বাংলার ভোর প্রতিবেদক
সাত জনমের পাপমোচনের প্রত্যাশা নিয়ে নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপনের মাধ্যমে শারদীয় দুর্গোৎসবের সপ্তমী পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। হাজার হাজার ভক্ত অনুসারিদের বাধভাঙ্গা অংশগ্রহণে যশোরের বিভিন্ন মন্দির ও মণ্ডপগুলো মুখরিত হয়ে ওঠে।
যশোর শহরের বিভিন্ন মন্দির ও মণ্ডপে বৃহস্পতিবার সকাল ৭টা ৫৩ মিনিটে এ পূজা শুরু হয়ে শেষ হয় সকাল ১০টায়। মন্দিরের মন্দিরে পুরোহিতরা এ পূজা পরিচালনা করেন। ভক্তরা দেবীদুর্গার চরণে অঞ্জলি দেন। কেউ কেউ দেবীর পদজলে উপবাস ভেঙে প্রার্থনা করেন।
মন্দিরের পুরোহিতরা বলেছেন, ‘সপ্তমীতে পূজা দিলে সপ্তজনমের, অর্থাৎ সাত জনমের পাপ মোচন হয়ে যায়’।
বৃহস্পতিবার মহাসপ্তমীর সকালে প্রথমে নবপত্রিকা স্থাপন করা হয়। ‘নবপত্রিকা’ শব্দটির আক্ষরিক অর্থ নয়টি গাছের পাতা। কদলী বা রম্ভা (কলা), কচু, হরিদ্রা (হলুদ), জয়ন্তী, বিল্ব (বেল), দাড়িম্ব (দাড়িম), অশোক, মান ও ধান এই নয়টি উদ্ভিদকে পাতাসহ একটি কলাগাছের সঙ্গে একত্র করা হয়।
পরে একজোড়া বেলসহ শ্বেত অপরাজিতা লতা দিয়ে বেঁধে লালপাড় সাদা শাড়ি জড়িয়ে ঘোমটা দেয়া বধূর আকার দেয়া হয়। তারপর তাতে সিঁদুর দিয়ে সপরিবার দেবী প্রতিমার ডান দিকে দাঁড় করিয়ে পূজা করা হয়। প্রচলিত ভাষায় নবপত্রিকার নাম ‘কলাবউ’।
নবপত্রিকার নয়টি উদ্ভিদ আসলে দেবী দুর্গার নয়টি বিশেষ রূপের প্রতীকরূপে বিবেচনা করা হয়। এই নয় দেবী একত্রে ‘নবপত্রিকাবাসিনী নবদুর্গা’ নামে পূজিত হন।
নবপত্রিকা প্রবেশের পর দর্পণে দেবীকে মহাস্নান করানো হয়। দুর্গাপ্রতিমার সামনে একটি দর্পণ বা আয়না রেখে সেই দর্পণে প্রতিফলিত প্রতিমার প্রতিবিম্বে বিভিন্ন উপচারে দেবীকে স্নান করানো হয়।
এবার তিথির কারণে একদিন আগেই মঙ্গলবার বোধন এবং পরদিন অধিবাসের মধ্য দিয়ে দেবীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। বোধন হল উপলব্ধি করা যে তিনি এসেছেন। অধিবাস হল আমন্ত্রণ জানানো যে আমরা পূজা করব। আর সপ্তমী থেকে মূলত পূজা শুরু।
সনাতন ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, মহালয়ার দিন ‘কন্যারূপে’ ধরায় আসেন দশভূজা দেবী দুর্গা; বিসর্জনের মধ্য দিয়ে তাকে এক বছরের জন্য বিদায় জানানো হয়। তার এই ‘আগমন ও প্রস্থানের’ মাঝে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী থেকে দশমী তিথি পর্যন্ত পাঁচ দিন চলে দুর্গোৎসব।
ষষ্ঠী থেকে উৎসব শুরু হলেও উৎসবের আনন্দটা পুরোদমে শুরু হয় সপ্তমী থেকে। মায়ের আগমনে ভক্তরা এদিন আনন্দ এবং বিশ্বশান্তির জন্য মঙ্গল কামনা করেছে।
ভক্তদের অনেকেই এদিন দেবীকে অঞ্জলী দিতে মন্দির ও মন্ডপে আসেন। সপ্তমীর দুপুরে ভক্তদের জন্য প্রসাদ বিতরণ করা হয়। শুক্রবার সকাল ৬টার আগে অষ্টমী পূজা শেষ করতে হবে এবং ৮টার মধ্যে সন্ধি পূজা শেষ করতে হবে।
এদিকে দুর্গাপূজার অষ্টমীতে যশোর রামকৃষ্ণ আশ্রমে হবে কুমারী পূজা। অশুভ শক্তি বিনাশে নবপত্রিকা প্রতিষ্ঠার মধ্যদিয়ে মহাসপ্তমীতে দেবী দুর্গা আরাধনা সম্পন্ন শেষে আজ শুক্রবার শারদীয় দুর্গাপূজার মহা অষ্টমী। বাঙালি সনাতন ধর্মবিশ্বাসীদের শারদীয় উৎসবের আজ তৃতীয় দিন। এদিন ভক্তরা তাদের অর্ঘ্য দেবেন দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গার কমল চরণে। একইসাথে মাতৃবন্দনায় অনুষ্ঠিত হবে কুমারী পূজা। এছাড়া আজ দুর্গোৎসবের অষ্টমী ও নবমী তিথির সন্ধিতে দেবীর ‘সন্ধিপূজা’ও অনুষ্ঠিত হবে।
আজ শুক্রবার (১১ অক্টোবর) রামকৃষ্ণ মিশন ও আশ্রম দুর্গা মন্দিরে সকাল ৬টা ১০ মিনিটে শুরু হবে মহা অষ্টমী পূজা কল্পারম্ভ। দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গার বন্দনা অনুষ্ঠানে এখানে সকাল সাড়ে ১০টায় কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এদিন সন্ধি পূজা দুপুর ১২টা ১৩ মিনিট থেকে দুপুর ১ টা ১ মিনিট পর্যন্ত। আগামীকাল ১২ অক্টোবর সকালে মহানবমী পূজা কল্পারম্ভ এবং ১৩ অক্টোবর সকালে মহাদশমী কল্পারম্ভ- পূজা সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন সকাল ৯ টা ৩৯ মিনিটের মধ্যে।
গোড়াপাড়া পূজা মন্দিরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ লাইনের সহকারী উপ পরিদর্শক হুমায়ুন কবির বলেন, দুই দিনের পূজায় কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা এই মন্দিরে ঘটেনি। উৎসব মুখর পরিবেশে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নিরাপত্তার দায়িত্বে ২ জন পুলিশ সদস্য ও ৮ জন আনসার সদস্য রয়েছে।
শহরের বেজপাড়া রায়বাড়ি পূজা মন্ডপের সভাপতি দীপক রায় বলেন, ১৬ বছর ধরে পারিবারিক এই পূজা মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করে আসছেন। সপ্তমীর দিন থেকে মূলত পূজা জমে উঠে। আনন্দ ঘন পরিবেশে সন্ধ্যা আরতিসহ সপ্তমীর পূজা শেষ হচ্ছে।
এ বছর দেবীদুর্গার আগমন হয়েছে দোলায় বা পালকিতে এবং দেবী কৈলাসে ফিরবেন ঘোটকে বা ঘোড়ায়। যশোর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ জানিয়েছে, এবার যশোরে ৬৫২ টা মন্দির ও মণ্ডপে দুর্গা পূজা হচ্ছে।