বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরসহ সারা দেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউব বন্ধ থাকায় ব্যবহারকারীদের মধ্যে অস্বস্তি দেখা দিয়েছে। তবে স্বস্তিতে রয়েছেন অভিভাবকরা। জেলার ৮টি উপজেলার সর্বত্র বাবা-মায়েরা খুশি, পাশাপাশি ছেলেমেয়েরা অখুশি।
বর্তমান প্রজন্মের ৯৫ ভাগ শিক্ষার্থীসহ তরুণ-তরুণীরা ফেসবুক, টিকটক ও ইউটিউব ব্যবহার করে রাত-দিনের অধিকাংশ সময় পার করত। এখন তথ্যপ্রযুক্তির এসব খাত বন্ধ থাকায় লাখ লাখ তরুণ-তরুণী ও শিক্ষার্থী অলস সময় কাটাচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেকে ক্ষোভ ও হতাশা ব্যক্ত করেছে। আবার এসব চালু না থাকায় বাবা-মায়েরা বেশ খুশি। তাদের সন্তানদের কাছে পাওয়াসহ নানা সৃজনশীল কাজে সময় কাটাচ্ছে বলে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
সংবাদকর্মী রাইসুল ইসলাম জানান, তার একমাত্র সন্তান সারা দিন ফেসবুক আর ইউটিউব নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। এখন এসব বন্ধ থাকায় বাসায় সময় পার করছেন। মাঝেমধ্যে বাইরে খেলাধুলা করছেন। তাই বাবা হিসেবে তিনি খুব খুশি।
শহরের এমএম আলী রোড় সড়কের বাসিন্দা শফিকুল ইসলাম জানান, তার দুই ছেলে অসময়ে ফেসবুক ইত্যাদি নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। এমনকি বেশি ব্যবহারের ফলে তাদের পেশাগত জীবনের নানা কাজে বিলম্বিত হতো। এখন এসব না থাকায় তাদের কাজ যথাসময়ে করতে পারছেন। তাদের হাতে এখন অনেক সময়। তাই তারা পাশের বাড়ির কয়েকজন ছেলেদের নানা বিষয়ে শিক্ষাদানও করছেন।
নিউ মার্কেট এলাকার বাসিন্দা সানোয়ারুল হক জানান, তার তিন সন্তানই মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকত। এখন ইন্টারনেট সার্ভিস না থাকায় তাদের ব্যবহৃত তিনটি ফোনই পড়ে থাকে। খুব বেশি প্রয়োজন হলে বন্ধুদের ফোন করে। নানা বিষয়ে ফোনেই খোঁজ খবর করে। একমাত্র মেয়েটি পরীক্ষার জন্য পড়াশোনার সময় বাড়িয়ে দিয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে ফেসবুক ও ইউটিউব না থাকার কারণে।
এদিকে যশোর এমএম কলেজের শিক্ষার্থী রায়হান সিদ্দিকসহ একাধিক শিক্ষার্থী জানান, ফেসবুক বন্ধ থাকায় তারা জীবন থেকে কী যেন হারিয়ে ফেলেছেন। সব সময় মনে হয় গুরুত্বপূর্ণ কিছু হারিয়ে গেছে। হাতে প্রচুর সময়। কিন্তু সেই সময় পার করার মতো কোনো কাজ নেই। তাই তারা খুব হতাশায় রয়েছেন। তারা দ্রুত ইন্টারনেটসহ অন্য মাধ্যমগুলো দ্রুত চালুর দাবি জানান।
এদিকে স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, অতিরিক্ত সময় মোবাইল ফোনে দেয়ায় অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনে অভ্যস্ত হওয়ার কারণে মানুষের শুক্রাণু ও ডিম্বানুতে সমস্যা হচ্ছে। ফলে আগামী প্রজন্ম তাদের বংশবৃদ্ধিতে প্রতিবন্ধকতায় পড়তে পারে। শুধু এই সমস্যা নয়। অতিরিক্ত মোবাইল ফোন ব্যবহারের কারণে ব্যবহারকারীরা অন্ধত্ব, বধিরতাসহ নানা শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। এসব নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন। কারণ মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, খারাপ আচরণ, বড়দের সম্মান না করা, সংস্কৃতি ও মানবিক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে থাকা ইত্যাদি নেতিবাচক প্রভাবের অন্যতম কারণ অতিরিক্ত মোবাইল ফোনের ব্যবহার।
এদিকে, সমাজবিজ্ঞানিদের মতে দেশে খেলার মাঠের সংকট ও পরিবেশ না থাকায় শিশুরা খেলাধূলা করতে পারে না। এছাড়া শহরের সমাজব্যবস্থায় ফ্ল্যাট বাসা নামক জেলখানায় বন্দি জীবন কাটানোর কারণেও শিশুরা মাঠের খেলাধূলা ভুলতে বসেছে। এসব কারণেই মূলত তারা মোবাইলে আসক্ত হয়ে পড়েছে। এই আসক্তি কাটাতে অবশ্যই মাঠের খেলাধূলার পাশাপাশি সামাজিক সম্প্রীতি বাড়াতে হবে। নাহলে হঠাৎ করে মোবাইল বন্ধের কারণে শিশুদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হতে পারে।