হাসান আদিত্য
দেড় দশকের বেশি সময় পর আজ শুক্রবার যশোরে জামায়াতে ইসলামীর সর্ববৃহৎ কর্মী সম্মেলন। শহরের ঈদগাহ মাঠে অনুষ্ঠিত হওয়া এই সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে প্রধান অতিথি থাকবেন সংগঠনটির আমীর ডা. শফিকুর রহমান। নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন পর ‘অনুকূল’ পরিবেশে এই সমাবেশ দলের অবস্থান দৃঢ় করার পাশাপাশি আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতির বার্তা দিবেন দলীয় প্রধান। একদিকে নেতাকর্মীরা যেমন প্রকাশ্যে সমাবেশ ঘটাতে পারছে; অন্যদিকে দলীয় প্রধানের আগমনে উচ্ছ্বসিত নেতাকর্মীরা। দলের শীর্ষ নেতার আগমন উপলক্ষে শহরের রাস্তায় রাস্তায় শোভা পাচ্ছে প্রয়াত শীর্ষ নেতাকর্মীদের তোরণ, ব্যানার, পোস্টারে।
এদিকে, দলীয় প্রধানের আগমনের প্রস্তুতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন সংগঠনটির জেলা শাখার আমীর অধ্যাপক গোলাম রসুল। বৃহস্পতিবার তিনি দুপুরে প্রেস ক্লাব যশোরে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, এই কর্মী সম্মেলনে যশোর ছাড়াও খুলনা, ঝিনাইদহ, নড়াইল চুয়াডাঙ্গা, সাতক্ষীরার দেড় লক্ষাধিক নেতাকর্মী সমাগমের প্রস্তুতি নিয়েছেন। অনুষ্ঠানস্থল, টাউন হল ময়দান ছাড়াও শহরের টাউন হল ময়দান ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বড় পর্দার মাধ্যমে অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হবে।
নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন, জামায়াতে ইসলামী যশোর জেলা ২০০৮ সালের পর প্রকাশ্যে কোন সভা-সম্মেলন করতে পারেনি। গত ১৬ বছর গণতন্ত্রের শত্রু ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকার দেশের সকল বিরোধী রাজনৈতিক দল ও মতের উপর দমন-পীড়ন চালিয়েছে। যশোরে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ১০ জন নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে ও অসংখ্য নেতাকর্মীকে গুলি করে পঙ্গু করেছে। আওয়ামী লীগ সরকার যশোর জেলা জামায়াতের হাজার হাজার নেতাকর্মীর নামে প্রায় ১২শ’র অধিক মিথ্যা মামলা দিয়ে মাসের পর মাস কারাগারে বন্দি করে রেখেছিল। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে ঘর-বাড়ি ছাড়া করেছিল। বাড়ি ঘরে ঘুমাতে পারেনি অসংখ্য নেতাকর্মী। জামায়াতে ইসলামীর যশোর জেলা কার্যালয় খুলতে দেয়া হয়নি। গত ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার বিপ্লবের মাধ্যমে দেশ ২য় বার স্বাধীনতা লাভ করেছে। দেশের মানুষ ফ্যাসিবাদের কবল থেকে মুক্তি পেয়েছে। গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে পেয়ে জামায়াতসহ দেশের সকল রাজনৈতিক দল স্বাধীন ভাবে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে। প্রতিদিনই রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ, সামাজিক কর্মকাণ্ড, খেলাধুলা, ওয়াজ মাহফিলসহ নানা কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন জামায়াতের নেতাকর্মীরা। এতে দলগুলোর অভ্যন্তরে নির্বাচনি আমেজ বিরাজ করছে। এমন পরিস্থিতিতে নেতাকর্মীদের আরোও চাঙ্গা করতে ও নির্বাচনী বার্তা দিতে দলীয় প্রধানকে নিয়ে কর্মী সমাবেশের আয়োজন করেছে সংগঠনটি। জেলার শীর্ষ নেতাদের ভাষ্য, কর্মী সম্মেলনের মাধ্যমে তাদের নির্বাচনি মাঠ প্রস্তুত করছে। এ ছাড়া মাঠের আধিপত্য, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল এবং নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখতে এ ধরণের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিকল্প নেই।
নেতাকর্মীরা জানান, কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে ঘোষণা করা না হলেও ইতোমধ্যে যশোরের ছয়টি আসনেই প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে জামায়াত।
যশোরের আমীর অধ্যাপক গোলাম রসুল বলেন, ‘স্বাধীনতার পর যশোরে জামায়াতে ইসলামী কোন কেন্দ্রীয় আমীর কখনও বক্তব্য রাখেনি। অথচ দেশের বৃহতম রাজনৈতিক দলের প্রধানরা এ মাঠে একাধিকবার সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। এবার দলীয় প্রধানের আগমনী বার্তায় পুরো জেলা জুড়েই নেতাকর্মীদের মধ্যে বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, দীর্ঘ বছর পর মুক্ত আবহে রাজনীতি করছি। আমাদের নেতাকর্মীরা অনেকটাই প্রাণবন্ত। জেলার সকল আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত হয়েছে। নির্বাচন নিয়েই আমরা দল গোছাচ্ছি। দলীয় প্রধান এদিন নেতাকর্মীদের নির্বাচনের প্রস্তুতির বার্তা দিবেন এমনটি মনে করছি।’
এ দিকে, বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে জেলা জামায়াত। প্রেসক্লাব যশোর মিলনায়তনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক গোলাম রসুল বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী যশোর জেলা ২০০৮ সালের পর প্রকাশ্যে কোন সভা-সম্মেলন করতে পারেনি। গত ১৬ বছর গণতন্ত্রের শত্রু ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকার দেশের সকল বিরোধী রাজনৈতিক দল ও মতের উপর দমন-পীড়ন চালিয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ওপর এ জুলুম-নির্যাতনের মাত্রা ছিলো বেশি। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ও সাবেক মন্ত্রী মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক মন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান, আব্দুল কাদের মোল্লা ও নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাশেম আলীকে কথিত বিচারের নামে ফাঁসি দিয়ে হত্যা করেছে। সাবেক আমীরে জামায়াত ভাষা সৈনিক, কেয়ারটেকার সরকারের রূপকার অধ্যাপক গোলাম আযম, নায়েবে আমির মাওলানা এ কে এম ইউসুফ, সিনিয়র নায়েবে আমির আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন মুফাসসিরে কুরআন ও সাবেক সংসদ সদস্য মাওলানা দেলওয়ার হোসাইন সাঈদী, ৫ বারের নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য ও নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুস সুবহানসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে কারাগারে বন্দী রেখে হত্যা করেছে। গত ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার বিপ্লবের মাধ্যমে দেশ ২য় বার স্বাধীনতা লাভ করেছে। দেশের মানুষ ফ্যাসিবাদের কবল থেকে মুক্তি পেয়েছে। গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে পেয়ে দেশের সকল রাজনৈতিক দল স্বাধীন ভাবে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে। এমন একটি পরিবেশে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী যশোর জেলা আজ শুক্রবার সকাল ৯ টায় যশোরের ঐতিহাসিক ঈদগাহ ময়দানে কর্মী সম্মেলন হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, জেলা নায়েবে আমির অধ্যাপক মাওলানা হাবিবুর রহমান, জেলা সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মাওলানা আবু জাফর সিদ্দিক, সহকারী সেক্রেটারি গোলাম কুদ্দুস, রেজাউল করিম, অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম, জেলা কর্ম পরিষদ সদস্য অধ্যাপক সামছুজ্জামান, অ্যাড. গাজী এনামুল হক, অধ্যাপক আবুল হাশিম রেজা, আব্দুল কাদের, আলমগীর হোসেন প্রমুখ।