বাংলার ভোর প্রতিবেদক
দৈনিক বাংলার ভোর পত্রিকার কম্পিউটার বিভাগের ইনচার্জ আবু সাঈদ সাগরের রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া মাহফিল হয়েছে। বাংলার ভোর পরিবারের আয়োজনে শুক্রবার বিকেলে প্রেসক্লাব যশোরে এ দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। দোয়া মাহফিলের পূর্বে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় আবু সাঈদ সাগরের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন স্বজন, সহকর্মী ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।
বাংলার ভোর পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক সৈয়দ আবুল কালাম শামছুদ্দিন জ্যোতির সভাপতিত্ব যশোর সংবাদপত্র পরিষদেও সভাপতি ও দৈনিক কল্যাণ পত্রিকার সম্পাদক একরাম-উদ-দ্দৌলা বলেন, আমাদের প্রিয় সাগরের মৃত্যুতে আমরা যে কষ্ট পেয়েছি সে কষ্ট থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন। সাগর, শাওন তারা দুই ভাই যশোরের সংবাদপত্র জগতে কাজ করেছে। সাগর কাজ পাগল মানুষ ছিল। সে কম্পিউটার বিভাগে দক্ষতার সাথে কাজ করেছে। সাগর কোনো দিন ছুটি কাটাইনি। তার মা অসুস্থ ঢাকায় নিয়ে গেছে সকালে, সন্ধ্যায় এসে কাজ করেছে। হসপিটালে বসেও সে পত্রিকা বের করে চলে গেছে। তাকে অনেক বার বলেছি তার বিশ্রামের প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের কথা সে শুনেনি। হায়াত মৃত্যু সব আল্লাহর কাছে। তারপরও সে কথা শোনেনি। আজকে সাগরের কাছ থেকে আমাদের দায়িত্ববোধ শিক্ষা নিতে হবে। সাগরের মৃত্যুতে মুদ্রণ শিল্পে যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয়। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে অনেক সময় লাগবে।’
সভাপতির বক্তব্যে বাংলার ভোর পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক সৈয়দ আবুল কালাম শামছুদ্দিন জ্যোতি বলেন, সাগর আমার সাথে কাজ করেছে ২৬ বছর। অর্ধেক বয়সের বেশি সময় সাগর আমার সহকর্মী ছিলো। সংবাদপত্র জগৎতে সাগর কি ছিলো আমরা জানি। আমি মালিক হলে বলতে হবে সাগর নিজে আত্মহত্যা করেছে, সাগরের জায়গায় থাকলে বলতে হবে সাগরকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা কোনোদিন তাকে ছুটি দেইনি। আমি সাগরের ভাই হিসেবে তার পরিবারের পাশে সব সময় থাকবো। সাগরের জন্য আপনারা সবাই দোয়া করবেন।’
সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের সভাপতি আকরামুজ্জামান বলেন, সংবাদপত্রের সাথে জড়িতদের মৃত্যুর পর কেউ মনে রাখে না। সাগরের জানাযায় সর্বস্তরের মানুষ অংশ নিয়েছে। আমরা চাই আগামিতে এই ধারা অব্যহত থাকুক। প্রতি বছর সাগরের মৃত্যু বার্ষিকী পালন করা হোক।’
যশোর জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান মোর্শেদ বলেন, সাগরের সাথে আমার অনেক স্মৃতি আছে। এক সাথে দীর্ঘদিন কাজ করেছি। যশোরে আধুনিক মিডিয়ার যে কাজ, সেটা সাগর ভাইয়ের হাত দিয়ে হয়েছে। তিনি তার কাজের সুবাদে ঢাকায় অনেক দিন কাটিয়েছেন। তার পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানাচ্ছি।’
সাগরের ছেলে রাজিন মাহমুদ বলেন, আব্বা চলে যাওয়া আমার কাছে অনাকাঙ্খিত ছিল। তিনি কাজের ক্ষেত্রে কোনো অপোস করেনি। অসুস্থতা নিয়েও তিনি কাজ করেছেন। আমার বাবা এত দক্ষ ছিল, এত পরিশ্রমী ছিল আমি আগে জানলে নিজেকে সে ভাবে গড়ে তুলতে পারতাম। সবাই আমার বাবার জন্য দোয়া করবেন।’
সাগরের ভাই আবু সাআদ শাওন বলেন, জন্ম থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এমন কোনো কাজ নেই আমরা দুই ভাই এক সাথে করিনি। কোনো দিন যদি বেশি বকতাম সন্ধ্যায় অফিসের সামনে এসে বলত কই তুই? নিচে আয়। ক্ষুধা লেগেছে খাবো। দোকানদার টাকা চাইলে বলত আমার ভাই দাঁড়িয়ে আছে দেখছিস না? জমজ ভাই হারানোর কষ্ট, যার হারায় সেই জানে। আমি কি আর ফিরে পাবো আমার সেই ভাইকে।’
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাংবাদিক ইন্দ্রজিৎ রায়। আলোচনা সভা শেষে সাগরের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া মাহফিল পরিচালনা করেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা মুফতি কামরুল আনোয়ার নাইম।