স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ
যশোরে খুন, অপহরণ, চুরি মানবপাচারের মত অপরাধ বেড়েছে। আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় উদ্বেগ দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষের মাঝে। বুধবার জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান সদস্যরা। জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন যশোরের জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম।
সভায় জেলার বিগত মাসের অপরাধ চিত্র তুলে ধরেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কমলেশ মজুমদার। সভায় জানানো হয়, মে মাসে খুন ৭টি, মানবপাচার ৫টি, অপহরণ ১৭টি, গাড়ি চুরি ২টি, অন্যান্য চুরি ১৮টি, সড়ক দুর্ঘটনা ১০টি, অস্ত্র আইনে মামলা ৪টি, বিস্ফোরক আইনে মামলা ৩টি ও চোরাচালান ১টি মামলা হয়েছে। এপ্রিল মাসে এপ্রিল খুন ৬টি, মানবপাচার একটি, অন্যান্য চুরি ৮টি, সড়ক দুর্ঘটনা ৭টি, অস্ত্র আইনে ২টি মামলা হয়। খুন, মানবপাচার, অপহরণ, গাড়ি চুরি, অন্যান্য চুরি, সড়ক দুর্ঘটনা, অস্ত্র আইনে মামলা, বিস্ফোরকদ্রব্যের মামলাসহ চেরাচালান বৃদ্ধি পেয়েছে।
জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম বলেন, যশোরে আমি দেখেছি আপনারা অপরাধকে প্রশ্রয় দেন। আমরা ব্যবস্থা নিতে গেলে আপনারা বাঁধা দেন। আপনারা ভিতরে এক কথা বলেন, বাইরে আরেক রকম সুপারিশ করেন। জেলার আইন শৃংখলা আরও উন্নতি হওয়া দরকার।
তিনি আরও বলেন, যশোর শহরের যানজট দূর করতে ফুটপাতে উচ্ছেদ অভিযান চলছে। এই অভিযান চলমান থাকবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মামলার সংখ্যা বেশি হওয়া মানে আইন শৃংখলার অবনতি না। জেলায় অপহরণ বেড়েছে। যেটা আমাদের জন্য এলার্মিং। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে উঠতি বয়সী কিশোর গ্যাংদের আড্ডাবাজি বন্ধের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের নির্দেশ দেন তিনি।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক ও যশোর পৌরসভার প্রশাসক রফিকুল হাসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশার, সিভিল সার্জন ডা. মাসুদ রানা, যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. হুসাইন সাফায়েত, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন, জেলা জামায়াত ইসলামীর আমির অধ্যাপক গোলাম রসুল, যশোর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মিজানুর রহমান খান, প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, লোকসমাজ পত্রিকার সম্পাদক শান্তুনু ইসলাম সুমিত প্রমুখ।
সভায় বর্তমান সময়ে শহরে চলমান উচ্ছেদ অভিযান, যানজট সমস্যা, আ.লীগের চেয়ারম্যান ও নেতাকর্মীদের এলাকায় বিচরণ, হাসপাতাল ক্লিনিকের বিভিন্ন অব্যবস্থাপনা বিষয়ে আলোকপাত করেন উপস্থিত সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক দলের ব্যক্তিবর্গরা।
লোকসমাজ পত্রিকার সম্পাদক শান্তুনু ইসলাম সুমিত ও যশোর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মিজানুর রহমান খান হাসপাতাল ও ক্লিনিকের অব্যবস্থাপনার কথা তুলে ধরেন। তারা বলেন, হাসপাতালগুলোতে দালাল ও সিণ্ডিকেট দূর করতে পদক্ষেপ নিতে হবে। অনেক সময় প্রাইভেট ক্লিনিকে প্যাথলজি থাকে না। এতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ে। মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করা হচ্ছে। এছাড়া ফুটপাত দখলমুক্ত করার বিষয়ে সাধুবাদ জানান তারা।
সিভিল সার্জন ডা. মাসুদ রানা বলেন, স্বাস্থ্যবিভাগের নিয়ম মেনে যশোরের ৮০ শতাংশ হাসপাতাল চলে না। মালিকরা বিভিন্নভাবে স্বাস্থ্য বিভাগকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে। এমনকি স্বল্পমূল্যে সিজারের প্রতিযোগিতা চলে হাসপাতালগুলোতে।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন বলেন, যশোরে গত মাসে আইনশৃঙ্খলার ব্যাপক অবনতি হয়েছে। এর জন্য পুলিশ প্রশাসনের স্থিতিশীলতাকে দায়ী করব। থানা, ক্যাম্পের অনেক এসআই ওসি আ.লীগের দোসর। তারা বর্তমান সময়ের এই পরিবর্তনকে মানতে পারছে না। সন্ত্রাসীদের গডফাদাররা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে আইনশৃঙ্খলার অবনতির জন্য কাজ করছে।
জেলা জামায়াত ইসলামীর আমির গোলাম রসূল বলেন, জেলায় যানজট প্রকট আকার ধারণ করেছে। কোতোয়ালী থানা থেকে মণিহার পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে বড় বড় ব্যবসায়ীরা জিনিসপত্রে রাস্তা দখল করে রেখেছে। শুধু ফুটপাত উচ্ছেদ করলে হবে না। এই সব ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। আ.লীগের দোসরদের ধরতে প্রশাসনের কাছে আমরা তালিকা দিয়েছিলাম। তারপরও কোনো কাজ ঠিক মত হচ্ছে না।
স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক ও যশোর পৌরসভার প্রশাসক রফিকুল হাসান বলেন, ফুটপাত উচ্ছেদ করতে গিয়ে আমরা মিশ্র প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। কাজ করলেও দোষ, না করলেও দোষ। বীরমুক্তিযোদ্ধা আলী হোসেন মনি সড়কে (প্যারিস রোড) দোকান বসানোর কারণে প্রতিনিয়ত ছিনতাই, ইভটিজিং হয়। এসব কারা নিয়ন্ত্রণ করবে। দড়াটানার ভৈরব হোটেল নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ৩ বার ভেঙ্গেছি। আর কত বার ভাঙ্গা যায়। আমরাও তো মানুষ। আমরা উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে যাবো। দড়াটানার ফল মার্কেট নিয়ে রাজনৈতিক দলের নেতারা সাংবাদিকরা বলছেন তাদের জন্য সুযোগ দিতে। আমরা কেন ফুটপাত দখলের সুযোগ দেবো। ব্যবসা করতে হলে তারা স্থায়ী দোকান ভাড়া নিয়ে করুক।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশার বলেন, জেলার রাজনৈতিক ব্যক্তিরা সচেতন হলে অপরাধ কম হবে। মে মাসে যে খুন হয়েছে রাজনৈতিক অধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে। আমরা কাজ করি বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে। আমাদের পুলিশ প্রশাসনের প্রতি আপনারা যেমন নজর রাখছেন, জবাবদিহি আশা করেন তেমনি অন্যান্য স্টেক হোল্ডারের সাথে কথা বলেন।
আপনাদের অনেক লোক বিচার প্রাকটিস করেন। আসামি জামিনের বিষয়ে উনারা ভালো বলতে পারবেন। বিগত দিনে চেয়ারম্যানদের দ্বারা তো আপনারা ক্ষতিগ্রস্থ তাহলে আপনারা কেন মামলা করেন না? যার নামে মামলা নেই তাকে কিভাবে গ্রেপ্তার করবে পুলিশ। এছাড়া কোন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে আপনারা উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারেন।