বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরের মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দপ্তরের নাজির শাহিন আলমকে মারপিটের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ইউএনও দপ্তরের সামনে এ ঘটনা ঘটে। ওই সময় শাহীন দপ্তরের কাজ সেরে সহকর্মী সাইফুল ইসলামের সাথে উপজেলা পরিষদ চত্বরে অবস্থিত শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে গল্প করছিলেন। শাহীন এই হামলার জন্য থানা যুবদলের আহবায়ক মোতাহারুল ইসলাম রিয়াদকে দায়ী করেছেন। শাহীনের অভিযোগ, থানা যুবদলের আহবায়ক মোতাহারুল ইসলাম রিয়াদ তাকে মোবাইলে হুমকি দেন। প্রতিবাদ জানালে এরপর দলবল নিয়ে রিয়াদ উপজেলা চত্বরে আসেন। তখন তার সাথে থাকা একজন শাহীনের মাথায় থাপ্পড় মারে। অন্য কয়েকজন তাকে ধাক্কাধাক্কি ও টানাহেঁচড়া করে।
এদিকে, ইউএনও দপ্তরের নাজির শাহীন আলমের উপর হামলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টার দিকে কর্মবিরতি দিয়ে হামলার ঘটনাস্থলে মানববন্ধন করেছেন উপজেলা পরিষদে কর্মরত সকল কর্মকর্তা কর্মচারী। মানববন্ধনে ইউএনও নিশাত তামান্না ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিয়াজ মাখদুম অংশ নেন।
মারপিটের শিকার শাহীন বলেন, বুধবার বিকেলে অফিসের সামনের শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে সহকর্মী সাইফুল ইসলামের সাথে গল্প করছিলাম। এ সময় শাহীনের ফোনে কল করে কথা বলছিলেন রিয়াদ। একপর্যায় সাইফুল বলে ওঠেন, শাহীন আমার সামনে আছে। তখন রিয়াদ আমার সাথে কথা বলতে চাইলে সাইফুল আমাকে ফোন ধরিয়ে দেন।
নাজির শাহীন বলেন, আমি ফোন ধরতেই রিয়াদ আমাকে গালমন্দ করতে থাকে। আমি প্রতিবাদ করলে নানা হুমকি দিয়ে সে আমার অবস্থান জানতে চায়। আমি অফিসের সামনে থাকার কথা বললে ফোন কেটে দিয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে ২০-২৫ জনকে নিয়ে রিয়াদ আমাদের কাছে আসেন। এরপর রিয়াদের উপস্থিতিতে আমাকে মারপিট ও ধাক্কাধাক্কি করা হয়।
মণিরামপুর বিএনপির রাজনীতিতে দুটি মেরুকরণ রয়েছে। এক গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি শহীদ মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন। অন্য গ্রুপের নেতৃত্বে আছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ মুছা ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মিন্টু। মোতাহারুল ইসলাম রিয়াদ মোহাম্মদ মুছা ও আসাদুজ্জামান মিন্টুর অনুসারী।
শাহীন বলেন, আমি ঘটনাটি সাথে সাথে বিএনপির থানা কমিটির সেক্রেটারি আসাদুজ্জামান মিন্টুকে মোবাইল ফোনে জানাই। এরপর ওরা চলে যায়। নাজির শাহীন বলেন, তাৎক্ষণিক আমি বিষয়টি ইউএনও স্যারকেও বলেছি। স্যার জেলা প্রশাসক স্যারকে জানিয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে শাহীন বলেন, ‘আমাকে মোবাইলে রিয়াদ বলছিল, অফিসে বসে দালালি করিস। তোর হাত পা ভেঙ্গে দেব। কেন সে এসব কথা বলেছে তা বুঝে উঠতে পারছি না।’
শাহীন আরও বলেন, এই ঘটনা জানাজানি হলে রাতে থানা বিএনপির সেক্রেটারি আসাদুজ্জামান ইউএনও স্যারের বাসায় এসে দেখা করেন। এরপর থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ মুছা, আসাদুজ্জামান মিন্টু ও রিয়াদ আমার কাছে এসে ভুল স্বীকার করেছেন। আমি তাদের বলেছি, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জেনেছেন। এই বিষয়ে তারা সিদ্ধান্ত নেবেন।’
মণিরামপুর থানা যুবদলের আহবায়ক মোতাহারুল ইসলাম রিয়াদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, শাহিন আলমের সঙ্গে ওই ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তার সঙ্গে মোবাইলে কোনো কথাই হয়নি। অভিযোগটি তার মনগড়া হতে পারে। মণিরামপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মিন্টু ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। বিষয়টি বড় কিছু নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, রিয়াদের সাথে ইউএনও দপ্তরের শাহীনের কথা কাটাকাটি হয়েছে। একপর্যায়ে অন্য একজন শাহীনকে একটা চড় মেরেছে। আসাদুজ্জামান মিন্টু বলেন, এই বিষয়ে ইউএনওর সাথে আমার দুই দফা কথা হয়েছে। একবার সরাসরি। অন্যবার মোবাইল ফোনে। আমি রিয়াদ ও শাহীনের মধ্যে মিলমিশ করে দিয়েছি।
মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত তামান্না বলেন, বিএনপির কয়েকজন আমার কাছে এসেছিল। বিষয়টি মিলমিশের কিছু নয়। শাহীনকে ফিজিক্যালি এ্যাসাল্ট করা হয়েছে। আমি বিষয়টি ডিসি স্যারকে জানিয়েছে। তিনি এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবেন। নিশাত তামান্না বলেন, শাহীনকে মারপিটের ঘটনায় আমরা উপজেলা পরিষদে কর্মরত সবাই একত্রিত হয়ে প্রতিবাদ সভা করেছি। আমরা হয়রানিমুক্ত সুষ্ঠু কর্ম পরিবেশ চাই। ইউএনও আরও বলেন, আমরা এখনো মামলায় যাইনি। ডিসি স্যারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। আশা করছি একটা সিদ্ধান্ত আসবে। মণিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ গাজী বলেন, ইউএনও অফিসের কর্মচারীকে মারপিটের বিষয়টি আমাদের জানানো হয়নি।