ঝিকরগাছা সংবাদদাতা
যশোরের ঝিকরগাছা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে চাঞ্চল্যকর জাল-জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়েছে। ঝিকরগাছা শ্রমজীবী সমবায় সমিতির জমি বিক্রিতে জাণিয়াতির অভিযোগে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ভুপালী সরকার জেলা প্রশাসকের নির্দেশে তদন্ত করতে গিয়ে জালিয়াত চক্রের মূলহোতা দলিল লেখক (মহরার) মনসুর আলীকে (৬০) আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছেন।
এ সময় আটক মনসুর আলীর হেফাজত থেকে ‘‘ঝিকরগাছা শ্রমজীবী সমবায় সমিতির” সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সমিতির লোগো সম্বলিত মোট তিনটি সিল উদ্ধার করা হয়। মনসুর আলী মহরার লাইসেন্স নং ৪২। এ সময় অন্য অভিযুক্তরা সুযোগ বুঝে পালিয়ে যান।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে ঝিকরগাছা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের অনিয়ম- দুর্নীতির চলে আসছে এমন অভিযোগে বুধবার দুপুরে আকস্মিক তদন্তে যান উপজেলা নির্বাহী অফিসার। অভিযান চলাকালে অভিযুক্ত মহরার সন্তোষ সরকার ও তার সহযোগী হাফিজুর রহমান, কম্পিউটার অপারেটর গাঢাকা দেন। এছাড়া জাল দলিলের রেজিস্ট্রি সম্পাদনকারী সাব-রেজিস্টার মোহাম্মদ শাহিন আলম এদিন মণিরামপুরে ছিলেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানিয়েছেন, অভিযুক্ত ব্যক্তি একটি অনিবন্ধিত সমবায় সমিতির নামে নিজ হাতে লিখিত ভুয়া রেজুলেশন তৈরি করে এবং রেজুলেশনে সভাপতি ও সম্পাদকের পদ-পদবি অস্পষ্টতা থাকলেও নামজারির আবেদন করার ঘটনা প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে।
এই ঘটনায় সৃষ্ট দলিলের দাতা, গ্রহীতা, সাক্ষী ও সনাক্তকারীসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ঝিকরগাছা সদর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা পারভিন আক্তারকে নিয়মিত মামলা দায়েরের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, অতিসম্প্রতি বহুলোলোচিত একটি সরকারি খাসজমি (ঝিকরগাছা ১ নং ওয়ার্ডের ২নং কলোনির ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের অধিগ্রহণকৃত সম্পত্তি) ঝিকরগাছা শ্রমজীবী সমবায় সমিতির মালিকানা দেখিয়ে ঝিকরগাছা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রেশন সম্পাদিত হয় বলে অভিযোগ করেছেন রফিকুল ইসলাম।
উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অভিযান চলাকালে এ সময় তার সাথে সরকারি কর্মকর্তা, সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী, নকল নবিশ, দলিল লেখক সমিতির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও মহরারসহ গণমাধ্যম কর্মীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। তদন্ত চলাকালে ঝিকরগাছা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক সমিতির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আব্দুল আজিজ, মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, শরিফুল হাসান, শেখ মো. জহুরুল ইসলাম, মহিদুল ইসলাম, সোহরাব হোসেন, মোহাম্মদ খাইরুল ইসলাম, শওকত আলী, তৌহিদুর রহমানসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ঝিকরগাছা সহকারী কমিশনার ভূমি নাভিদ সারওয়ার অন্যের দলিল নম্বর ব্যবহার করে নতুন দাতা ও গ্রহীতা সাজিয়ে নকল দলিলে এক একর ১৯ শতক জমি নামপত্তন করতে দেয়া গ্রহীতার বাড়িতে তদন্তে ছিলেন। এছাড়া ভূমি সহকারী পারভীনা আক্তার বাদী হয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে থানায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।