে কাঁচা বাজারের প্রত্যেকটা সবজির দাম বেড়েছে। বিক্রেতারা বলছেন মোকামে সবজির জোগান কম। বাজারে সবজির চাহিদার তুলনায় তারা সরবরাহ করতে পারছেন না। সবজির সরবরাহ কম থাকাতে মূলত দাম বাড়তি।
এদিন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া প্রতিকেজি আলু ৫৫ টাকা, পেঁয়াজ ১১৫ থেকে ১২০ টাকা, রসুন ২২০ থেকে ২৪০ টাকা, কলা ৭০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, পুঁইশাক ৪০ টাকা, বেগুন ১৮০ টাকা, মেচুড়ি ১২০ টাকা, পটল ৭০ টাকা, ঢেঁড়শ ৮০ টাকা, কচুরমুখি ৮০ টাকা, শশা ৮০ টাকা, লাউ (পিস) ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ওল ৯০ টাকা, টমেটো ১৮০ টাকা, শিম ৩০০ টাকা, মূলা ১০০ টাকা, লালশাক ৬০ টাকা, পালং শাক ১০০ টাকা, গাজর ১৮০ টাকা, বরবটি ১৬০ টাকা, ধনে পাতা ১০০ টাকা কেজি।
এদিকে মুরগির বাজারে জাত ভেদে মুরগি ২৪০ থেকে ৩৬০ টাকা, গরুর মাংস ৭০০ টাকা, খাসির মাংস ১ হাজার থেকে ১১শ টাকা।
বড় বাজারের কাঁচা মাল ব্যবসায়ী সুকুমার কুমার সাহা বলেন, প্রতিদিন কাঁচা বাজারে তরকারির দাম বাড়ছে। এমনও অবস্থা সকালে দাম কম থাকলেও বিকেলে বেড়ে যাচ্ছে। মোকামে কাঁচামাল পাওয়া যাচ্ছে না। যা পাওয়া যাচ্ছে তা আমাদের বেশি দামে পাইকারি কিনতে হচ্ছে। পাইকারি বেশি দামে কেনার কারণে খুচরা বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। ক্রেতাদের সাথে দাম দর নিয়ে মনোমালিন্য হওয়ার পর্যায় চলে গেছে। দাম বেশি হওয়ার কারণে বিক্রি কমে গেছে।
কাঁচাবাজার করতে আসা বেজপাড়া এলাকার শুভংকর নন্দী নামে বেসরকারি এক চাকরিজীবী বলেন, কাঁচা বাজারে হাজার টাকা নিয়ে ঢুকলে টাকা শেষ হয়ে যাচ্ছে তা প্যাকেট ভরছে না। দিন দিন কাঁচা বাজার ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে।
পরিবারের মানুষের মুখে দুবেলা দুমুঠো ভাত তুলে দেয়া কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বাজারে সব জিনিসের দাম বাড়তি। আমরা বেসরকারি চাকরি করি আমাদের বেতন বাড়ছে না। যারা সরকারি চাকুরি করে তারা না হয় রেশন তুলে খেতে পারে। আমাদের তো সে পরিবেশও নেই। পানি থেকে শুরু করে সব বেতনের টাকায় কিনে খেতে হয়। দিন পার করা কষ্টকর হয়ে গেছে।
এখন নাকি বাজারে সিণ্ডিকেট নেই। তাহলে জিনিসের দাম এত বাড়তি কেন। নিয়মিত বাজার মনিটরিং করার জোর দাবি জানান তিনি।