সাতক্ষীরা সংবাদদাতা
সাতক্ষীরায় শীতের তীব্রতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তার সাথে হিমেল ঠাণ্ডা বাতাস বয়ে যাওয়াতে তীব্রতর হচ্ছে শীতের প্রকোপ। জ্বর, সর্দি, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। একই সাথে বৃদ্ধরাও রয়েছেন নানা সমস্যাতে। কনকনে শীতে বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। শীতে একদম জবুথবু অবস্থা। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না কেউ।
সাতক্ষীরার শিশু হাসপাতালসহ রোগীর চাপ বেড়েছে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সদর হাসপাতাল ও শহরের প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে সাথে যুক্ত হয়েছে শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগীদের ভিড়। সবেচেয়ে বেশি অসুস্থ হয়ে ভর্তি হচ্ছে শিশু ও বয়স্ক মানুষ। সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ জনের বেশি চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এছাড়াও সদর হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। ঠাণ্ডা জনিত রোগ থেকে শিশুদের রক্ষা করতে চিকিৎসকরা অভিভাবকদের সচেতন হওয়ার আহবান জানিয়েছেন।
সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতাল, সদর হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিক ঘুরে চোখে পড়ে শীতের প্রকোপের সাথে সাথেই বেশির ভাগ শিশুরা সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শীতজনিত রোগে বাদ পড়ছে না বয়স্ক মানুষেরাও। গত এক সপ্তাহে বিভিন্ন হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে শুধুমাত্র শীতজনিত রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন ৬ হাজারেরও বেশি। হঠাৎ করে শীত বেড়ে যাওয়ায় নবজাতক ও শিশুদের মধ্যে নানা ধরনের রোগ দেখা দিয়েছে। আগের চেয়ে আউটডোরে রোগীর চাপ বাড়ছে। এদের মধ্যে অধিকাংশ রোগী শিশু। অনেক শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হচ্ছে।
সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতালে ৩০ বেডের বিপরীতে বর্তমানে শিশু ভর্তি রয়েছে ৪৫ জন। ফলে ওয়ার্ডের অতিরিক্ত বেডের ব্যবস্থা করে শিশু রোগীদের চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে ১৪টি বেডের বিপরীতে ভর্তি আছে ৩৫জন রোগী যেটি বিগত ৭দিন আগে ছিল ৭০জন শিশু। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ৫ টি বেডের বিপরীতে রোগী ভর্তি আছে ২৪ জন। এদিকে বেডের তুলনায় রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় এই প্রচণ্ড শীতে মেঝেতে থাকতে হচ্ছে।
বহির্বিভাগের সামনে এক শিশুকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন আমেনা খাতুন নামে এক নারী। তিনি বলেন, বাচ্চাটা কয়েকদিন ধরে পাতলা পায়খানা হচ্ছে যার জন্য হাসপাতালে নিয়ে এসেছি।
আশাশুনি থেকে সামছুর নাহার নামের ছয় মাস বয়সী মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন তিনি। মেয়েকে নিউমোনিয়া নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। তিনি বলেন, প্রথমে জ্বর হলে আমাদের ওখানকার গ্রাম্য ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই। অবস্থা খারাপ হলে ডাক্তার সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতালে ভর্তি করতে বলেন।
পাটকেলঘাটা থেকে ১ বছর বয়সী ফাতিনকে নিয়ে এসেছেন তার মা তজমিন সুলতানা। তিনি বলেন, সাত-আটদিন ধরে ঠাণ্ডা, কাশি কিছুতেই কমছে না। এজন্য এই হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে কাটিয়া থেকে আসা বৈশাখী নামের এক মহিলা তার ৭ দিনের শিশুকে নিয়ে শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা নিয়ে ভর্তি হয়।
সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের ইনচার্জ মেরিনা সুলতানা বলেন, ঠাণ্ডা পড়ার কারণে আমাদের এখানে রোগীর চাপ প্রচণ্ড বেশি। আমাদের এখানে ১৪টি বেডের বরাদ্দ আছে কিন্তু শিশু ভর্তি আছে ৩৫ জনেও বেশি। অধিকাংশ বাচ্চাদের সর্দি-কাশি জ্বর এবং শ্বাসকষ্ট।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ডায়রিয়া ওয়ার্ডের ইনচার্জ শান্তনা মন্ডল বলেন, এই কয়েক দিনের শীতের কারণে শিশু ডায়রিয়া রোগী বাড়ছে। আমাদের এখানে ৫টা বেড বরাদ্দ আছে কিন্তু রোগী ভর্তি আছে ২৪ থেকে ৩০ জন। যার কারণে সব কিছু সামাল দিতে একটু ভোগান্তির সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতাল ইনচার্জ ডা. আবুল বাশার আরমান বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তন বড়রা যেমন সহজে মানিয়ে নিতে পারে, শিশুরা তেমনটা পারে না। এই শীতে বাচ্চাদের সাধারণত জ্বর, সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া এই ধরনের রোগগুলো বেশি হয়। বিশেষ করে রোটা ভাইরাসের কারণে যে ডায়রিয়াটা হয় এই ধরনের রোগী আমরা বেশি পাচ্ছি। সাতক্ষীরা শিশু হাসপাতালের বহির্বিভাগে আমরা প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে ১৫০ জন রোগীর চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি এবং যাদের অবস্থা বেশি খারাপ তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দিচ্ছি।
তিনি অভিভাবকদের পরামর্শ দিয়ে বলেন, এই ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় বাচ্চাদের ঘর থেকে বের না করায় ভালো এবং পর্যাপ্ত শীতের পোশাক পরিয়ে রাখবে। বাচ্চাদেরকে বিশুদ্ধ পরিস্কার পানি খাওয়াবে এবং বাজারের খাবার, বাসি, খোলা, পচা খাবার না খাওয়ার জন্য পরামর্শ থাকবে।
সদর হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. মীর মাহফুজ আলম বলেন, প্রচণ্ড শীতের কারণে সর্দি, কাশি, জ্বর নিয়ে বেশি রোগী আসছে। সাথে রোটা ভাইরাসের কারণে ডায়রিয়া রোগী প্রচুর পাওয়া যাচ্ছে। রোগীর সংখ্যা অন্য সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। আমরা সেবা দেয়ার জন্য প্রস্তুত আছি। পরামর্শ হিসেবে বলেন, শীতজনিত রোগ থেকে রক্ষা করতে শিশুর বিশেষ যত্নের প্রয়োজন। শিশুর প্রতি মায়েদের খেয়াল রাখতে হবে। গায়ে গরম কাপড় ছাড়াও হাত পায়ে মোজা পরাতে হবে। শীতজনিত রোগের বেশিরভাগই স্বল্পমেয়াদী ও সহজ চিকিৎসায় সেরে যায়। বিধায় বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক কিংবা অন্য যে কোনো ওষুধ সেবন না করার আহবান জানিয়েছেন তারা।
সিভিল সার্জন ডা. আব্দুস সালাম বলেন, গত কয়েকদিন ধরে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা পড়েছে। এই ঠাণ্ডার কারণে সর্দি, কাশি, জ্বর, শিশু ডায়রিয়া বেড়েই চলেছে। আমারা ঠাণ্ডার কথা মাথায় রেখে বাচ্চাদের জন্য বিশেষভাবে সতর্ক আছি। আমাদের এখানে এখনো পর্যন্ত ঠান্ডা জনিত কারণে কোন শিশুর মৃত্যু ঘটেনি। সাতক্ষীরা সদর ও মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ আছে।