বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরে বর্ণাঢ্য আয়োজনে পালিত হলো ঐতিহ্যবাহী রথযাত্রা উৎসব। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম এই উৎসবকে কেন্দ্র করে শহরজুড়ে বিরাজ করছিল এক আনন্দঘন ও ভক্তিপূর্ণ পরিবেশ। বিভিন্ন মন্দির থেকে রথ বের হয়ে শহরের প্রধাই সড়ক প্রদক্ষিণ করে। যেখানে ধর্মপ্রাণ হাজারো মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেন। ঢাকের তালে তালে নেচে গেয়ে রথ যাত্রায় অংশ নেন বিভিন্ন বয়সের হাজার হাজার মানুষ।
এদিন বিকেল বেলা শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে রথযাত্রা শুরু হয়। রামকৃষ্ণ আশ্রম ও রামকৃষ্ণ মিশনেও রথযাত্রা হয়েছে। উৎসবমুখর পরিবেশে বিভিন্ন এলাকার সনাতন ধর্মের মানুষ রথযাত্রায় অংশ নেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন রামকৃষ্ণ আশ্রমের অধ্যক্ষ ও রামকৃষ্ণ মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী জ্ঞানপ্রকাশানন্দ, আশ্রমের উপাধ্যক্ষ স্বামী আত্মবিভানন্দ এবং প্রবীণ শিক্ষক তারাপদ দাস প্রমুখ।
চাঁচড়া দশমহাবিদ্যা ইসকন মন্দির থেকে একটি রথযাত্রা বের হয়। রথটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে বেজপাড়ার সনদ কুমার সাহার বাড়িতে গিয়ে শেষ হয়।
শহরের ঝুমঝুমপুর এলাকার শ্রী শ্রী গৌর গোপীনাথ মন্দির থেকে একটি রথযাত্রা বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সহ-সভাপতি শ্যামল দাস সিআইপি এর নেতৃত্বে এই রথযাত্রা শুরু হয়। এই রথটি বেজপাড়ায় তার মামা বাসুদেব দত্তের ভগবান বাড়িতে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দীপংকর দাস রতন, সাধারণ সম্পাদক তপন কুমার ঘোষ, সহ-সভাপতি জয়ন্ত বিশ্বাস, দুলাল সমাদ্দার, শ্যামল দাস সিআইপি, প্রশান্ত দেবনাথ, যুগ্ম সম্পাদক রতন আচার্য, সহ-দপ্তর সম্পাদক দুর্গাপদ দেবনাথ, সদর উপজেলা পূজা পরিষদের সভাপতি রবিন কুমার পাল, সাধারণ সম্পাদক প্রশান্ত সরকার, পৌর পূজা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক উৎপল ঘোষ সহ পূজা পরিষদের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
এদিকে, বেজপাড়া সার্বজনীন পূজা মন্দিরেও রথযাত্রা হয়েছে। ধর্মপ্রাণ মানুষের পদচারণায় মন্দির প্রাঙ্গণ মুখরিত হয়ে উঠে। এ সময় মন্দির কমিটির সভাপতি সুনীল বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক অচিন্ত ধর, সাংগঠনিক সম্পাদক প্রশান্ত সরকার, দপ্তর সম্পাদক পংকজ রায় এবং সাংস্কৃতিক সম্পাদক সনাতন রায়সহ কমিটির অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
রথযাত্রা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের একটি প্রাচীন এবং গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। এটি মূলত ভগবান জগন্নাথ (শ্রীকৃষ্ণ), তাঁর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা বলরাম এবং বোন সুভদ্রার রথে আরোহণ করে মাসির বাড়ি (গুণ্ডিচা মন্দির) যাত্রার স্মরণে পালিত হয়। এই উৎসবের মূল কেন্দ্র ভারতের ওড়িশার পুরী হলেও বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এবং বাংলাদেশেও এটি অত্যন্ত ভক্তি ও উৎসাহের সাথে পালিত হয়।
প্রাচীনকাল থেকেই রথযাত্রা একটি সামাজিক ও ধর্মীয় মিলনমেলা হিসেবে পরিচিত। বিশ্বাস করা হয় যে, রথের রশি স্পর্শ করলে বা রথের চাকায় হাত দিলে পুণ্য অর্জন হয়। রথযাত্রা মূলত বর্ষাকালের শুরুতে অনুষ্ঠিত হয় এবং এটি নববর্ষের আগমন ও নতুন ফসলের প্রতীক হিসেবেও বিবেচিত হয়। সময়ের সাথে সাথে রথযাত্রা কেবল একটি ধর্মীয় উৎসব না হয়ে, লোকসংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। এটি সমাজে সাম্য ও ঐক্যের বার্তা বহন করে। যেখানে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবাই উৎসবে শামিল হতে পারে।