তালা সংবাদদাতা
অতিবৃষ্টি ও নদীর বেড়িবাঁধ ভাঙ্গনের ফলে স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি, যথাযথ পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা না থাকা, ফসলি জমি, মৎস্য ঘের তলিয়ে, জলমহাল ইজারা নিয়ে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও নেটপাটা দিয়ে পানি নিস্কাশনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির ফলে তালায় কয়েকটি ইউনিয়ন বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতিতে ধুলিসাৎ হয়ে গেছে কৃষকের ও বিভিন্ন খামারীর স্বপ্ন।
উপজেলা সরকারি তথ্য মতে ২৫৫৩ হেক্টর আমন ধানের জমি তলিয়ে গেছে। বেসরকারিভাবে কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে ধান পচে গলে গেছে। শতকরা ৮৫ ভাগ ধানের জমিতে পানি।
মানব খাদ্যের উপসর্গগুলো থেকে গোখাদ্য উৎপাদন হয়, যখন মানব খাদ্যে উৎপাদন বিনষ্ট সেখানে গোখাদ্য উৎপাদনের সম্ভাবনা নেই। আর গোখাদ্য উৎপাদন না হওয়ার ফলে খামারীরা রয়েছে উভয় সংকটে, পানির দামে বিক্রি করতে হচ্ছে খামারে থাকা গরু, ছাগল হাঁস, মুরগি।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দুগ্ধ উৎপাদন কেন্দ্র তালার জেয়ালা ঘোষপাড়া সেখানে খামারে থাকা গাভীদের যথাযথ খাবার সরবরাহ করতে না পারায় দুধ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। পরিবেশ দূষণের কারণে নানা রোগে আক্রান্ত যাচ্ছে গাভী। তবে সরকারিভাবে কিছু ছাগল খামারে বিভিন্ন ভ্যাকসিন দেয়ার খবর পাওয়া গেছে তবে সেটি যথাযথ নয়।
সরকারি তথ্য মতে উপজেলায় গাভীর খামার ৩৭৬৫ টি, এঁড়েগরু মোটাতাজাকরণ ২৫৯০ টি, ছাগলের খামার ২১৯ টি, ভেড়ার খামার ১৯ টি, শুকরের খামার ১০টি, মুরগির খামার ৬২৩ টি। এর মধ্যে লেয়ার ৭৬, ব্রয়লার ১৭৬, সোনালী ৫৫২, হাঁসের খামার ১৭ টি, কোয়েল ০৭, টার্কি ০৫ টি।
সাম্প্রতিক বৃষ্টিতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের তথ্য তালা উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের নেই বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা। তবে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস থেকে প্রাপ্ত তথ্যে ২৫-৩০% খামারির ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে।
গত ২০২২-২৩ অর্থ বছরে তালায় দুধ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৩৫ হাজার মেট্রিক টন যার অর্জন হয়েছে ৫১ হাজার ৬শত ৯৫ মেট্রিক টন। মাংস উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১৭ হাজার মেট্রিক টন যার অর্জন হয়েছে ২০ হাজার ৬ শত ১০ মেট্রিক টন। ডিম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৬.১ লক্ষ পিস যা অর্জন হয়েছে ৭.৭৬ লক্ষ। তবে এবার তা কমে আসার সম্ভবনা রয়েছে যদি সঠিক ভাবে গৃহ পালিত সকল পশু পাখির সঠিক পরিমাণ খাদ্য সরবরাহ করা না যায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে উপজেলার প্রায় সকল পানিতে তলিয়ে গেছে এতে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে খামার করে এখন কিস্তির টাকা দিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে তাদের।
গরু খামারি পার্থ মন্ডল বলেন, আমি কিস্তির ও সকল সহায়সম্বল দিয়ে গরুর খামার করেছি। বন্যায় আমন ধান উৎপাদন না হওয়ায় খড়ের দাম বেড়ে গেছে। তাছাড়া অন্যান্য গো খাদ্যেরও দাম বেড়ে গেছে। এখন গরুর পর্যাপ্ত খাবার খেতে দেয়া দুস্কর হয়ে গেছে। আগামীতে লোকসানের সম্ভাবনা দেখছি।