সোহাগ হোসেন
যশোরের শার্শা উপজেলার বেলতলা বাজারে বাণিজ্যিকভাবে জমে উঠেছে মৌসুমী ফল কুলের বাজার। কুল ও আম মৌসুমে মুখরিত হয়ে ওঠে এখানকার সব আড়তগুলো। প্রতিদিন এখান থেকে ছোট বড় ১৫ থেকে ২০ ট্রাক কুল রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে রপ্তানি হচ্ছে।
যশোর- সাতক্ষীরা দুজেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা শার্শা ও কলারোয়া জিরো পয়েন্ট বেলতলা নামক স্থানে এ বাজারটি অবস্থিত।
এবছর বাজারে থাইআপেল কুল ২২৫ টাকা, বলসুন্দরী কুল ১৪০ টাকা, নারকেল কুল ৬৫ টাকা, বাও কুল ২৫-৩০ টাকা, চায়না কুল ৮০ টাকা এবং কাশ্মিরি ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
স্থানীয় কুলচাষি মিজানুর রহমান জানান, আমি ৮ বছর ধরে কুলচাষ করছি। এ বছর আমি ৬ বিঘা জমিতে কুল চাষ করেছি। গত বছরও ৬ বিঘা কুল চাষ করেছিলাম। গত বছরের থেকে এ বছর আমার অনেক কুল হয়েছে এবং দামও ভলো পাচ্ছি। এভাবে যদি শেষ পর্যন্ত বিক্রি করতে পারি তাহলে এ বছর অনেক লাভবান হতে পারবো।
সিলেট থেকে আসা সুমন বেপারী জানান, আমি ৭ বছর যাবত কুল, আম, তরমুজসহ সিজেনারি বিভিন্ন ফলের ব্যবসা করি। সেই কারণে প্রতিবছর বেলতলা ফল মোকামে আসি। এ বছর কুলের দাম অনেক বেশি, যার কারণে লাভের পরিমাণ কম, তারপরও আমরা যেমন বেশি দামে কুল কিনছি, ঠিক তেমন বেশি দামে বিক্রি করছি, বাজারে চাহিদা বেশি থাকায় আমরা কুল কিনে ভালো দামে বিক্রি করতে পারছি।
ঢাকা থেকে আসা হাচান বেপারী জানান, এই অঞ্চলের ফলের স্বাদ ভালো, ক্রেতারাও বেশি বেশি খায়। যার কারণে আমি প্রতিবছর এই মোকাম থেকে কুল ও আম কিনতে আসি, আমার ব্যবসায় লস-লাভ দুটোই হয়।
বেলতলা বাজারের স্থানীয় আড়তদার তাজউদ্দীন আহমেদ, বাবু রায়হান, আবুল কালাম আজাদ জানান, গতবছরের তুলনায় এ বছর কুলের ফলন অনেক বেশি। সেই সঙ্গে কুলের চাহিদা ও দাম বেশি থাকায় আমাদের ব্যবসা এ বছর ভালো এবং চাষিরাও অনেক খুশি। আমাদের এ বাজারে চাষিরা নিঃসন্দেহে সঠিক ওজনে এবং সঠিক মূল্যে ফল বিক্রি করতে পারেন। তাই চাষিরা এ বাজারে কুল বিক্রি করতে আসেন। বাজারে দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত কুল কেনাবেচা হয়।
বেলতলা বাজার কমিটির সাধরণ সম্পাদক কামরুজ্জামান মুন্না জানান, চাষি ও ব্যবসায়ীরা যাতে নির্বিঘ্নে ব্যবসা করতে পারে সেজন্য বাজারে সব ধরনের ব্যবস্থা আছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর যেমন অনেক কুল চাষ হয়েছে। এভাবে যদি আরও ২-১ বছর যায় আমি আশাবাদী বেলতলা বাজার দেশের দক্ষিণবঙ্গের মধ্যে বিখ্যাত ফল বাজার হিসেবে খ্যাতি অর্জন করবে।
শার্শা উপজেলা কৃষি অফিসার দীপক কুমার সাহা জানান, চলতি মৌসুমে মোট ১৩৫ হেক্টর জমিতে ৪৫০ জনের মত চাষি কুল চাষ করেছেন। পাশাপাশি আমি বেলতলা কুল বাজার পরিদর্শন করেছি, থাই আপেল, বলসুন্দরী, চায়না, টক মিষ্টি কুলগুলোই এ বছর চাষিরা বেশি চাষ করেছেন এবং তারা আনেক লাভবানও হয়েছেন। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় অন্য কৃষকরা দিনে দিনে কুল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। আগামী বছরও চাষিরা এই লাভজনক ফল বেশি বেশি চাষ করবেন বলে তিনি আশাবাদী।