কাজী নূর
দফায় দফায় বাড়ছে নিত্য পণ্যের বাজার। আগুনলাগা কাঁচা সবজির বাজার যেন তেঁতে উঠছে রোজ। সেই সঙ্গে লাফিয়ে বাড়ছে মাছ মুরগি ডিমের দাম। বাজারে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ মাছ। শুক্রবার যশোর শহরের বড় বাজার ও পুরাতন কসবা চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। বর্তমানে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ২২০০ টাকা, ৭শ’ থেকে ৮শ’ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৮শ’ টাকা, এক কেজি ওজনের ইলিশ মানভেদে ২ হাজার থেকে ২৬শ’ টাকা বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে ৫ পিসে এক কেজি এমন ইলিশের দাম ৭শ’ টাকা এবং ২ পিসে এক কেজি ইলিশ মাছ ১ হাজার ৫০০ টাকা কেজি। বড় বাজারের মাছ বিক্রেতা দিলীপ বিশ্বাস বলেন, আসলে বরিশাল, চাঁদপুরসহ বিভিন্ন মোকামে চাহিদার চেয়ে অনেক কম ইলিশ উঠছে। যার কারণে বেশি দামে মাল কিনতে হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে ভোক্তা পর্যায়ে এর প্রভাব পড়বে।
এদিকে, রুই মাছ ৩শ’, কাতলা ৪শ’, কই ২২০, পাঙাশ ২শ’, চিংড়ি ১ হাজার ১০০, বাটা ২৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া দেশি এবং চাষের অন্যান্য মাছের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। মাছ বিক্রেতা সন্তোষ বলেন, বছরে এই সময়টা এমনই যায়। বৃষ্টি হলে মাছ ধরা যায় না। আড়তে আমদানি কম হলে বাজারে এর তীব্র প্রভাব পড়ে। এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবসায়ী বলেন, স্থানীয় বাজারে পাবদা মাছের খুব চাহিদা থাকলেও তা পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে ভারতে। তিনি বলেন, শুধু মাছ নয়, যেকোন পণ্য দেশের চাহিদা মিটিয়ে অবশিষ্ট থাকলে তবেই সেটা রফতানি হওয়া উচিত। দেশের চাহিদাকে উপেক্ষা করে ঘের থেকেই পাবদা মাছ সোজা চলে যাচ্ছে ভারতে।
বড়বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে বেগুন ১৫০ টাকা, কাকরোল ৮০ টাকা, উচ্ছে ৮০ টাকা, ঢেঢ়স ৮০ টাকা, পুঁইশাক ৪০ টাকা, কলা মানভেদে ৬০ থেকে ৭০ টাকা, পটল ৭০ থেকে ৮০ টাকা, কচুরমুখী ৩০ টাকা, ধুন্দল ৪০ টাকা, লতি ৩০ টাকা (আটি), চাল কুমড়ো ৪০ টাকা (পিস), লাল সবুজ শাক ৩০ টাকা (আঁটি), ওল ৬০ টাকা, আমড়া ৪০ টাকা, কুমড়ো ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে এসব পণ্যের দাম কিছু ক্ষেত্রে অপরিবর্তিত এবং কিছু ওঠানামা করেছে। এছাড়া কাঁচা মরিচ মানভেদে ২০০ থেকে ২৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। তবে বর্তমান বাজারে সবচে সস্তা তরকারি পেঁপের দাম মানভেদে ২০ থেকে সর্বোচ্চ ২৫ টাকা কেজি। একমাত্র পেঁপেই আগুন লাগা সবজির যেন স্বস্তির বাতাস। এছাড়া পেয়াজ ৮০ টাকা, আলু ২০, রসুন ১২০, আদা মানভেদে ২০০ থেকে ২২০ কেজি বিক্রি হচ্ছে। খোলা সয়াবিন তেল ১৮০ টাকা কেজি, বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৯০ টাকা লিটার বিক্রি হচ্ছে। দেশি মসুরির ডাল ১৪০, ছোলার ডাল ১২০, মুগ ডাল ১৩০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
বারান্দী মোল্লাপাড়া থেকে আসা ক্রেতা আক্তার হোসেন জানান, জুতার দোকানে সামান্য বেতনে বিক্রয়কর্মীর চাকরি করি। যা বেতন পাই এ বাজারে পরিবার নিয়ে চলা কঠিন। বেজপাড়ার বাসিন্দা বেনাপোল বন্দরের সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী শেখ মিলন বলেন, সপ্তাহে একদিন বাজার করি। সবকিছুর দাম একটু বেশিই মনে হচ্ছে। কিন্তু কিছু করার নেই। খেয়ে তো বাঁচতে হবে।
তরকারি বিক্রেতা হানিফ বলেন, শুক্রবার হিসেবে আজকের বিক্রি বাট্টা আশানুরূপ নয়। একমাত্র কারণ তরকারির দাম বেশি। বাজারে ক্রেতার সংখ্যা কম। কেউ কেউ অল্প কিনছেন বা অন্য মাধ্যমে চাহিদা পূরণ করছেন।
মুরগি বাজার ঘুরে দেখা গেছে গত সপ্তাহের ব্যবধানে সব রকম মুরগি দাম স্থিতিশীল রয়েছে বর্তমানে ব্রয়লার জাতের মুরগি ১৮০, লেয়ার ৩২০, সোনালী ৩০০ এবং দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। সাদ্দাম ব্রয়লার হাউসের মালিক শেখ সাদ্দাম বলেন, যেসব ফার্মে পানি উঠেছিল তা নেমে যেতে শুরু করেছে। এবার মুরগীর দাম কিছুটা হলেও কমতে পারে।
চালের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সব রকম চালের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। বর্তমানে বাসমতি চাল ৮২ টাকা, মিনিকেট ৬৫, কাজল লতা ৬৬, নাজির শাইল ৮০, কাটারি ভোগ ৭৮, মোটা স্বর্ণা ৫৪, সুবল লতা ৫৮ এবং ২৮ জাতের চাল ৫৮ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। চাল ব্যবসায়ী আলী আনোয়ার শহীদ বলেন, আপাতত চালের বাজার এমন থাকবে বলে আশা করা যায়।
ডিমের পাইকারি দোকান শহরের বরফকল মোড়ের আনিস এন্টারপ্রাইজের পরিচালক আবদুল্লাহ বলেন, ডিমের বাজার আরো কিছুটা বৃদ্ধি পেতে পারে। বর্তমানে লাল ডিম ৪৪ টাকা হালি, সাদা ডিম ৪২ টাকা হালি, হাঁসের ডিম ৭২ টাকা হালি বিক্রি হচ্ছে। তবে পাইকারি হিসাবে এ দাম আরো কম পড়বে।