♦ জড়িত শাস্তির দাবি সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের
বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের উপর হামলা চালিয়েছে একাধিক মামলার আসামি জেলা বাস মালিক সমিতির নেতা সারোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা। রোববার দুপুরে শহরের নিউ মার্কেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। হামলায় দৈনিক কল্যাণের নিজস্ব প্রতিবেদক এম এ রাজাসহ কয়েকজন সাংবাদিক আহত হন। এ সময় যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এইচ আর তুহিন, দৈনিক কল্যাণের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এহসান উদ দ্দৌলা মিথুন, বণিক বার্তার আব্দুল কাদের, ফটোসাংবাদিক জয়ন্ত বসুসহ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করেন হামলাকারীরা। এ ঘটনায় হামলার মূলহোতা সারোয়ার হোসেনসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ ।
হামলার শিকার সাংবাদিক এমএ রাজা বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে যে হারে ভাড়া বাড়ানো হয়, কিন্তু কমলে সেভাবে বাস ভাড়া কমানো হয় না। এ বিষয়ে অফিসের নির্দেশনা অনুযায়ী একটি প্রতিবেদন তৈরির জন্য তথ্য সংগ্রহ করতে রোববার দুপুরে শহরের নিউমার্কেট এলাকায় যশোর টু মাগুরা লোকাল বাস কাউন্টারে যাই। সেখানে কাউন্টারে বসে থাকা একজনকে বাসের ভাড়া সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি আমার পরিচয় জানতে চান। এ সময় আমি সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার সাথে সাথে জেলা বাস মালিক সমিতির নেতা সারোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে কয়েকজন সন্ত্রাসী আচমকা আমার উপর হামলা চালায় এবং মারধর শুরু করে। পরে আমাকে তাদের অফিসে নিয়ে আটকে রাখে। তিনি আরও জানান, পরবর্তীতে আমি অন্য সহকর্মীদের মোবাইলে কল দিয়ে আসতে বললে তারা আমার উপর আরও চড়াও হয় এবং কয়েকজন আমাকে এলোপাতাড়ি চড়, লাথি, ঘুষি মারতে থাকলে একপর্যায়ে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি।
এদিকে, হামলার খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যান যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এইচআর তুহিন, দৈনিক কল্যাণের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এহসান উদ দৌলা মিথুন ও ফটো সাংবাদিক জয়ন্ত বসু। অন্য সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে ফের হামলা চালায় উচ্ছৃঙ্খল সন্ত্রাসীরা। যার নেতৃত্ব দেয় সারোয়ার।
এ বিষয়ে যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এইচ আর তুহিন বলেন, দৈনিক কল্যাণের সাংবাদিক এমএ রাজার উপর সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে আটকে রেখেছে- এমন সংবাদ শুনে আমরা কয়েকজন সাংবাদিক ঘটনাস্থলে যাই। ওখানে যেয়ে কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই সন্ত্রাসীরা আমাদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় আমাদের সাথে থাকা একজন ফটো সাংবাদিককে তারা মারধর করে এবং মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। পরে আমাদের অন্য সহকর্মীরা ঘটনাস্থলে আসলে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে।
তিনি আরও বলেন, হামলার নেতৃত্ব দেয়া বাস মালিক সমিতির নেতা যশোরের এক সময়কার চিহ্নিত সন্ত্রাসী। কোন কারণ ছাড়ায় তার নেতৃত্বে সাংবাদিকদের উপর হামলা চালানো হয়েছে। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জনাই ।
দৈনিক কল্যাণের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক এহসান উদ দৌলা মিথুন বলেন, আমাদের পত্রিকার সাংবাদিক অফিসের নির্দেশনা অনুযায়ী সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে বাসের শ্রমিকরা তার উপর হামলা চালায়। পরে আমরা ঘটনাস্থলে গেলে আমাদের উপরও হামলা চালানো হয়। আমারা ইতিমধ্যে প্রশাসনের কাছে এ বিষয়ে অভিযোগ দিয়েছি। হামলার নেতৃত্ব দেয়া সারোয়ার হোসেনকে পুলিশ আটক করেছে। আশা করছি দ্রুতই পুলিশ প্রশাসন অন্যদের আইনের আওতায় নিয়ে আসবে।
সাংবাদিকদের উপর হামলার বিষয়ে পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার বলেন, সাংবাদিকদের উপর যারা হামলা চালিয়েছে তাদের সকলকে আইনের আওতায় আনা হবে। ইতিমধ্যে তিনজনকে আটক করা হয়েছে।
এ ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান, যশোর সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি ও বীরমুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ সম্পাদক একরাম উদ দ্দৌলা, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মনোতোষ বসু, সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের সভাপতি আকরামুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক এসএম ফরহাদ, বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন জেলা শাখার সভাপতি গোপীনাথ দাস ও সাধারণ সম্পাদক এমআর খান মিলন।
অন্যদিকে, যশোরের খাজুরা বাসস্ট্যান্ড ও বাঘারপাড়ায় সংগঠিত দুটি ঘটনায় সাংবাদিক লাঞ্ছিত হওয়ায় উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়ে বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ যশোর জেলা কমিটির সম্পাদক তসলিম-উর-রহমান এক বিবৃতি দিয়েছেন।
বিবৃতিতে তিনি, খাজুরা বাসস্ট্যান্ডে সংবাদ সংগ্রহের সময় শ্রমিকরা সাংবাদিককে আটকে রাখার সংবাদে যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক এইচ আর তুহিন, দৈনিক কল্যাণের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মিথুনসহ অন্যান্যরা সাংবাদিককে ছাড়াতে গেলে মোটর শ্রমিকরা তাদেরকেও লাঞ্ছিত করে। আর বাঘারপাড়ায় ভিজিএফ’র চাল বিতরণের অনিয়মের অভিযোগে মানববন্ধন চলাকালে দায়িত্বরত ৭১ টিভির সাংবাদিক এসএম ফরহাদ ও নিউজ ২৪ এর সাংবাদিক হিমেল খানের সাথে একদল সন্ত্রাসী অসৌজন্যমূলক আচরণ করার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং দোষীদের আটক ও বিচারের দাবি জানান।