বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরে এক প্রবাসীকে পার্ক থেকে তুলে নিয়ে যেয়ে জোরপূর্বক বিয়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে। আর এই কাজে সহযোগিতা করেছেন জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন ও জেলা যুবদল নেতা সানী আহমেদ। গত ৩ এপ্রিল এই ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ, শহরের বেজপাড়া বিহারী পাড়ার বাসিন্দা তিনটি হত্যাসহ একডজন মামালার আসামি পেঁচো অস্ত্রের মুখে রবি নামে এক সৌদি প্রবাসী যুবককে তুলে নিয়ে তার বোনের সঙ্গে বিয়ে দেন। এই ঘটনায় ছেলে পক্ষ কোতোয়ালি থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগী ছেলের দুলাভাই তুষার আহমেদ ঘটনা নিয়ে ভিডিও বার্তা দিলে বিষয়টি জানাজানি হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাদের সহযোগিতায় এমন কর্মকাণ্ডে বিব্রত নেতাকর্মীরাও।
অপহরণের শিকার সৌদি প্রবাসী যুবকের দুলাভাই সদরের ইছালি ইউনিয়নের ফুলবাড়ি গ্রামের তুষার আহমেদ জানান, তার শ্যালক রবিউল ইসলাম রবি দেশে থাকাবস্থায় পেঁচোর বোনের সাথে মোবাইলের মাধ্যমে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে দেখাদেখি হলে মেয়ে পছন্দ না হওয়ায় তাদের মধ্যে সম্পর্কের বিচ্ছেদ ঘটে।
পরে রবি সৌদি আরব চলে যান। ৪ বছর পর সে মার্চ মাসে বাড়িতে আসে। এই খবর পাবার পর ওই মেয়ে ফোনে তাকে গত ৩ এপ্রিল জেসগার্ডেন পার্কে দেখা করতে বলে। সেখানে গেলে সন্ত্রাসী পেঁচো, ছাত্রদল নেতা সাদ্দাম হোসেন, যুবদল নেতা সানীসহ কয়েকজন তাকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে শহরের বকচর এল মার্কেটে পেছনে একটি বাড়িতে আটকিয়ে রাখে। সেখানে আমাদেরকে খবর দেয়া হলে আমি ও আমার শাশুড়ি উপস্থিত হলে আমাদেরকে জীবননাশের হুমকি দিয়ে চাঁদা দাবি করা হয়। একপর্যায়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে অস্ত্রের মুখে আমার শ্যালককে ওই মেয়ের সাথে ৫ লাখ টাকার কাবিনে বিয়ে পড়ানো হয়। বিষয়টি ইছালি ইউনিয়ন বিএনপির নেতা রেজাউল ইসলাম জানেন। একপর্যায়ে কৌশলে আমরা বাড়িতে ফিরে থানায় অভিযোগ করি।
ইছালি ইউনিয়ন বিএনপির নেতা রেজাউল ইসলাম জানান, মনোহরপুর গ্রামের রবিকে জোরপূর্বক বিয়ে দেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ছেলেটির পরিবার কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ করেছেন।
তবে অভিযোগের বিষয়ে যুবদল নেতা সানী আহমেদ বলেন, ‘প্রথমে স্থানীয়রা বিয়েসাদী বিষয়ে আমাকে ডাকে। তবে আমি ঘটনাস্থলে যেয়ে দেখি শালিস বিচারের বিষয়। যেহেতু দলীয়ভাবে বিচার শালিসে যাওয়া নিষেধ, সেই কারণেই আমি চলে আসি। পরে শুনেছি, বিষয়টি পুলিশ প্রশাসন দেখভাল করেছে। আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হচ্ছে সেগুলো মিথ্যা।’
আর এই বিষয়ে জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের নাম্বারে কয়েকদফা যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
জেলা ছাত্রদলের প্রচার সম্পাদক রাজিবুল হক তূর্য্য জানান, ‘ছাত্রদল সাংগঠনিকভাবে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। দলের নাম ভাঙ্গিয়ে কোন অপকর্মে জড়ালে তার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। জোর করে বিয়ে বা অপহরণ করে বিয়ে দেয়ার ঘটনা নিয়ে কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আর জেলা যুবদলের সদস্য সচিব আনসারুল হক রানা জানান, ‘বিষয়টি তাদের নজরে এসেছে। প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অপরাধ করে কেউ পার পাবে না।’
কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ আবুল হাসনাত বলেন, ‘বিষয়টি তদন্ত চলছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এলাকাবসী সূত্রে জানা গেছে, সন্ত্রাসী পেঁচো জেলা ছাত্রলীগের নেতা বেজপাড়ার ইমন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা মান্নান ও সন্ত্রাসী ভেড়া শাকিল হত্যাসহ কমপক্ষে একডজন মামলার আসামি। সে বিগত সময়ে কোতোয়ালি থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিত কুমার নাথের ছত্রছায়ায় থেকে অপরাধ করলেও ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে। বিগত সংসদ নির্বাচনে বেজপাড়া আজিমাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও এমএসটিপি বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্র দখল করে ভোট ডাকাতির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এ কাজে তাকে সহযোগিতা করেছিল বেজপাড়ার আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী। মূলত তার দেয়া অস্ত্র ব্যবহার করে ওই সময়ে প্রকাশ্য মহড়া দেয় সন্ত্রাসী পেঁচো। গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর জেলা ছাত্রদল নেতা সাদ্দাম হোসেন তাকে পৃষ্ঠপোষকতা করছে বলে অভিযোগ করেছেন দলীয় কর্মীরা। সাদ্দাম হোসেন বেজপাড়ার সাবেক কমিশনার রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির একাধিক নেতা জানান, বিগত সময়ে রিয়াজ উদ্দিন ও তার ছেলে সাদ্দাম হোসেন কোন দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশ না নিয়ে গা বাঁচিয়ে চলেছেন। বিগত সরকারের রোষানলে তাদেরকে পড়তে হয়নি। এমনকি কোন মামলাও হয়নি তাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর পিতা ও ছেলে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এ কারণে চিহৃত সন্ত্রাসী পেঁচোকে তারা সেল্টার দিচ্ছেন। যা নিয়ে খোদ দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।