সুমন ব্রহ্ম, ডুমুরিয়া থেকে
অতিবৃষ্টিতে বিল ডাকাতিয়াসহ ডুমুরিয়া উপজেলার অধিকাংশ বিল-খাল রাস্তাঘাট ও বাড়ি-ঘরে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা। গত ৩ মাসেও তেমন কোনো উন্নতি নেই। টাকার অভাবে জলনিস্কাশন অনিশ্চিত হওয়ায় আসন্ন বোরো চাষ হুমকির মুখে পড়েছে।
জলাবদ্ধতায় মানুষ ও নিস্কাশন কাজে জড়িত প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জলাবদ্ধতায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ বিল ডাকাতিয়া অঞ্চলের শ’ শ’ মানুষ প্রায় ৩ মাস আগে পানি নামানোর প্রধান-পথ ১০ ভেন্টের শোলমারি স্লুইস গেট’র খালে জমা পলি অপসারণ কাজে নেমে পড়েন।
এভাবে অনেক চেষ্টার পরও আশানুরূপ ফল না পাওয়ায় ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের উদ্যোগে ২টি ভাসমান স্কেভেট দিয়ে প্রায় ১ মাস ধরে ওই খালের পলি অপসারণের পরও বিলেগুলোর ভেড়ি-বাঁধ জাগাতো দূরের কথা মানুষের বাড়ি-ঘর থেকেও পানি সরেনি। তখন ডুমুরিয়া উপজেলা প্রশাসন বোরো চাষের লক্ষ্যে খুলনা কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন(বিএডিসি)’র মাধ্যামে ছোট-ছোট বিলগুলো থেকে জরুরি ভিত্তিতে উচ্চ ক্ষমতার বৈদ্যুতিক সেচ-পাম্প বসানোর উদ্যোগ নেন।
খুলনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বললো, ডুমুরিয়ার অন্য-বিলে ধান চাষের জন্য ৫.২৫ টাকা রেট(দাম) থাকলেও বর্তমানে পানি নিস্কাশনের জন্য ৯.৭১ টাকা রেট দিতে হবে। দর কষাকষি ও ডিমান্ড নোটের টাকা কে দেবে, এসব নিয়ে ‘উপজেলা-পল্লী বিদ্যুৎ-বিএডিসি’ প্রশাসনের মধ্যে প্রায় ২০ দিন ধরে চিঠি চালাচালি শেষে ৯.৭১ টাকা দরে ডুমরিয়া উপজেলা সদরে সষ্টিতলা গেটে ১টি, নর্ণিয়া বিলে ২টি, সিংগা বিলে ৪টি পাম্পে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হয়। তবে অনুমদিত ৯টি সেচ-পাম্পের ৭টিতে সংযোগ দেওয়া হলেও ডুমুরিয়া ফায়ার সার্ভিসের পেছনে গোলনা খালে ২টি পাম্পে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য ৯ লাখ টাকা প্রয়োজন। সেই টাকার কোনো ব্যবস্থা না হওয়ায় আজও বিদ্যুৎ সংযোগ হয়নি।
এ প্রসঙ্গে ষষ্টিতলা গেট এলাকার মাহাবুর রহমান বলেন, গেট দিয়ে কোনো পানি না নামলেও সেচ-পাম্প দিয়ে এ পর্যন্ত ৫০ ঘন্টা পানি নেমেছে। আর প্রতি ঘন্টায় বিল থেকে প্রায় ১ ইঞ্চি পরিমান পানি কমছে। খর্ণিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শেখ দিদারুল হোসেন দিদার বলেন, সিংগা গেট দিয়ে ভাটার সময় সরছে। আর ৪টি সেচ-পাম্প দিয়ে পানি সরায় আশা করছি বোরো চাষ সম্ভব হবে। আটলিয়া ইউনিয়নের নর্ণিয়া এলাকার সদস্য আবদুস ছালাম বলেন, নর্ণিয়া গেটে ২টি পাম্পের মধ্যে ১টি দিয়ে পানি বের হচ্ছে।
উপজেলার বিভিন্ন বিলে ৭টি সেচ-পাম্প চালু হলেও ডুমুরিয়া ও খর্ণিয়া ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি বিলের পানি নিষ্কাশনের জন্য গোলনা খালে ২টি পাম্প-মেশিন এখনো কেনো চালু হলো না, জানতে চাইলে খুলনা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডুমুরিয়াস্থ ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী কাজী রমজান আলী বলেন, গোলনার স্পটে সংযোগ দেয়ার জন্য প্রায় ১ কিলোমিটার লাইন নির্মাণ করতে ৮ লাখ ৯৬ হাজার ৫১৪ টাকা প্রয়োজন।
এ-নিয়ে গত ৬ নভেম্বর খুলনা বিএডিসিকে লিখেছি। কিন্তু আজাবধি কোনো সাড়া পাইনি বলে কাজও হয়নি। তবে বিএডিসি খুলনা’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জামাল ফারুক বলেন, আমি জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলতে যাচ্ছি। আমরা বিদে্যুতের এতো বেশি দাম দিচ্ছি, সেখানে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ২৫ কেভি’র ৩টি ট্রান্সফরমার দিলে গোলনার সমস্যার আশু সমাধান হতো।
ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আল-আমিন বলেন, বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার আগ পর্যন্ত খরচ বহন করবে বিএডিসি। তবে কৃষক বিদ্যুতের দাম দিবে। আশা করছি একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে।