বাংলার ভোর প্রতিবেদক:
যশোর শহরের দড়াটানা হাসপাতাল মোড় থেকে ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের প্রধান ফটকস্থ সড়ক। খুবই ব্যস্ততম এই সড়ক ব্যবহারকারীদের জন্য শনিবার ছিলো বিস্ময়ের! সকল থেকেই দখলমুক্ত ফুটপাত। ছিল না ফুটপাতের অবৈধ দখলদাররা। সড়কে নেই অযথা কোন রিকসা ইজিবাইক, অ্যাম্বুলেন্স। যে কারণে সড়কের বুকটাও যেন বেশ অনেকটা চওড়া। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নিত্যদিনের যানজটের ভোগান্তির নাকালের সড়কে এদিন এমন পরিবর্তনের কারণ যশোরের পুলিশ সুপারের হাসপাতালে আগমন। হাসপাতালে পুলিশ সুপারের চিকিৎসা নিতে আসাকে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই হাসপাতাল এলাকা যানজটমুক্ত রাখে জেলা ট্রাফিক বিভাগ। অবশ্য এ পরিবর্তন ছিলো সাময়িক। পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার চিকিৎসা গ্রহণ শেষ করে হাসপাতাল ত্যাগের সঙ্গেই সড়কটি ফিরে চিরচেনা রূপে।


জানা যায়, সপ্তাহখানেক ধরে পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ার্দার চোখ উঠা বা কন্জাঙ্কটিভাইটিস চোখের ভাইরাসজনিত ইনফেকশনে ভোগছেন। রোগের চিকিৎসা নিতে শনিবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে যশোর জেনারেল হাসপাতালের কমিউনিটি আই সেন্টারের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে আসেন। চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল ত্যাগ করেন সাড়ে ১২ টার দিকে। তার আগমন উপলক্ষে সকাল থেকে নড়েচড়ে বসে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও জেলা ট্রাফিক বিভাগ। পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে হাসপাতাল পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে দায়িত্বপালন করতে দেখা যায় ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের। দড়াটানা হাসপাতাল মোড় থেকে কয়েক গজ দূরে দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের। অন্যদিন দড়াটানা মোড় থেকে জেনারেল হাসপাতাল প্রধান ফটক পর্যন্ত ফুটপাতের অবৈধ দখলদাররা দখল করে রাখেন। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ফল ও চায়ের দোকান দিয়ে থাকেন। রোগী নিতে দাঁড়িয়ে থাকেন ইজিবাইক ও রিকসাচালকেরা। হাসপাতালের ভিতরে অবস্থান করে ইজিবাইক ও ব্যক্তিমালিকানার বিভিন্ন অ্যাম্বুলেন্স। অথচ এদিন সকাল থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সড়কটিতে অবৈধ দখলদারদের দেখা যায়নি। দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়নি কোন ইজিবাইক রিকসা চালকদের। কিন্তু এসপির চিকিৎসা শেষ করে হাসপাতাল ত্যাগ করার সঙ্গে সঙ্গেই চিরচেনা যানজট দেখা গেছে। সড়কের ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করে বিভিন্ন ফল ও চা দোকানিরা। সড়কের এক পাশে ইজিবাইক, অ্যাম্বুলেন্স রিকসা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
হাসপাতালের প্রধান ফটকের সড়কে ভ্যানের উপর ফল বিক্রি করেন রাজ্জাক গাজী। তিনি বলেন, ‘আজকে আমাদের ব্যবসা বন্ধ। সকালে ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট স্যার বলে গেছে আজ এখানে কোন ভ্যান দাঁড়াবে না। পুলিশ সুপার স্যার আসবেন। আপনারা এখান থেকে যান। পরে আবার আসবেন।’

হিরা নামে এক চা দোকানী বলেন, ‘আজকে আমাদের মেন গেটের সামনে দোকান বসাতে দেয়নি। শুনলাম হাসপাতালে কোন ভিআইপি আসছেন। পুলিশ আর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলে গেছে, আজকে কোন জ্যাম লাগানো যাবে না। তোমার দোকান বন্ধ করে এই জায়গা ক্লিয়ার করো। তার পর দোকান নিয়ে গেছি পাশের নওয়াপাড়া সড়কে।’
হাসপাতালের সামনে নাম না প্রকাশে এক ওষুধ দোকানী বলেন, ‘আজকে সকাল থেকে হাসপাতালের গেট থেকে শুরু করে দড়াটানা মোড় আর হাসপাতাল গেট থেকে জরুরি বিভাগ পর্যন্ত ফকফকা রাস্তা ছিলো। পরিস্থিতি দেখে সকালেই বুঝে গেছি। এমপি মন্ত্রী বা ভিআইপি আসবে। তিনি জানান, পরে শুনি এসপি এসেছে। এসপি যাওয়ার পরে আবার চিরচেনা জ্যাম দেখা গেছে। সড়কটা যদি সব সময় যানজটমুক্ত থাকতো তাহলে রোগীদের জন্য ভালো হতো।’

এনজিও কর্মকর্তা নুরুজ্জামান বলেন, ‘প্রতিদিন হাসপাতাল চত্বরে ও হাসপাতালের সামনের সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। মূলত দুইপাশের অবৈধ ফুটপাত দখলদারের জন্য এমনটি হয়। তার পরেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও ট্রাফিক বিভাগের উদাসীনতার জন্য এমনটি হয়। যানজটের কারণে রোগী ও স্বজনরা ভোগান্তিতে পড়েন।’

হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনে হাসপাতালের দায়িত্বরত ট্রাফিক সদস্য বলেন, ‘আজকে এসপি স্যার আসবে। রিকসা একটাও ভিতরে ঢুকাতে দিচ্ছি না। গেটেই যাত্রী নামিয়ে দিচ্ছি। শুধুমাত্র রোগীবাহী গাড়িগুলো প্রবেশ করতে দিচ্ছি’।
যশোরের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘এসপি স্যার হাসপাতালে যাবেন বলে যানজট উচ্ছেদ করা হয়নি। ওটা আমাদের নিয়মিত কাজ ছিলো। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হাসপাতাল চত্বর আমরা ছেড়ে চলে আসার পরে পূর্বের অবস্থায় ফিরেছিলো এটা সত্য। ওখানে যানজট নিরসনের জন্য এবার থেকে আমরা নতুন করে পরিকল্পনা নিবো।’

হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, ‘এসপি মহোদয়ের চোখের চিকিৎসার জন্য তিনি হাসপাতালে এসেছিলেন। ঘন্টা দেড়েক সময় হাসপাতালে অবস্থান শেষে তিনি হাসপাতাল ত্যাগ করেন। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের সামনে যানজট নিরাসনের জন্য কাজ করছি। অভিযান চালালে কিছুক্ষণ ভালো থাকে। কিছুক্ষণ পর আবারও তারা ফিরে আসে। যানজট নিয়ে আমরাও বিরক্ত। এটা সমাধানে দ্রুতই কঠোর অবস্থানে আসবো।’

Share.
Leave A Reply Cancel Reply
Exit mobile version