বিশেষ প্রতিনিধি
৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নিরবতায় ভেজাল মোবিল, গিয়ার, হাইড্রোলিক ও ডাম্পার অয়েল ব্যবসায়ী সিণ্ডিকেটের সদস্যরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন নামি কোম্পানির মোড়ক যুক্ত পট ব্যবহার করে এই ভেজাল মোবিল বিপণন চলছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, যশোর শহরের খুলনা বাসস্ট্যান্ড এলাকা, আরএন রোড, ঢাকা রোড মোল্লাপাড়া, রাজারহাট বকচর এলাকায় গড়ে উঠেছে ভেজাল মোবিল বিপণন কেন্দ্র। যশোর জেলা ছাড়াও আশপাশ জেলায় বিভিন্ন মোটরসাইকেল গ্যারেজ ও কারখানা থেকে পোড়া মোবিল সংগ্রহ করে জ¦ালিয়ে তৈরি করা হয় এই আসল(!) মোবিল। তাদের উৎপাদিত ভেজাল মোবিল দেশের বিভিন্ন নামি কোম্পানির খালি পটে ভরে মেশিনের মাধ্যমে পটের মুখের কর্ক লাগিয়ে আসল মোবিল হিসেবে বাজারজাত করা হয়।
সম্প্রতি বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের সহযোগিতায় পুলিশ শহরের মণিহার এলাকায় একটি ভেজাল মোবিল গোডাউনে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ মোবিল পট উদ্ধার করে। পরে উক্ত গোডাউনের মালিককে ১ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করেন। এদিকে, ভ্রাম্যমাণ আদালতের শাস্তি ভোগ শেষে ওই ভেজাল কারবারি সাগরসহ ভেজাল মোবিল কারবারিরা তাদের ব্যবসা পূর্ণমাত্রায় চালিয়ে যাচ্ছে।
বিভিন্ন সূত্র বলছে, যশোর পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় জিসান অটো নামে একটি মোবাইল বিক্রির দোকান রয়েছে। উক্ত দোকানের মালিক আব্দুর রহিম। তিনি শহরের বেজপাড়া গুরগোল্লার মোড় এলাকায় তার ভেজাল মোবিল কারখানায় তৈরি করছেন মতুল, ইয়ামাহা, বাজাজ, টিভিএস, সুপার ভি, সুপার ফোর্টিসহ দোশ বিদোশ কোম্পানির ভেজাল মোবিল। আব্দুর রহিমের ন্যায় শহরের মোল্লাপাড়া এলাকার শরিফুল শহরের আরএন রোড এলাকায় দোকান ভাড়া নিয়ে বিক্রি করছেন ভেজাল মোবিলের পট। শহরের মোল্লাপাড়া বাঁশতলা এলাকায় মোবিল উৎপাদনের গোডাউন রয়েছে তার।
সূত্রগুলো আরো বলছেন, শহরের আরএন রোড এলাকার ছোট সেলিমের ডাম্পার ও গিয়ার অয়েলের গোডাউন রয়েছে শহরতলীর রাজারহাট পিকনিক কর্ণার এলাকায়। সে পোড়া মোবিল দিয়ে মোটরসাইকেল ও বিভিন্ন ইঞ্জিনের ডাম্পার ও গিয়ার অয়েল তৈরি করে তা নামিদামি কোম্পানির মোড়ক যুক্ত পট তৈরি করে বাজারজাত করে থাকে। শহরের মোল্লাপাড়ার ভিতরে রয়েছে সাগরের গোডাউন। যেখানে প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন ব্র্যাণ্ডের ভেজাল মোবিল। শহরের আরএন রোড এলাকায় দেলোয়ারের জয়েন্ট অটো নামে একটি দোকান রয়েছে। যে দোকানে বিক্রি হয় ভেজাল মোবিল। তার ভেজাল মোবিল তৈরীর কারখানা শহরের মোল্লাপাড়া সিটি কলেজ পাড়া এলাকার ব্যাটারিপট্টি এলাকায়।
সূত্রগুলো বলেছে, শহরের বকচর বিহারী কলোনী ভেজাল মোবিল কারবারী বড় সেলিমের বাড়ির পশ্চিম পাশের বাসিন্দা মুর্শিদ ও টিপু ভেজাল ডাম্পার অয়েল, হাইড্রোলিক, গিয়ার অয়েল তৈরি করে আসল বলে বিক্রি করছেন। শহরতলী চাঁচড়া তফসীডাঙ্গা এলাকার পল্লী বিদ্যুতের অসাধু কারবারির কাছ থেকে ট্রান্সমিটারের তেল স্বল্প মূল্যে সংগ্রহ করে মুর্শিদ ও টিপু ভেজাল ডাম্পার, হাইড্রোলিক ও গিয়ার অয়েল তৈরি করে থাকেন। সেগুলি দেশ ও বিদেশি কোম্পানির পট ও মোড়ক সংগ্রহ করে বাজারজাত করা হয়।
এছাড়া, শহরের বচকর প্লাস্টিক বদনা ফ্যাক্টরীর সানির ঘর ভাড়াটিয়া আনোয়ার তৈরি করছেন হাইড্রোলিক, ডাম্পার অয়েল। যা বিভিন্ন পট ও টিনের কৌটায় ঢুকিয়ে বাজারজাত করে থাকেন। নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো বলছেন, শহরের বকচর বিহারী কলোনীর বাসিন্দা চিহ্নিত ভেজাল মোবিল কারবারি ভেজাল বড় সেলিম তার বাড়ির পাশে তৈরি করেছেন গোডাউন। নিজস্ব জায়গায় গড়ে তোলা গোডাউনে পোড়া মোবিল জ¦ালিয়ে পরিবেশ নষ্ট করে তৈরি করছেন রিফাইন মোবিল। এছাড়া, তিনি রাজারহাট ব্র্যাক অফিসের পাশে ডায়মণ্ড ব্রাণ্ড নামে গোডাউন তৈরি করে সেখানে ভেজাল কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন।
সূত্রগুলোর অভিমত, মুড়লীর জাকির ও শাহজাহান মূলত যশোরের বিভিন্ন মোটর সাইকেল গ্যারেজ থেকে ব্যবহার হওয়া মোবিলের খালিপট সংগ্রহ করে সেগুলি মোবিল পটের উপযোগী তৈরী করে ভেজাল মোবিল কারবারীদের কাছে বিক্রি করছেন। অপর একটি সূত্রে বলছেন, সদর উপজেলার ঝুমঝুমপুর বালিয়া ডাঙ্গা এলাকার নাজিম ভেজাল মোবিল কারবারীদের একজন সক্রিয় সদস্য। সে ভেজাল মোবিল তৈরি করে দেশের বিভিন্ন কোম্পানির নামিদামি পটে পুরে বাজারজাত করে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের আন্দোলনে পুলিশ তাদের দায়িত্ব থেকে অনেকটা নিশ্চুপ হওয়ায় এসব ভেজাল কারবারীরা বেপরোয়াভাবে তাদের ভেজাল কারবারি চালিয়ে যাচ্ছে। এসব ভেজাল কারবারিরা এখন বিএনপি’র নেতা, কর্মী পরিচয় দিয়ে তাদের ব্যবসা শুরু করেছেন। পুলিশের অনুপস্থিতির সুযোগ কাজে লাগিয়ে পরিবেশ বিনষ্টকারী ভেজাল মোবিল তৈরি করে একদিকে পরিবেশের ক্ষতি করছে। পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলার বাজারে ভেজাল মোবিল, গিয়ার, হাইড্রোলিক, ডাম্পার অয়েল বিক্রি করে মোটর সাইকেলসহ যানবাহনের মালিককে ক্ষতির মুখে ফেলছে।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ভেজাল কারবারিদের কয়েকজনের দোকান ও ডোগাউনে যাওয়া হলেও তাদের পাওয়া যায়নি। এবং চিহ্নিত ব্যবসায়ীরা কোন মন্তব্য করতে রাজি না হলেও তারা জানিয়েছেন তাদের ব্যবসার কাগজপত্র আছে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও ভোক্তারা আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
##