নিজস্ব প্রতিবেদক, কালীগঞ্জ:
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার কওসার আলী গত ৪ মাসে অফিস করেছেন ১১ দিন। সপ্তাহে দুই দিন অফিস করার কথা থাকলেও সেটি করেন না। শ্রান্তি ও বিনোদন ছুটি কাটানোর পর তিনি এখন অসুস্থজনিত ছুটিতে আছেন। এতে ব্যাহত হচ্ছে জমি রেজিস্ট্রি কাজ। বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ ও দলিল লেখকরা। দ্রুত কালীগঞ্জ উপজেলায় নির্দিষ্ট একজন সাব-রেজিস্ট্রার নিয়োগের দাবি সাধারণ মানুষ ও দলিল লেখকদের।
উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে জানা গেছে, কওসার আলী কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা উপজেলা সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে কর্মরত আছেন। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে তাকে কালীগঞ্জ উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। গত ১২ জুন তিনি কালীগঞ্জে যোগদান করেন। সপ্তাহে দুইদিন তাকে কালীগঞ্জে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ প্রদান করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সে হিসেবে ৪ মাসে তিনি ১১ দিন কালীগঞ্জে এসেছেন। এরমধ্যে জুন মাসে ৩ দিন, জুলাই মাসে ৩ দিন, আগস্ট মাসে ৩ দিন ও সেপ্টেম্বর মাসে ২ দিন দায়িত্ব পালন করেছেন। এরমধ্যে তিনি ২১ দিনের ছুটি কাটাচ্ছেন। গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে কালীগঞ্জে স্থায়ী কোন সাব-রেজিস্ট্রার নিয়োগ নেই। তিনি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে কর্মরত। সপ্তাহের মঙ্গলবার ও বুধবার এই দুইদিন কালীগঞ্জে অফিস করার কথা। কালীগঞ্জে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ১০০ জমি রেজিস্ট্রির কাজ সম্পন্ন হয়।
দলিল লেখকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এই উপজেলায় প্রায় ৮০ জন দলিল লেখক রয়েছে। তাদের সবার সংসার চলে দলিল লিখে। কিন্তু নিয়মিত জমি রেজিস্ট্রি না হওয়ায় তারাও পড়েছেন বিপাকে। গত ৮ মাস তারা খুবই সমস্যায় আছেন। নিয়মিত সাব-রেজিস্ট্রার না আসায় জমি রেজিস্ট্রি কাজ হয় না। সাধারণ মানুষ এসে প্রায়ই ফিরে যান। অনেক দলিল জমা রয়েছে। রেজিস্ট্রি না হওয়ায় তারাও পড়েছেন বিপাকে। এরআগে সরকার নির্ধারিত ফির অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হতো। সেই টাকার একটি ভাগ সাব-রেজিস্ট্রারও পেতেন। কিন্তু ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর অতিরিক্ত টাকা নেয়া প্রায় বন্ধই হয়েছে। এজন্য কাজে অনীহা সাব-রেজিস্ট্রারদের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক দলিল লেখক বলেন, গত এক মাস খুব সমস্যার মধ্যে আছি। জমি রেজিস্ট্রি করার জন্য সাধারণ মানুষ প্রায়ই ফিরে যাচ্ছেন। আগে সরকার নির্ধারিত জমি রেজিস্ট্রি ফির অতিরিক্ত নেয়া হতো। সেই টাকা সাব-রেজিস্ট্রারও ভাগ পেতেন। কিন্তু এখন সেটি আর সম্ভব না। এজন্য নিয়মিত আসতে চাচ্ছেন না। তিনি কালীগঞ্জে স্থায়ী একজন সাব-রেজিস্ট্রার নিয়োগের দাবি জানান।
উপজেলার লাউতলা এলাকার রিওন হোসেন বলেন, সম্প্রতি তিনি এক বিঘা জমি কিনেছেন। গত দুই সপ্তাহ যাবৎ অফিসে গিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করতে পারেন নি। অফিসে গেলেই শুনি সাব-রেজিস্ট্রার আসেননি। এভাবে একটা অফিস চলতে পারে না।
উপজেলার কোলা গ্রামের মুন্না হোসেন বলেন, প্রায়ই সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে গিয়ে ফিরে আসছেন। সাব-রেজিস্ট্রার না থাকায় তিনিও জমি রেজিস্ট্রি করতে পারছেন না। নিয়মিত অফিস না করায় তিনিও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) কওসার আলীর মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
ঝিনাইদহ জেলা রেজিস্ট্রার সাব্বির আহমেদ বলেন, অফিসার কম আছে। একজন অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বর্তমানে অসুস্থজনিত ছুটিতে আছেন। তবে এর আগে কতদিন শ্রান্তি ও বিনোদন ছুটি কাটিয়েছেন সেটি জানেন না এই কর্মকর্তা। স্থায়ী সাব-রেজিস্ট্রার নিয়োগে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।