বেনাপোল সংবাদদাতা
চাহিদামত ঘুষ না দিলে তল্লাশীর নামে হয়রানিসহ পণ্য ডিএম করাসহ মালামাল কেড়ে নেয়াসহ নানা অভিযোগ উঠেছে দেশের সর্ববৃহত স্থলবন্দর বেনাপোল কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তার (সুপার) জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে। এতে করে এ পথে যাতায়াতকারী যাত্রী সাধারণসহ সিঅ্যান্ডএফ মালিক ও কর্মচারীদের মাঝে বিরাজ করছে অসন্তোষ।
জানা গেছে, পটপরিবর্তনের পর ছাত্রলীগ ক্যাডার ওই রাজস্ব কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম দীর্ঘদিন ধরে বেনাপোল কাস্টমসে ঘুষ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন।
জাহাঙ্গীর আলম বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনে দীর্ঘদিন ধরে শক্তিশালী ল্যাগেজ সিণ্ডিকেট তৈরি করে এবং ল্যাগেজ প্রতি মোটা টাকা উত্তোলন করে হাতিয়ে নিচ্ছেন। প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা পকেটস্থ করছেন সুপার জাহাঙ্গীর আলম। টাকা না দিলেই পাসপোর্ট আটক করে মানুষকে জিম্মি করে অর্থবাণিজ্য অসদাচরণ ও হয়রানিসহ বিস্তর অভিযোগ তার বিরুদ্ধে।
রাজস্ব কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম সম্পর্কে একাধিক মানুষ অভিযোগ করেন, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা তানিয়া হোসেন দুজন মিলে ভারত ফেরত যাত্রীদেরকে লাগেজ চেকের নামে জিম্মি করে। একজন পাসপোর্ট যাত্রী ২০ কেজি পণ্য নিয়ে আসলে তার কাছে মোটা অংকের অর্থ দাবি করেন। দাবিকৃত অর্থ না দিলে তাকে ঘন্টার পর ঘন্টা বসিয়ে রাখেন। এরপর সেখানে থাকা কর্মচারিদের দিয়ে লেনদেন করতে বাধ্য করেন। টাকা দেয়ার পর ওই যাত্রীকে ছেড়ে দেয়া হয়।
রোববার ভারত থেকে দেশে আসা পাসপোর্ট যাত্রী এসএম উজ্জ্বল হোসেন বেনাপোল বন্দরে প্রবেশ করলে তার একটি ছোট ব্যাগ নিয়েও টান দেন ওই কর্মকর্তা। এবং তার কাছে টাকা দাবি করে দাঁড় করিয়ে রাখেন। এই যাত্রী দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় প্রায় ১৫ মিনিটে ওই কর্মকর্তা সে সময় ভারত থেকে দেশে আসা আরো বেশ কয়েকজনের মালামাল আটকে দেন এবং কয়েকজনের মালামাল ডিএম করেন। পরে উজ্জ্বল হোসেন কেন টাকা দিচ্ছেন না জানতে চাইলে এই ব্যক্তির সাথে থাকা ব্যক্তি বন্দর কর্তৃপক্ষের এক উর্ধতন কর্মকর্তার পরিচয় দিলে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়। উজ্জ্বল হোসেন অভিযোগ করে বলেন, আমরা বাংলাদেশি বৈধভাবে ভারত থেকে দেশে আসার পর কেন এভাবে হয়রানি করা হবে। এত কিছু স্ক্যান করা চেক করার পরও এভাবে মালামাল নিয়ে টানাটানি কেন করা হবে। আর উর্ধতনদের পরিচয় দিয়েই বা কেন ছাড় পেতে হবে। দেশের সকলেরই কী উর্ধতনদের সাথে যোগাযোগ আছে না থাকবে।
গত বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টম্বর) কমলেশ নামে এক ভারতীয় নাগরিক বাংলাদেশে তার খালার বাড়ি বেড়াতে আসছিলেন। তিনি কিছু খাবার ও চারটি কম্বল নিয়ে আসেন। তার কাছে মোট ১৫ কেজি মালামাল ছিলো। তার কাছে ১০ হাজার টাকা দাবি করা হয়। টাকা দিতে অস্বীকার করায় রাজস্ব কর্মকর্তা জাহাঙ্গীরের নির্দেশে সহকারী রাজস্ব কমকর্তা তানিয়া হোসেন তার মালামাল আটক করে তাকে নিঃস্ব করে ছেড়ে দেয়।
একই দিন ভারত থেকে চিকিৎসা করে দেশে ফিরছিলেন জাহাঙ্গীর হোসেন নামে খুলনার এক নাগরিক। তিনি স্ত্রী-সন্তানের জন্য চকলেট, বিস্কুট, সাবান, শ্যাম্পুসহ বাড়ির ব্যবহারের কিছু পণ্য নিয়ে আসেন।
ইমিগ্রেশনে আসার পর তার কাছে থাকা সব মালামাল কেড়ে নেন ওই দুই কাসটমস কর্মকর্তা।
কাস্টমসের একটি সূত্র জানায়, সুপার জাহাঙ্গীর আলম যেদিন ডিউটি করেন। সেদিন আটক পণ্য কর্মচারি দিয়ে বস্তায় ভরে মালামাল নিজের বাড়িতে নিয়ে যান। এসব পণ্য তিনি নিজে ব্যবহার করেন, আত্মীয় স্বজনকে দেন এমনকি বিক্রিও করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট জানান, সুপার জাহাঙ্গীর আলম নিজেকে কাস্টমস কমিশনার মনে করেন। তিনি সকলের সাথে দুর্ব্যবহার করেন। ছাত্রলীগ করার কারণে কাউকে মানুষ মনে করেন না।
এখনো তার একই রকম অবস্থা। কেউ তার সাথে কথা বলতে গেলে এমন ভাব করেন যে তিনি ছাড়া আপর কেউ নেই কস্টমস কর্মকর্তা। তার দুর্ব্যবহার শিকার হয়নি এমন লোক খুব কম আছে।
যদিও এসক অভিযোগ অস্বীকার করে সুপার জাহাঙ্গীর আলম বলেন কিছু মানুষ এখানে সুযোগ সুবিধা চায় আমি না দেয়ায় তারা এসব অভিযোগ করছে।