বাংলার ভোর প্রতিবেদক
পঞ্চগড়ের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (শিক্ষা ও কল্যাণ শাখা) মো. আসিফ আলী জিভালের বিরুদ্ধে যৌতুকের দাবিতে মারধর, মানসিক নির্যাতন ও পর নারীতে আসক্তির অভিযোগ তুলেছেন তার স্ত্রী দেওয়ান স্বীকৃতি রহমান ওরফে চৈতী।
এ ঘটনায় তিনি ঢাকা সিএমএম আদালত ও যশোরে পৃথক মামলা করেছেন। এ ঘটনার পর তার স্বামী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেখিয়ে তাকে হেনস্থা করবেন বলে শাসিয়েছেন- দাবি চৈতীর। এ বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (শিক্ষা ও কল্যাণ শাখা) মো. আসিফ আলী জিভাল তার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি জানিয়েছেন ‘বিষয়টি যেহেতু মামলা পর্যন্ত গড়িয়েছে, সে কারণে আদালতেই সুরাহা হবে।’
চৈতীর দেয়া অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, যশোর শহরের পুরাতন কসবা বিবি রোড এলাকার দেওয়ান মিজানুর রহমানের মেয়ে দেওয়ান স্বীকৃতি রহমান ওরফে চৈতী খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করতেন। অপরদিকে, খুলনার সোনাডাঙ্গা থানাধীন সোনাডাঙ্গা ফেজ-২ এর (রোড নম্বর ৫, হোল্ডিং নম্বর ৫৮) বাসিন্দা নওয়াব আলীর ছেলে মো. আসিফ আলী জিভালও একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। পূর্বের জানাশোনা থেকে পরিচয় ও অন্তরঙ্গতার একপর্যায়ে ২০২৪ সালের ১৬ মার্চ তারা ৫০ লাখ টাকা দেনমোহরে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হন। উল্লেখ্য, জিভাল ও চৈতীর এর আগে বিয়ে হয় এবং তারা উভয়েই তালাকপ্রাপ্ত হয়ে এই বিয়ে করেন। চৈতীর প্রথমপক্ষে একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। যা দুইজনেই তাদের অ্যাফিডেভিটে উল্লেখ করেছেন।
চৈতীর অভিযোগ, বিয়ের পর সুখেশান্তিতেই তাদের সংসার শুরু হয়। কিন্তু মাসখানেক যেতে না যেতেই জিভাল ওই বছরের ১৯ এপ্রিল একটি গাড়ি কেনার জন্যে তার কাছে ২৫ লাখ টাকা দাবি করেন। কাক্সিক্ষত টাকা দিতে না পারায় জিভাল তাকে শারীরিকভাবে আঘাত (চড়-থাপ্পড়সহ লাঠি দিয়ে বাড়ি) এবং মানসিকভাবেও অত্যাচার করেন। পরদিন তিনি শ্বশুরবাড়ি থেকে যশোরে বাবার বাড়ি চলে যান এবং হাসপাতাল ভর্তি থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করেন।
তিনি জানান, সংসার টিকিয়ে রাখতে দুইপক্ষের আপোস-মীমাংসার পর তিনি ফের শ্বশুরবাড়িতে ফিরে যান। এরপর ১৫ নভেম্বর তিনি বাবার বাড়ি বেড়াতে এলে জিভালও আসেন। যশোরে এসেও তিনি গাড়ি কেনার সেই ২৫ লাখ টাকার জন্যে ফের চাপ দিতে থাকেন। পরিবারের অর্থনৈতিক দৈন্যতার কথা জানিয়ে ওই টাকা দিতে পারবে না জানালে জিভাল এখানেও তাকে মারধর করেন। তিনি অভিযোগ করেন, তাকে চুলের মুঠি ধরে টেনেহিঁচড়ে মেঝেতে ফেলে চড়, লাথি মারতে থাকেন।
এতে তার শরীরের বিভিন্ন অংশে নীলাফোলাসহ ঠোঁট কেটে যায়। তিনি যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। হাসপাতালের রেজি নম্বর ৭৬৪৭৫/১৪৮। পরে চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি যশোর কোতোয়ালি থানায় যৌতুকের দাবিতে মারপিটের অভিযোগ এনে একটি মামলা করেন। মামলা নম্বর ৩১/১৭.০২.২০২৫।
চৈতী বলেন, আমাদের দুইজনেরই আগে বিয়ে হয়েছিল; বিষয়টি আমরা দুইজনই অবগত। এইসব জেনেশুনেই আমরা বিয়ে করি। কিন্তু বিয়ের পর থেকেই জিভাল পল্লবী নামে আরেক বিবাহিত নারীর সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়ান। তাদের সেই সম্পর্কে বাধা হয়েছি বিধায় যৌতুকের দাবিতে আমাকে তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন শুরু করেন। এইসব ঘটনার প্রেক্ষিতে ঢাকার সিএমএম আদালতে একটি মামলা (নম্বর ১৬২৫/২৪) এবং যশোর আদালতে আরেকটি মামলা (৩১/১০৩) দায়ের করি।
তিনি বলেন, এসব ঘটনার আদ্যোপান্ত উল্লেখ করে পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অবহিত করি। কিন্তু তিনি কোনো সুরাহা না করায় গেল বছরের ২ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর একটি অভিযোগপত্র দিয়েছি। সেখানে যৌতুকের দাবিতে মারপিটসহ পর নারীতে আসক্তির বিষয়টি উল্লেখ করেছি।
বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট তাহমিদ আকাশ বলেন, ’ভুক্তভোগী নারী কোতোয়ালি মডেল থানায় অভিযোগ দিয়েছিলেন। পরে অভিযোগটি মামলা হিসাবেও রের্কড হয়। তবে দুঃখের বিষয় হলো এখনও আসামি আটক করতে পারেনি পুলিশ। এমনকি আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার ধার্যকৃত তিনটা তারিখেও চার্জশীট জমা দিতে পারেনি। অভিযোগ করে তিনি বলেন, আসামি যেহেতু নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফলে প্রভাবিত হয়ে পুলিশ আসামি আটক বা তদন্ত রিপোর্ট দিতে দেরি করছে। এ কারণে ভুক্তভোগী নারী বিচার পেতে বিলম্ব হচ্ছে।’
এদিকে, অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (শিক্ষা ও কল্যাণ শাখা) মো. আসিফ আলী জিভাল বলেন, পরিস্থিতির শিকার হয়ে তাকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছিলাম। তবে কখনো একসাথে স্বামী-স্ত্রীর সংসার বা থাকা হয়নি। তিনি প্রশ্ন করেন, তাকে কেন আমি নির্যাতন করবো বা যৌতুক চাইবো। তিনি এখন আর আমার স্ত্রী নেই।
মামলার এজাহারে মারধরের যে ঘটনার দিন উল্লেখ করা হয়েছে; ওই সময় আমি অন্যবিভাগের ট্রেনিংয়ে ছিলাম। আমাকে হেনস্তা করতেই এ ধরনের মামলা করা হয়েছে। যেহেতু মামলা করেছে, আদালতই বিচার করবে।’