বাংলার ভোর প্রতিবেদক
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন বাঘারপাড়া উপজেলার বন্দবিলা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মনিরুজ্জামান তপন। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে দখলদারিত্ব, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, অসংখ্য হিন্দু বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাটসহ একের পর এক অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। সর্বশেষ, গত বুধবার তপনের নেতৃত্বে ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমানকে মারধর ও হামলার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় ৬নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুলকে বহিস্কার করা হয়েছে।
শনিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন উপজেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম।
এর আগে ২০২৪ সালের ২৬ আগস্ট তপনের নির্দেশে ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ফিরোজ বিশ্বাসকে মারপিট করে রক্তাক্ত জখম করা হয়। চিহ্নিত আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের পুনর্বাসনের প্রতিবাদ করায় এ হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক কবির হোসেন ও যুবদল নেতা নন্টু হোসেনকে বহিস্কার করে উপজেলা বিএনপি।
শুধু তাই নয়; দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে বন্দবিলা ইউনিয়ন পরিষদে তালা লাগানো, সেকেন্দারপুরে ইউপি সদস্য শেফালি রানী ও চাপাতলা গ্রামে বেশ কয়েকটি হিন্দু পরিবারে হামলা ও লুটপাট, ভাটার আমতলা বাজারে এক মুদি দোকানে তালা লাগানো, হাইকোর্টের রায় উপেক্ষা করে কঠুরাকান্দি গ্রামে জমি দখল, খাজুরা পল্লী বিদ্যুৎ সাব-স্টেশনের পাশে হিন্দু সম্প্রদায়ের মেহগনি বাগানের গাছ লুট, মির্জাপুর আদর্শ মহিলা কলেজ মাঠে এক যুবককে আটকে রেখে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে চাঁদা দাবি, সেকেন্দারপুরে এক হিন্দু বাড়িতে দু’লাখ টাকা দাবি, খাজুরা বাজার পাইপপট্টিতে দোকানঘর দখল ও চাঁদা আদায়, হাট ইজারাদারদের টাকা লুট ও চাঁদা আদায়, খাজুরা সরকারি কলেজের পুকুরের মাছ লুট, খাজুরা মাখনবালা বালিকা বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকের কাছে চাঁদা দাবিসহ লাগামহীন অপকর্ম করেছেন বিএনপি নেতা তপন ও তার সন্ত্রাসীবাহিনী। এ নিয়ে জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকে ফলাও করে সংবাদ প্রকাশিত হয়। তবে এসব ঘটনায় চুনোপুঁটিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হলেও বারবার ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছেন মূলহোতা মনিরুজ্জামান তপন। এতে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে চরম অসন্তোষ ও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, তপনের খুঁটির জোর কোথায়?
এদিকে, শুক্রবার রাতে তপনের বিরুদ্ধে নানা অপকর্ম তুলে ধরে জেলা ও উপজেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী আজিজুর রহমান।
অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেছেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে বন্দবিলা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মনিরুজ্জামান তপন লাগামহীনভাবে নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে মনিরুজ্জামান তপন ও তার সন্ত্রাসীবাহিনী বিভিন্ন সময়ে আমাকে হুমকি-ধামকি, গালিগালাজসহ প্রাণনাশের ভয় দেখিয়েছেন। গত ৩০ সেপ্টেম্বর আমিসহ ইউনিয়ন বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজা পরিদর্শনে যাই। পরদিন পহেলা অক্টোবর উপজেলা বিএনপির সভাপতি তানিয়া রহমান বন্দবিলা ইউনিয়নে পূজামণ্ডপ পরিদর্শনে আসবেন সেই লক্ষ্যে আমরা খাজুরা বাজার গরুহাট বটতলা চত্বরে অপেক্ষায় ছিলাম। তখন মনিরুজ্জামান তপন তার অনুমতি ছাড়া আগেরদিন পূজামণ্ডপ পরিদর্শনে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, যারা পূজা পরিদর্শনে গেছেন তাদের হাত-পা ভেঙ্গে দেয়া হবে।
একপর্যায়ে তপনের নির্দেশে ৬নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুলকে আমাকে মারপিট এবং লাঞ্ছিত করেন।
জানতে চাইলে অভিযুক্ত বন্দবিলা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মনিরুজ্জামান তপন বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হচ্ছে, সেটা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। পূজা মন্দিরে স্থানীয় নেতাকর্মীদের না জানিয়ে ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান একাই পরিদর্শনে যান। এতে নেতাকর্মীরা তার উপর ক্ষিপ্ত হন। এটা নিয়ে বাজারে কথাকাটাকাটি হয়। শেষে ধাক্কাধাক্কির পর্যায়ে যায়। কোনো হামলা বা মারধর করা হয়নি। এছাড়া দখলদারিত্ব, চাঁদাবাজি ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের উপর নির্যাতন, শালিশ বিচার করা এসব অভিযোগও ভিত্তিহীন।’
এদিকে, বাঘারপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি তানিয়া রহমানের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন বলেন, আমরা এখনো কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’