বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোর সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের ব্যবস্থাপনা কর্তৃত্ব হারালো টেকসিটি বাংলাদেশ লিমিটেড; সেই সঙ্গে বাতিল করা হয়েছে বিনিয়োগকারীদের বরাদ্দকৃত স্পেস। এ দিকে টেকসিটির সহযোগী প্রতিষ্ঠান খান প্রোপার্টিজ তিন তারকা বিশিষ্ট হোটেল এণ্ড রিসোর্টের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে। গত শনিবার টেকসিটি হাইটেক পার্ক অথরিটির প্রতিনিধির কাছে সবকিছু বুঝিয়ে দিয়েছে। এ চুক্তি বাতিলের ফলে বিনিয়োগকারীদের বরাদ্দও বাতিল হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গত ২৭ মার্চ বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক অথরিটি-১ পরিচালক (অর্থ ও প্রশাসন) এস এম ফরিদ উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক স্মারকে এ চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। ওই স্মারকে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ দেশে হাইটেক শিল্পের বিকাশ ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্যে ২০১৭ সালে যশোরে ১২ দশমিক ১৩ একর জমিতে অত্যাধুনিক সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক নির্মাণ করে। আন্তর্জাতিক মানের বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে পার্কটিতে ১৫ তলা বিশিষ্ট এমটিবি ভবন ও ১২ তলা বিশিষ্ট ডরমিটরি ভবন এবং তিনতলা বিশিষ্ট এম্ফি-থিয়েটারসহ নানা সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি করা হয়। পার্কটি রক্ষণাবেক্ষণ, পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার জন্য প্রোপার্টি ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি হিসেবে টেকসিটি বাংলাদেশ লিমিটেড কর্তৃপক্ষকে দায়িত্ব দেয়া হয়।
গত ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর টেকসিটি বাংলাদেশ লিমিটেডের সঙ্গে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের সম্পাদিত কনজেশন চুক্তি বাতিল করা হয়েছে; যা গত ১ মে থেকে কার্যকর হয়েছে। স্মারকে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, টেকসিটির সঙ্গে চুক্তি করা উদ্যোক্তা বিনিয়োগকারীদের বিদ্যমান বরাদ্দ ও চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। তবে উদ্যোক্তারা নতুন করে বরাদ্দ পেতে আবেদন করতে পারবেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গত ১ মে থেকে টেকসিটির চুক্তি বাতিল হলেও তারা এখনো তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছেন। আগামী ৩১ মে তারা এ প্রতিষ্ঠান ছেড়ে যাবেন বলে শোনা যাচ্ছে।
এদিকে, শনিবার টেকসিটির সহযোগী প্রতিষ্ঠান খান প্রোপার্টিজ তিন তারকা বিশিষ্ট হোটেল এণ্ড রিসোর্টের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে। ওই দিন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা কর্মচারীদের শেষ কার্যদিবসও ছিলো।
খান প্রোপার্টিজের পাবলিক রিলেশন এক্সিকিউটিভ শামসুজ্জামান সজন জানান, টেকসিটির সঙ্গে হাইটেক পার্ক অথরিটি চুক্তি বাতিল হয়েছে। যে কারণে টেকসিটি কর্তৃপক্ষ খান প্রোপার্টিজের সঙ্গে তাদের চুক্তি বাতিল করেছে এবং হোটেল ম্যানেজমেন্টের দায়িত্ব ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেছে। এর ফলে হোটেল ব্যবস্থাপনা আজ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
যশোর সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক ইনভেস্টার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার শাহজালাল জানান, চলতি মাসে টেকসিটির চুক্তি বাতিল হলেও তাদের কার্যক্রম শেষ করতে ৩১ মে পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে। ২৪ মে টেকসিটি হাইটেক পার্ক অথরিটির প্রতিনিধির কাছে সবকিছু বুঝিয়ে দিয়েছে। এ চুক্তি বাতিলের ফলে আমাদের (বিনিয়োগকারী) বরাদ্দও বাতিল হয়েছে। হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ বিনিয়োগকারীদের নতুন করে বরাদ্দ পেতে আবেদন করতে বলেছিলো। নির্ধারিত সময় শেষ হলেও কোনো উদ্যোক্তাই আবেদন করেননি।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা হাইটেক পার্ক অথরিটির কাছে স্পেস ভাড়া ও বৈদ্যুতিক বিলের মূল্য কমিয়ে পুনঃনির্ধারণ করার জন্য আবেদন করেছি। বিষয়টি মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত নতুন করে আমরা আবেদন করছি না। আমরা চাই বিনিয়োগকারীদের জন্য নির্মিত এমটিবি ভবনটি সরকারের অর্থাৎ হাইটেক পার্ক অথরিটির তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হোক। তাহলে এখানে বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি হবে।’
৩০৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর পার্কটির যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে ৪৪টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে এখানে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের উন্নয়ন, দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরি, জ্ঞানভিত্তিক শিল্প স্থাপন, উদ্যোক্তাদের ব্যবসা পরিচালনার জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে যশোরে গড়ে তোলা হয় দেশের প্রথম আইসিটি পার্কটি। উদ্যোক্তাদের আশান্বিত করা হয় সরকারি সহযোগিতায় সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কটি হবে বাংলাদেশের সিলিকন ভ্যালি। মেধাভিত্তিক অর্থনীতির দ্বার উন্মোচিত হবে। কিন্তু তার কিছুই হয়নি। আসেনি বিদেশি বিনিয়োগ। বর্তমান বিনিয়োগকারীদের বেশির ভাগ প্রশিক্ষণ, ডিজিটাল মার্কেটিং, কল সেন্টার পরিচালনা ও গ্রাফিকস ডিজাইনিংয়ের কাজ করেন। বিগত সরকারের প্রতিশ্রুত সুযোগ সুবিধা না মেলায় সে কাজেও আশানুরূপ সফলতা পায়নি। যে কারণে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ ইতিমধ্যে পার্কটি ছেড়েছেন। এখনও যারা আছেন তারা হতাশায় ভুগছেন।