ইব্রাহীম সানা, পাইকগাছা
৬ কিলোমিটারের একটি সড়ক বদলে দিয়েছে খুলনার পাইকগাছা উপজেলার অবহেলিত লতা ইউনিয়নের যোগাযোগ ব্যবস্থা। সড়কের নির্মাণ কাজ বছরের পর বছর ফেলে রাখায় চরম ভোগান্তিতে ছিল অত্র এলাকার হাজার হাজার মানুষ। অবশেষে পূর্বের টেণ্ডার বাতিল করে নতুন করে ঠিকাদার নিয়োগের মাধ্যমে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করায় ইউনিয়নের সাথে উপজেলা সদরের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপন হয়েছে। এর ফলে যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ হওয়ার পাশাপাশি ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটার পাশাপাশি এলাকার মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নে নবনির্মিত সড়কটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দপ্তর সহ এলাকাবাসী।
উল্লেখ্য, উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের অবহেলিত ইউনিয়নের মধ্যে লতা অন্যতম। অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে কৃষি ও মৎস্য শিল্পের অপার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও উন্নয়নে পিছিয়ে রয়েছে অত্র ইউনিয়নটি। ইউনিয়নের বেশিরভাগ রাস্তা-ঘাটের এখনো তেমন কোন উন্নয়ন ঘটেনি। উপজেলা ও জেলা সদরে যাতায়াতের জন্য দুটি প্রধান সড়ক ইউনিয়নের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করেছে। যার একটি হচ্ছে কপিলমুনি বাজার থেকে শামুকপোতা-কাঠামারী বাজার সড়ক। আরেকটি হচ্ছে উপজেলা সদরের সরল কালিবাড়ী থেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও হাড়িয়া ব্রিজ হয়ে লতার হাট সড়ক। গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি দুটি কারণে সরাসরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। যার একটি হচ্ছে হাড়িয়া নদীর ওপর ব্রিজ না থাকা এবং সড়কের নির্মাণ কাজ বছরের পর বছর ফেলে রাখা। ইতোমধ্যে হাড়িয়া খেঁয়াঘাট সংলগ্ন নদীর ওপর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দপ্তর থেকে একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। ব্রিজটি চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দিলেও সড়কের নির্মাণ কাজ ফেলে রাখায় ব্রিজ নির্মাণের সুফল থেকে বঞ্চিত ছিল এলাকাবাসী। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কটির নাম দেওয়া হয়েছে পাইকগাছা জিসি/লতার হাট/দেলুটির ফুলবাড়ী হাট/বারোহাড়িয়া জিসি রোড। সড়কটি দুটি ভাগে দুটি প্রকল্পের মাধ্যমে কার্পেটিং করা হয়েছে। উপজেলা সদরের সরল কালিবাড়ী থেকে পৌরসভার ৫-৬নং ওয়ার্ডের সাংবাদিক মরহুম গাজী আব্দুস সালামের বাড়ি পর্যন্ত ১.০২৮ কিলোমিটার সড়ক জিওবি রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্পের আওতায় ১২ ফুট প্রস্থের কার্পেটিং করা হয়েছে। সাংবাদিক সালামের বাড়ি থেকে লতার হাট খেঁয়াঘাট পর্যন্ত ৫.২ কিলোমিটার সড়ক ২০১৮ সালে কেডি আরআইজিপি প্রকল্পের আওতায় টেন্ডার দেওয়া হয়। কিন্তু পরিতাপের বিষয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ডলি কনস্ট্রাকশন সড়কটি যত্রতত্র খুড়ে রেখে অর্থ সংকট সহ নানা অজুহাত দেখিয়ে বছরের পর বছর ফেলে রাখে। ফলে সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন এলাকার মানুষ। শেষমেষ পূর্বের টেন্ডার বাতিল করে নতুন ঠিকাদার নিয়োগের মাধ্যমে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দপ্তর। নির্মাণ কাজ করেছেন ঠিকাদার আব্দুল হাকিম। নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ায় নবনির্মিত এ সড়কটি বদলে দিয়েছে অবহেলিত লতা ইউনিয়নের যোগাযোগ ব্যবস্থা।
এখন লতা ইউনিয়ন সহ পাশ^বর্তী এলাকার হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন সড়ক দিয়ে সরাসরি উপজেলা সদরে যাতায়াত করছে। এলাকার ছেলে-মেয়েদের স্কুল কলেজে যাতায়াত সহজ হয়েছে। এলাকার উৎপাদিত মৎস্য দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিবহন ও বাজার জাত করতে পারছেন এলাকার মৎস্য চাষী ও ব্যবসায়ীরা। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে এলাকার মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটবে বলে আশা করছেন সকলেই। স্কুল শিক্ষার্থী রিয়া ঢালী জানায়, ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় আমাদের লেখাপড়া ব্যাহত হতো। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় এখন থেকে এলাকায় শিক্ষার প্রসার ঘটবে। মোটরসাইকেল চালক শরিফুল ইসলাম জানান, মোটরসাইকেল চালানোর ওপর আমার মতো অনেকের জীবন জীবিকা নির্বাহ করে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় আমাদের অনেক ভোগান্তি হতো। এখন আমাদের জীবন মানের উন্নয়ন ঘটবে বলে আশা করছি। লতার হাটের চা বিক্রেতা গোপাল ঢালী জানান, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে আমার চায়ের দোকানের আয় আগের থেকে অনেক বেড়েছে। পরিবার পরিজন নিয়ে ভালোই আছি। সড়কটি নির্মাণ করার ফলে এলাকায় ব্যবসা বাণিজ্য বাড়ছে বলে জানান, লতা বাজারের ব্যবসায়ী বনানী ঢালী বন্যা। এ সড়কের মাধ্যমে এলাকার উন্নয়নে পরিবর্তন এসেছে বলে জানান লতার বিনয় কৃষ্ণ মন্ডল।
সরেজমিনে অবস্থান করে নির্মাণ কাজ তদারকি করা হয়েছে বলে জানান উপ-সহকারী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল-মামুন ও জাহাঙ্গীর আলম। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দপ্তরের উপজেলা প্রকৌশলী শাফিন শোয়েব জানান, সড়কের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করতে আমাদের অনেক ভোগান্তি হয়েছে। কারণ সড়কটি প্রথম টেন্ডার দেয়া হলে ডলি কনস্ট্রাকশন কাজ করতে ব্যর্থ হওয়ায় নির্মাণ কাজ ব্যাহত হয়। পরবর্তীতে পুনরায় টেন্ডার দিয়ে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এর ফলে সুবিধা বঞ্চিত লতা ও দেলুটী ইউনিয়নের সাথে যোগাযোগ স্থাপন হয়েছে। আশা করছি চলাচলের ক্ষেত্রে যেমন ব্যাপক পরিবর্তন আসবে, তেমনি এলাকার মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন ঘটবে। এদিকে সড়কটি সংরক্ষণে সড়কের দু’পাশে গাছের চারা রোপণের আহ্বান জানিয়েছেন এলাকার পরিবেশ কর্মীরা।