বাংলার ভোর প্রতিবেদক
এয়োদশ সংসদ নির্বাচনে যশোরের ৬টি সংসদীয় আসনের পাঁচটিতে একক প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। একটি আসন ফাঁকা রাখা হয়েছে। একক প্রার্থী মনোনীত হওয়ায় বিএনপির তৃণমূলে ঐক্যের সুর বইছে। চাঙা হয়েছে রাজনীতির মাঠ। দলীয় প্রার্থীর পাশাপাশি প্রাথমিক মনোনয়ন বঞ্চিত নেতারাও মাঠে রয়েছেন। চূড়ান্ত মনোনয়নের আশায় ভোটের মাঠে সরব থাকছেন তারা। ধানের শীষের পক্ষে কাজ করছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। সভা, সমাবেশ ও মিছিলে সবাই ঐক্যের বার্তা দিচ্ছেন। ফাঁকা আসন নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। এ আসন জোটের শরীক পাবেন নাকি শেষ মুহূর্তে দলের চমক প্রার্থীই পাবেন মনোনয়ন, সেটি নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে।
জানা যায়, যশোর-১ (শার্শা) আসনে বিএনপি মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য মফিকুল হাসান তৃপ্তি। তিনি ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। মনোনয়ন না পাওয়ায় হতাশ শার্শা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হাসান জহির, সাবেক সভাপতি খায়রুজ্জামান মধু, সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান লিটনের অনুসারীরা। চূড়ান্ত মনোনয়নের অপেক্ষায় দলের একাংশের নেতাকর্মীরা এখনো মাঠে নামেননি। তবে তারা শেষ পর্যন্ত ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষেই মাঠে থাকবেন।
জানতে চাইলে মনোনয়ন প্রত্যাশী ও শার্শা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হাসান জহির বলেন, মফিকুল হাসান তৃপ্তিকে দল প্রাথমিক মনোনয়ন দিয়েছেন। তার মনোনয়নের দলের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা খুশি নয়। তৃণমূলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা চায় বিগত ১৭ বছর হামলা, মামলা ও নির্যাতিত নেতাকে মনোনীত করা হোক। এজন্য তৃণমূলের নেতাকর্মীদের এখনো স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটের মাঠে নামানো সম্ভব হয়নি। আমরা দল করি, প্রার্থী চূড়ান্ত হলে মনে কষ্ট থাকলেও ধানের শীষের পক্ষেই সবাই কাজ করবো।’ জানতে চাইলে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মফিকুল হাসান তৃপ্তি বলেন, মনোনীত প্রার্থী হিসেবে আমাকে পেয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা উচ্ছ্বসিত। তাদের অভাবনীয় সাড়া পাচ্ছি। দীর্ঘদিন মানুষ হামলা, মামলা নির্যাতনে অতিষ্ঠ ছিল। তারা নির্বাচনের জন্য মুখিয়ে রয়েছে। বিএনপি দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করায় ভোটারদের মাঝে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। তৃণমূলের মানুষ আমাকে আন্তরিকতার সাথে স্বাগত জানাচ্ছে।’
যশোর-২ (ঝিকরগাছা-চৌগাছা) আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সাবিরা সুলতানা মুন্নী। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই মাঠের রাজনীতিতে রয়েছেন। ভোটের মাঠে তার নিজস্ব বলয় রয়েছে। মনোনয়ন পাওয়ার পর পুরোদমে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে পড়েছেন তিনি। তার সঙ্গে একই মঞ্চে দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন মনোনয়ন বঞ্চিত অন্য নেতারাও।
এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী যশোর চেম্বার অব কমার্স অ্যাণ্ড ইণ্ডাস্ট্রিজের সভাপতি ও জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খান, চৌগাছা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জহুরুল ইসলাম ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থী সাবিরা সুলতানা মুন্নীকে একই মঞ্চে কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে। তারা একই কর্মসূচিতে ঐক্যবদ্ধভাবে ধানের শীষের পক্ষে জনমত গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন।
জানতে চাইলে চৌগাছা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি জহুরুল ইসলাম বলেন, দল একজনকে প্রাথমিক মনোনয়ন দিয়েছে। আমরা সবাই ধানের শীষের পক্ষে ভোটের মাঠে কাজ করছি। কেন্দ্রীয় কর্মসূচি সবাই একসাথে সফল করছি। পাশাপাশি যার যার মত গণসংযোগ করছি। প্রাথমিক মনোনয়ন না পেলেও মাঠ ছেড়ে যাইনি।’
যশোর-৩ (সদর) আসনের বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের ছেলে বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। তিনি একমাত্র মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকায় এই আসনে কোন কোন্দল নেই। অমিতকে ঘিরে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছেন।
যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর ও বসুন্দিয়া ইউনিয়ন) আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন কৃষকদলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুব। মনোনয়ন পেয়ে তিনি জোরেশোরে নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে নেমে পড়েছেন। এই আসনে আরও দুইজন মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। তাদের একজন ঢাকা মহানগরের (দক্ষিণ) যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নূরে আলম সিদ্দিকী সোহাগ মনোনয়ন না পেলেও টিএস আইয়ুবের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। তারা একই সঙ্গে একাধিক কর্মসূচিও পালন করেছেন। তবে আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ও অভয়নগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফারাজী মতিয়ার রহমানকে দল মনোনীত প্রার্থীর সঙ্গে কর্মসূচিতে দেখা যায়নি। তিনি নিজের মত ধানের শীষের পক্ষে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।
জানতে চাইলে নূরে আলম সিদ্দিকী সোহাগ বলেন, দলের সিদ্ধান্ত মেনেই ধানের শীষের পক্ষে কাজ করছি। মনোনীত প্রার্থী টিএস আইয়ুব ভাই আমাকে ফোন করেছিলেন। আমি তার সঙ্গে দেখা করেছি। আমরা এক সঙ্গে একাধিক প্রোগ্রাম করেছি।’
যশোর-৫ (মণিরামপুর) আসনে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেনি। এই আসন জোটের শরিক দলের জন্য ছেড়ে দেয়া হবে, নাকি শেষ মুহূর্তে দলের কোন চমক থাকছে, সেটি পরিস্কার নয়। গুঞ্জন রয়েছে জোটের শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহকারী মহাসচিব ও এই আসনের সাবেক এমপি, সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মুফতি ওয়াক্কাসের ছেলে মাওলানা রশিদ আহমাদকে এই আসনটি ছেড়ে দেয়া হবে। তবে এখনো হাল ছাড়েনি বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। তারা ধানের শীষের পক্ষে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।
যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ। তরুণ এই নেতাকে মনোনয়ন দেয়ায় তৃণমূলে নতুন বার্তা গেছে। প্রায় একযুগ পরে এলাকায় ফিরে গণসংযোগ শুরু করেছেন তিনি। তার মনোনয়নকে চমক হিসেবেই দেখছেন নেতাকর্মীরা। এই আসনের দুজন শক্তিশালী প্রার্থী বিএনপির কেন্দ্রীয় সহধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু ও কেশবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য আবুল হোসেন আজাদ মনোনয়ন না পাওয়ায় তাদের অনুসারীরা হতাশ। তাদের মনে কষ্ট থাকলেও দল মনোনীত প্রার্থীর সঙ্গেই দলীয় ও জাতীয় কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন অমলেন্দু দাস অপু ও আবুল হোসেন আজাদ। তারা তৃণমূলে বার্তা দিচ্ছেন দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
জানতে চাইলে বিএনপির সহধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু বলেন, দলের প্রাথমিক মনোনয়ন ঘোষণার আগে অনেকেই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবের ফোন পেয়েছিলেন। তাদের অনেকেই প্রাথমিক মনোনয়ন পাননি। প্রার্থী ঘোষণার সময় দলের মহাসচিব বলেছেন, এটা প্রাথমিক মনোনয়ন। তাই চূড়ান্ত মনোনয়নের ব্যাপারে আশাবাদী। দলের পক্ষে ভোটের মাঠে কাজ করছি। দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে।’

