খুলনা অফিস

খুলনার পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেডের ডিপোগুলোর ডেলিভারি পয়েন্টে ট্যাংকলরি ড্রাইভার, হেলপার ও মিটারম্যানদের চাপ প্রয়োগ করে জোরপূর্বক তেল আদায়ের অভিযোগ উঠেছে খুলনার আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ফরহাদ হোসেনের বিরুদ্ধে। তিনি তার ব্যবহৃত শটগান ব্যবহার করে এ ভয়ভীতি দেখাতেন।

নগরীর খালিশপুর থানার ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য এবং বাংলাদেশ ট্যাংকলরি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের খুলনা বিভাগীয় কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ ফরহাদ হোসেন। এ ঘটনায় খুলনায় আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনার পর গত ২৯ মে লাইসেন্সকৃত বন্দুক দিয়ে ভয়-ভীতি প্রদর্শনের বিষয়ে প্রশাসন থেকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়া হয় ফরহাদ হোসেনকে। গত ২ জুলাই তিনি কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দিলে সেটা সন্তোষজনক না হওয়ায় তার লাইসেন্সটি বাতিল করে নিকটস্থ থানায় বন্দুক জমা দেয়ার নির্দেশ দেন খুলনা জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার ইয়াসির আরেফীন।

এর আগে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান এবিএম আজাদ ২০২৩ সালের ১৭ অক্টোবর জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিবের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। অভিযোগে খুলনা বিভাগে জ্বালানি তেল সরবরাহে প্রায়শ বিঘ্ন সৃষ্টিকারী শেখ ফরহাদ হোসেনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ৮টি অভিযোগ দাখিল করা হয়। এ সময় ফরহাদের অস্ত্রের বিষয়টিও উপস্থাপন করা হয়েছিল।

এ ঘটনার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আশাফুর রহমান ২০২৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর পুলিশ মহাপরিদর্শকের নিকট তিনটি ডিপো থেকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক তেল আদায় এবং ডিপোর ডিএসদের কাছে মাসিক মোটা অংকের চাঁদা আদায়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে লাইসেন্স বাতিলের জন্য আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে চিঠি দেন। এসব ঘটনার পর পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন এবং আনুষঙ্গিক তথ্য ও দলিলাদি পর্যালোচনা করেই শেখ ফরহাদ হোসেনের একনলা বন্দুক, যা শটগানের লাইসেন্স বাতিল এবং লাইসেন্সে লিপিবদ্ধকৃত অস্ত্রটি সরকারের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হয়।

এ ঘটনার পর খুলনার তেল ডিপোগুলোতে অনুসন্ধান করলে জানা যায়, খালিশপুর থানার ৭নং ওয়ার্ড এলাকায় পদ্মা, মেঘনা এবং যমুনা তেলের ডিপো অবস্থিত। শেখ ফরহাদ হোসেন ওই এলাকার মরহুম আকমান হোসেনের ছেলে। স্থানীয় বাসিন্দা, ট্যাংকলরি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতা এবং আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে তার আধিপত্য ছিল। এরপর লাইসেন্সকৃত অস্ত্র থাকায় তার প্রভাব আরও বেড়ে যায়। বিভিন্ন সময় তিনি ডিপোগুলোতে লাইসেন্সধারী শটগান নিয়ে ঘুরতেন এবং ভয়ভীতি দেখাতেন।

এ ঘটনায় নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকেই স্বীকার করেছেন। তারাই বাধ্য হয়ে লিখিতভাবে ফরহাদ হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন। তার বন্দুকের লাইসেন্স বাতিল হওয়ায় অত্র এলাকায় কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে।
নগরীর ৭নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য মো. জিয়াউর রহমান জানান, ফরহাদ হোসেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ১নং সদস্য পদে আছেন। তিনি মূলত রাজনৈতিক নেতা নন।

আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ফরহাদ হোসেন এ বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে অস্বীকার করে বলেন, জেলা প্রশাসকের কোনো চিঠি তিনি পাননি। অথচ খালিশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন রোববার দুপুরে নিশ্চিত করেন, ব্যবসায়ী ফরহাদ হোসেন জেলা প্রশাসকের নির্দেশে থানায় অস্ত্র জমা দিয়েছেন।

খুলনা জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খন্দকার ইয়াসির আরেফীন বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ফরহাদ হোসেনের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। মূলত বিপিসি থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করার পর সেটা তদন্ত করা হয়। এরপর তার লাইসেন্স বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। চলতি মাসের শুরুতেই তার লাইসেন্স বাতিল করে চিঠি ইস্যু করা হয়েছে।

Share.
Leave A Reply Cancel Reply
Exit mobile version