বাংলার ভোর প্রতিবেদক
আবারও যশোরে শুরু হয়েছে ডেভিল হান্ট। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও ফ্যাসিস্টদের দমনে গত সোমবার রাত থেকে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২’ নামে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে যৌথ বাহিনী।
গত দুই দিনের অভিযানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতাসহ অন্তত ৩৮ জনকে আটক করে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। যশোর জেলা পুলিশ সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
এদিকে তফশিল ঘোষণার পরে আইনশৃঙ্খলা অবনতি সৃষ্টির লক্ষ্যে সম্প্রতি কার্যক্রম নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা যশোরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অস্থিরতা সৃষ্টি করছিলেন। আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীরা তাদের কর্মীদের নানা কর্মকান্ড করার উসকানিমূলক দিচ্ছিলেন।
হঠাৎ যশোরে ডেভিল হান্ট পরিচালনা করায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে গ্রেফতার আতংক সৃষ্টি হয়েছে। এতদিন যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উসকানি দিচ্ছিলেন; তাদের অনেকেরই নিরবতা লক্ষ্য করা গেছে।
জেলা পুলিশের একটি সূত্র বলছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থী শরিফ ওসমান বিন হাদি ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর গত শনিবার আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোর কমিটির সভায় জাতীয় নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিতে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করাসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং ‘ফ্যাসিস্টদের’ দমনে এ অভিযান শুরু করার সিদ্ধান্ত হয়।
সে অনুযায়ী সোমবার থেকে পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট ও সেনাবাহিনী ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২’ নামের বিশেষ অভিযান শুরু করে। অভিযানের অংশ হিসাবে সোমবার ও মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ২৪ নেতাকর্মী আটক হয়েছে। এর মধ্যে মঙ্গলবার রাতে ডিবি পুলিশ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের আরও পাঁচ নেতাকর্মীকে আটক করে।
আরও পড়ুন .. .. নির্বাচন কমিশনকে বৃদ্ধাঙ্গুল : সাতক্ষীরায় ধানের শীষের প্রচারণায় প্রার্থী কাজী আলাউদ্দিন
সাইবার ইনভেস্টিগেশন সেলের সহযোগিতায় তাদের আটক করে কোতোয়ালি থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করলে তারা আদালতে পাঠায়। বুধবার আদালতের বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিবির ওসি মোহাম্মদ আলী। আটকরা হলেন, যশোর সদর উপজেলার ভেকুটিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও ৯ নম্বর আরবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মুকুল, যশোর সদর উপজেলা যুবলীগের কার্যনির্বাহী সদস্য পাকদিয়া গ্রামের হোসেন আলী, চাঁচড়া রায়পাড়ার বাসিন্দা ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মফিজুর রহমান, মণিরামপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দুর্গাপুর গ্রামের সাইফুর রহমান অভি ও চাঁচড়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আলতাফ হোসেন।
ডিবির অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আলী জানান, অপরাধীদের ধরতে তাদের এই বিশেষ অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এর আগে সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত জেলাজুড়ে অভিযান চালিয়ে ১৯ জনকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আটকরা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মী।
মঙ্গলবার বিকেলে আটকদের বিভিন্ন নাশকতার মামলায় আটক দেখিয়ে আদালতে সোর্পদ করলে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। ডিবির বিশেষ অভিযানে বাবুল গাজীকে আটক করা হয়েছে। তিনি জেলা শ্রমিক লীগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক। সোমবার রাতে কাজীপাড়া কাঠালতলা এলাকার নিজ বাড়ি থেকে তাকে আটক করা হয়।
তাকে যুবলীগের বিক্ষোভ মিছিলের ব্যানার তৈরির মামলায় আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। রাতে ডিবির আরেকটি দল সার্কিট হাউজ এলাকার নিজ বাড়ি থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শরীফ আব্দুল্লাহ আল মারুফ পিয়াল ও তার ভাই যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শরীফ আব্দুল্লাহ আল মাসুদ হিমেলকে আটক করে।
ডিবির পৃথক আরেকটি দল সদর উপজেলার কৃষ্ণবাটি গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে যুবলীগের আলী হোসেনকে আটক করে। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বালিয়াডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্রে বোমা হামলার ঘটনার মামলায় আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। একই মামলায় পুরাতন কসবার জিল্লু ফরাজিকে রাতে চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে আটক করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। পৃথক টিম যশোরের কিশোর গ্যাং চক্রের অন্যতম সদস্য ও পাঁচ মামলার আসামি স্টেডিয়ামপাড়ার অমিত হাসানকে আটক করেছে।
তাকে স্টেডিয়ামপাড়ায় গত আগস্টে এক বাড়িতে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনার মামলায় আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। যশোর ডিবির এসআই অলোক কুমার দে’র নেতৃত্বে একটি দল চৌগাছার সলুয়া পূর্বপাড়ার নিজ বাড়ি থেকে স্থানীয় ইউপি সদস্য উজ্জ্বল হোসেনকে আটক করেছে। পরে তাকে যশোরে বিএনপির পার্টি অফিস পোড়ানোর মামলায় আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। ডিবি পুলিশ রাতভর অভিযান চালিয়ে সকালে আটক আসামিদের কোতোয়ালি থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করে।
মঙ্গলবার রাতে দ্বিতীয় ধাপের অভিযানের অংশ হিসেবে ডিবি পুলিশ সাইবার ইনভেস্টিগেশন সেলের সহযোগিতায় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের আরও ২০ জন নেতাকর্মীকে আটক করে। আটকদের মধ্যে রয়েছেন, ০৯ নম্বর আরবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মুকুল, যশোর সদর উপজেলা যুবলীগের কার্যনির্বাহী সদস্য হোসেন আলী, ৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মফিজুর রহমান, মনিরামপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুর রহমান অভি, চাঁচড়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আলতাফ হোসেনসহ আরও অনেকে।
যশোর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আবুল বাশার বলেন, ‘আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। অভিযানে আওয়ামী লীগে বিভিন্ন স্তরের নেতৃবৃন্দ আটক হয়েছে। আটকদের বিভিন্ন মামলায় আটক দেখিয়ে আদালতে পাঠালে বিচারক তাদের কারাগারে প্রেরণ করে।’ তিনি বলেন, গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) (সংশোধন) আইন, ২০১৯, দ্য পেনাল কোড, ১৮৬০, সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯ এবং দি এক্সপ্লোসিভ সাবস্ট্যান্সেস অ্যাক্ট, ১৯০৮-এর বিভিন্ন ধারায় একাধিক মামলা রয়েছে।
মামলাগুলোতে সংঘবদ্ধ সহিংসতা, হামলা, মারধর, গুরুতর জখম, হত্যাচেষ্টা, ভয়ভীতি প্রদর্শন, চাঁদাবাজি, বিস্ফোরক দ্রব্য সংক্রান্ত অপরাধসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।
আটক ৩৮ জনকেই বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে মঙ্গলবার ও বুধবার দুপুরে যশোর আদালতে সোপর্দ করলে বিচারক তাদের সকলকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

