স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ
অনলাইনে বার্মিজ চাকু বিক্রি উদ্বেগজনক ঘটনা। অনলাইন ও অফলাইনে বার্মিজ চাকু বিক্রি নিষিদ্ধ করতে হবে। -শাহিন ইকবাল, সভাপতি, সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক)।
অনলাইনে বার্মিজ চাকু বিক্রির বিষয়ে আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল আছে। তারা চাইলে এই ধরনের পণ্য অনলাইনে বিক্রি বন্ধ করতে পারে। আমাদের সাইবার মনিটরিং আছে। – আবুল বাশার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।
যশোরে বার্মিজ চাকুর সহজলভ্যতা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। অনলাইনে হোম ডেলিভারির মাধ্যমে এটি কিনতে পারছে যে কেউ। এমনকি অল্প বয়সী কিশোর কিশোরীরাও সহজে কিনছে বার্মিজ চাকু। মাত্র ২শ’ থেকে ৫শ’ টাকার মধ্যেই ঘরে বসে পাওয়া যাচ্ছে বার্মিজ চাকু। ধারালো এই অস্ত্র উঠতি বয়সি ছেলেদের হাতে চলে যাচ্ছে। ছিনতাই, সংঘর্ষ ও হত্যার মতো অপরাধে ব্যবহৃত হচ্ছে। পুলিশ বলছে, অনলাইনে বার্মিজ চাকু বিক্রির বিষয়ে তাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই।
জানা যায়, বার্মিজ চাকু দেখতে ছোট হলেও এটি ভয়ংকর প্রাণঘাতী। একবার আঘাত করলেই গভীর জখম হয়। অনেক সময় মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে। শহরের বিভিন্ন এলাকায় এটি কিশোরদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কারণ এটি সহজেই বহন করা যায় এবং আত্মরক্ষার অজুহাতে ব্যবহার করা সম্ভব। অনলাইন মার্কেটপ্লেস ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বার্মিজ চাকু প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছে। কোনো পরিচয় যাচাই ছাড়াই সহজে ক্রয় করতে পারছে উঠতি বয়সী বিপথগামীরা। স্কুল-কলেজপড়ুয়া কিশোররাও সহজেই এটি কিনতে পারছে। মেয়েদের মধ্যেও এই চাকুর বহন করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
যশোর শহরে বার্মিজ চাকু ব্যবহারের মাধ্যমে অধিকাংশ অপরাধ সংগঠিত হয়। এই জেলায় বহুবছর থেকে চাকু ব্যবহারের প্রচলিত রয়েছে। সম্প্রতি দুই গ্রুপের সংঘর্ষে বার্মিজ চাকুর আঘাতে একজন চোখে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়। এছাড়া খোলাডাঙ্গার জামায়াত নেতা হত্যাকাণ্ডে কিশোর অপরাধীরা বার্মিজ চাকু ব্যবহার করে। শহরের বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাংগুলোর মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে এই চাকুর ব্যবহার বাড়ছে। এছাড়া উড়ন্ত ছিনতাইকারীরাও আতঙ্ক সৃষ্টি করতে বার্মিজ চাকু ব্যবহার করছে।
বার্মিজ চাকুর ব্যবহারে কিশোর অপরাধ বাড়লেও এখনও পুলিশের তেমন কোনো অভিযান দেখা যাচ্ছে না। অনেক সময় স্থানীয়রা অভিযোগ জানালেও অপরাধীরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি না থাকায় এটি আরও সহজলভ্য হয়ে উঠছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনলাইনে অর্ডারকৃত পণ্য হোম ডেলিভারির কাজে নিয়োজিত একজন বলেন, অনলাইনে অনেকে, অনেক ধরনের পণ্য অর্ডার করে থাকে। আমাদের কাজ নির্দিষ্ট ঠিকানায় পণ্য পৌঁছে দেয়া। আমাদের সুযোগ থাকে না প্যাকেট করা পণ্য খুলে দেখার। অনেক ই-মার্কেট প্লেসে চাকু বা এই ধরনের জিনিস বিক্রি করা হয়। সেখান থেকে উঠতি বয়সী কিশোর কিশোরীরা অর্ডার করে থাকে। পণ্য ডেলিভারি নেয়ার সময় অনেক ক্ষেত্রে কাস্টমারের বয়স, গোপনীয়তা অবলম্বন করলে ধারণা পাওয়া যায় বিশেষ কোনো পণ্য আছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই ধরনের পণ্য ডেলিভারি নেয়ার সময় ১৪ থেকে ২২ বছর বয়সি কাস্টমার নির্দিষ্ট ঠিকানায় পণ্য নেন না।
সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) যশোরের সভাপতি শাহিন ইকবাল বলেন, অনলাইনে বার্মিজ চাকু বিক্রি উদ্বেগজনক ঘটনা। অনলাইন ও অফলাইনে বার্মিজ চাকু বিক্রি নিষিদ্ধ করতে হবে। অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে এবং সন্তানদের কার্যক্রমের দিকে নজর দিতে হবে। স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীদের অপরাধপ্রবণতা রোধে কাউন্সেলিং চালু করা উচিত। পুলিশের বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা প্রয়োজন, যাতে এই চাকুর কেনাবেচা ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) আবুল বাশার বলেন, অনলাইনে বার্মিজ চাকু বিক্রির বিষয়ে আমাদের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল আছে। তারা চাইলে এই ধরনের পণ্য অনলাইনে বিক্রি বন্ধ করতে পারে। আমাদের সাইবার মনিটরিং আছে।
তিনি আরও বলেন, শহরে ১৪টি ফুট প্যাট্রল টিম চালু করা হয়েছে। টিম প্রতিনিয়ত উঠতি বয়সি ছেলেদের গতিবিধি নজরদারি করছে। যশোরে চাকুর প্রবণতা বেশি। আমরা চেকপোস্ট বসিয়ে অভিযান অব্যাহত রেখেছি।