বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরের বেনাপোলে ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালক সুজায়েতুজ্জামান প্রিন্সকে হত্যার ঘটনার ২১ বছর পর রায় দিয়েছে আদালত। বৃহস্পতিবার বিকেলে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ জয়ন্তী রানী দাস এই রায় ঘোষণা করেন। রায়ে যশোরের আলোচিত উদ্ভাবক মিজানুর রহমান মিজানসহ চারজনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেয় আদালত। রায়ে প্রত্যেক আসামিকে ২০ হাজার টাকা করে অর্থদন্ড, অনাদায়ে আরও তিন মাসের সশ্রম কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট আদালতের অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকটে আব্দুর রাজ্জাক।
দণ্ডপ্রাপ্ত মিজানুর রহমান মিজান শার্শা উপজেলার আমতলা গাতীপাড়া গ্রামের আক্কাস আলী মোড়লের ছেলে এবং নিহত প্রিন্সের আপন দুলাভাই। অন্য আসামিরা হলেন, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ভাটাডাঙ্গা গ্রামের গোলাম মণ্ডলের ছেলে ইকবাল হোসেন, বেনাপোল কাগজপুকুর গ্রামের কালু ওরফে ঘাড়কাটা কালুর ছেলে সেকেন্দার এবং একই গ্রামের আব্দুল করিমের ছেলে জসিম। রায়ের সময় আসামি মিজান ও সেকেন্দার আদালতে উপস্থিত ছিলেন। বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। অপর পলাতক দুই আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০০৪ সালের ২০ আগস্ট প্রিন্স মোটরসাইকেল নিয়ে নিজ বাড়ি পোড়াবাড়ি নারায়ণপুর গ্রাম থেকে বের হন। এরপর তিনি আর ফিরে আসেননি। স্বজনরা বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। পরদিন সকালে ছোট নিজামপুর গ্রামের একটি ধানক্ষেত থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
ঘটনার পর প্রিন্সের মামা বকতিয়ার অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে বেনাপোল পোর্ট থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। তিনি এজাহারে সন্দেহ প্রকাশ করেন যে, প্রিন্সের মোটরসাইকেলের প্রতি তার দুলাভাই মিজানের আগ্রহ ছিল। মামলাটি তদন্তের পর বেরিয়ে আসে পরিকল্পিতভাবে মোটরসাইকেল ছিনতাই করতেই প্রিন্সকে হত্যা করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আফজাল হোসেন ওই চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। দীর্ঘ ২১ বছর পর বহুল প্রতীক্ষিত এই মামলার রায়ে চার আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন বিচারক।
প্রসঙ্গত, আধুনিকতার এ যুগে সামান্য মোটর ম্যাকানিক থেকে একের পর এক যন্ত্র উদ্ভাবন করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন মিজান। মিজানের উদ্ভাবনী কাজের মধ্যে দেশীয় প্রযুক্তিতে অ্যাম্বুলেন্স, স্বয়ংক্রিয় সেচযন্ত্র, জ্বালানিসাশ্রয়ী পরিবেশবান্ধব যন্ত্র, যা “মিজান ইঞ্জিন” নামে পরিচিত।
স্থানীয় বাজারে মোটর ম্যাকানিকের কাজের পাশাপাশি একটি “ফ্রি খাবার বাড়ি” রয়েছে। এই খাবার বাড়িটি শার্শার শ্যামলাগাছী এলাকায় অবস্থিত। সেখানে সপ্তাহে ভবঘুরে, ভিক্ষুক, গরীব ও অসহায় মানুষের বিনামূল্যে খাবার সরবরাহ করতেন।