স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ
বাংলাদেশে পুকুর, ডোবা, খাল, বিল তথা জলাধার ভরাট নিয়ন্ত্রণ ও সংরক্ষণের জন্য প্রধানত জলাধার সংরক্ষণ আইন ২০০০ ব্যবহৃত হয়। যা দেশের সকল প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম জলাধার সংরক্ষণ নিশ্চিত করার জন্য প্রণীত হয়েছে। মহানগর, বিভাগীয় শহর ও জেলা শহরের পৌর এলাকাসহ দেশের সব পৌর এলাকার পুকুর, ডোবা, নদী, খাল, বিল এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক বা ব্যক্তিমালিকানাধীন জলাধার এই আইনের আওতাভুক্ত। হাইকোর্ট এক রায়ে পৌর এলাকার ব্যক্তিমালিকানাধীন হিসেবে রেকর্ড করা পুকুরগুলোকেও ‘প্রাকৃতিক জলাধার’-এর সংজ্ঞাভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। যার ফলে ইচ্ছে করলেই এই ধরনের পুকুর ভরাট করা যায় না। জলাধার সংরক্ষণ আইন ২০০০-এর ধারা ৫ অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি যদি কোনো জলাধার ভরাট করে অথবা ভরাট করার উদ্যোগ নেয়, তাহলে তার জন্য শাস্তির বিধান রয়েছে। অপরাধ বা শাস্তি (ধারা ৫) জলাধার ভরাট বা ভরাট করার উদ্যোগ ৫ বছরের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে।

আইনের এমন কড়াকড়ি থাকার পরও অদৃশ্যশক্তি বলে যশোর সফটওয়ার পার্কের পাশে থাকা প্রাচীন একটি পুকুর ভরাটের কাজ করছে সফটওয়ার টেকনোলজি পার্ক যশোর নামে এক কোম্পানি। প্রশাসন ও প্রচলিত আইনের বিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দিনের পর দিন ট্রাকে করে মাটি বালি ফেলে পুকুর ভরাটের কাজ করছেন তারা। কখনও বা রাতের আঁধারে ট্রাক ভর্তি বালি, মাটি ফেলছেন কখনও বা দিনের আলোতে।

তাদের এই পুকুর ভরাটের বিষয়ে পরিবেশ আন্দোলনের বিভিন্ন নেতাকর্মী ও সংগঠন সোচ্চার থাকলেও প্রশাসনের দৃষ্টি যেন অন্ধ। এ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করছেন পরিবেশবাদিরা। এদিকে জেলার সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারকরা বলছেন জাতীয় স্বার্থের কারণে পুকুরটি ভরাট করা হচ্ছে।

এ বিষয় নিয়ে কথা হয় পরিবেশ আন্দোলনের নেতা জিল্লুর রহমান ভিটুর সাথে। তিনি জানান, যশোর হাইটেক পার্কের পাশে একটা পুকুর সরকারি টেণ্ডারে ভরাট হচ্ছে। আমরা পরিবেশ অধিদপ্তরে স্মারকলিপি দিয়েছি। তারা বলেছেন তাদের হাত পা বাঁধা। দিনদিন যশোর শহর মরুভূমি হয়ে যাচ্ছে। আগুন লাগলে পানি দেয়ার মত অবস্থা থাকছে না। যে পুকুরটি ভরাট করা হচ্ছে জমির শ্রেণিতে ওটা নাকি ভাগাড় ছিলো। কিন্তু যেখানে ৮০ থেকে ৯০ বছর আগেও পুকুর ছিল। হঠাৎ কি ভাবে জমির শ্রেণি পরিবর্তন হলো সেটাও আমাদের বুঝে আসে না। দৃশ্যমান পুকুর ভরাট করে পৌরসভা সরকারি ভবন অনুমোদন দেবে কি করে?

তিনি আরও বলেন, যশোর পৌরসভা সাধারণ নাগরিকদের বাড়ির প্লান দিচ্ছে না। বিভিন্ন অজুহাতে আইনের দোহায় দিচ্ছে। অথচ দৃশ্যমান একটা পুকুর ভরাট করে সেখানে সরকারি ভভন তৈরি করছে। এক নগরে দুই নিয়ম কি ভাবে চলে? আমরা এর প্রতিকার চাই।

যশোর পৌরসভার পৌরপ্রশাসক রফিকুল হাসান বলেন, এ বিষয়ে জানার জন্য কয়েকজন সাংবাদিক আমার কাছে এসেছিলেন। আমি তো কালেক্টরেট না। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক বলতে পারবেন।

পরিবেশ অধিদপ্তর যশোরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ আতাউর রহমান বলেন, আমি যশোরে নতুন দায়িত্ব পেয়েছি। বিষয়টি সম্পর্কে আবগত না।

সফটওয়ার টেকনোলজি পার্ক যশোরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম বলেন, ওখানে ভাগাড় ছিলো। ভাগাড় মানে শহরের ময়লা আবর্জনা ফেলা হত। সরকার যদি প্রয়োজন মনে করেন, জাতীয় স্বার্থ থাকে তাহলে বিল্ডিং বানাবেন। জায়গাটি হাইটেক পার্কের। তারা জাতীয় ডাটা সেন্টার তৈরি করবে। জাতীয় ডাটা সেন্টার হবে এটা তো যশোরের জন্য ভালো।

বক্তব্য কোট করতে চাইলে জেলা প্রশাসক বলেন, আমি বিষয়টা একটু খোঁজ খবর নিয়ে দেখি ।

Share.
Leave A Reply Cancel Reply
Home
News
Notification
Search
Exit mobile version