বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোর শহরে গত চার দিনে দেড় শতাধিক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব স্থাপনা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও তাদের অনুসারীদের দখলে ছিল। অতীতে এসব স্থাপনা উচ্ছেদে পৌরসভা মাইকিং, নোটিশ পাঠালেও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের চাপের মুখে উচ্ছেদ করা যায়নি। কিন্তু সরকারের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরে পৌরসভার নতুন প্রশাসক এই উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে। এই অভিযানে ছোটখাট টোঙ দোকান থেকে শুরু করে বাদ যায়নি আওয়ামী লীগের কার্যালয়, হোটেল, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও।
এদিকে, এই অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছে শহরবাসী। আর পৌরসভা বলছে, যে যত প্রভাবশালীই হোক পৌরসভার জায়গা দখল করে রাখলে, কাউকেই ছাড় দেওয়া হবেনা। পুনরায় দখলদারিত্ব কায়েম করতে চাইলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
যশোর পৌরসভার প্রকৌশলী কামাল হোসেন বলেন, ‘বিগত সময়গুলোতে পৌরসভার পক্ষ থেকে বেশ কয়েক দফা শহরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে সংশ্লিষ্ট দখলকারীদের চিঠি দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে উচ্ছেদ করা হলেও, আবারও স্থানীয় নেতাকর্মী বা জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে দখল নিত। আবার কিছু কিছু জায়গায় দলীয় চাপের কারণে অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি। এবার পৌরসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হচ্ছে। গত চার দিনে দেড় শতাধিক স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে শহরের সকল ওয়ার্ডে এই অভিযান পরিচালনা করা হবে।
জানা যায়, যশোর শহরের পালবাড়ি-দড়াটানা-মণিহার, দড়াটানা মোড় থেকে জেলখানা মোড় হয়ে খাজুরা বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত ও শহরের দড়াটানা মোড় থেকে চাঁচড়া চেকপোস্ট মোড় পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে গড়ে তোলা অধিকাংশ বহুতল ভবনের সামনে নিজস্ব জায়গা নেই। তাদের নিজস্ব পার্কিং ব্যবস্থা নেই। আর কারো থাকলেও সেটি পর্যাপ্ত নয়। ফুটপাত দখল করেই চলছে পার্কিং ও দোকানপাট। একই চিত্র শহরের চিত্রা মোড় থেকে জজকোর্ট মোড় পর্যন্ত এমএম আলী রোড ও দড়াটানা মোড় থেকে কাঠেরপুল পর্যন্ত এইচএমএম রোড, কাপুড়িয়া পট্টি রোডের দুই পাশের ফুটপাত দখল হয়ে গেছে। শহরের ব্যস্ত কয়েকটি সড়ক ও ফুটপাত দখল করে দোকান এবং যানবাহনের স্ট্যান্ড গড়ে তোলা হয়েছে। এ কারণে শহরে তীব্র যানজট তৈরি হচ্ছে। হাজার হাজার মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। বিগত সরকারের সময়ে নামমাত্র অভিযান পরিচালনা করা হলেও আবারও দোকানপাট আগের নিয়মেই দখলে নিতো। সম্প্রতি আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আগস্ট মাসের জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় শহরের যানজট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যানজট নিরসন ও ফুটপাতের স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানে নেমেছে পৌরসভা।
গত বুধবার থেকে সোমবার পর্যন্ত চার দিনে (ছুটির দিন বাদে) শহরের দড়াটানা, জেনারেল হাসপাতালের সামনের ও আশপাশের সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। ঘোপ সেন্ট্রাল রোড ও ফুড গোউনের দক্ষিণ পাশে স্টাফ কোয়ার্টারের দেয়াল ঘেঁষে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনাও উচ্ছেদ করা হয়েছে। শহরের বকুলতলা এলাকায় ফুটপাতে থাকা বিভিন্ন দোকানপাট, ট্রাফিক বক্সের আশপাশের টোঙ দোকানগুলো বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেয়া হয়। দড়াটানা ভৈরব হোটেলের দখলে থাকা অবৈধ জায়গা উদ্ধার করা হয়। বটতলা মোড়ে যুবলীগ নেতার অবৈধভাবে দখলে রেখে হোটেল ব্যবসা করে আসছিলেন, যা ভেঙে দেওয়া হয়। পরে সেন্ট্রাল রোডে ফুটপাতের উপর গড়ে তোলা তিন নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ, যুবলীগের আঞ্চলিক অফিস ভেঙে দেওয়া হয়। রোববার কুইন্স হাসপাতালের আগ পর্যন্ত সকল অবৈধ স্থাপনা ভেঙে পরিষ্কার করে ফেলা হয়েছে। সোমবার শহরের শংকরপুর চোপদারপাড়া সড়কে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, উচ্ছেদ হওয়া এসব স্থাপনা স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগের পদধারী নেতাদের কর্মী সমর্থকদের। নিজেদের কর্মীদের রাজনীতিক মাঠে সুবিধা দিতে সরকারি জায়গায় স্থাপনা গড়ে পুনর্বাসন করে আসছিলেন তারা।
এই বিষয়ে যশোর পৌরসভার প্রশাসক ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক রফিকুল হাসান জানান, ‘কিছু মানুষ ড্রেনের ওপরে অবৈধ ঘর তৈরি করে পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত করছে। রাস্তার পাশে ফুটপাত দখল করে অবৈধ দোকান দেয়ার ফলে শহরে যানজট হচ্ছে। এ কারণে আজকের এ অভিযান। রাস্তার পাশে ফুটপাত দখলমুক্ত করতে এ অভিযান চলমান থাকবে। যশোর শহরকে পরিচ্ছন্ন শহরে পরিণত করা হবে।’