# মিশ্র প্রতিক্রিয়া শিক্ষকদের
বাংলার ভোর প্রতিবেদক
দেশে প্রথমবারের মতো শুরু হওয়া যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক বোর্ডের অনলাইন প্রশ্নব্যাংক কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মতিনের স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। বোর্ড সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এদিকে ২০১৯ সাল থেকে চলে আসা এ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়ায় শিক্ষকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলছেন, বোর্ডের প্রশ্নব্যাংকের কারণে মানসম্মত প্রশ্নপত্র প্রণয়ন হতো। মূল বই থেকে প্রশ্ন হওয়ায় গাইডনির্ভরতাও কমেছিল। এমনকি অভিন্ন এই প্রশ্নে প্রাকনির্বাচনী ও নির্বাচনী পরীক্ষা নেওয়াতে দুবার যশোর বোর্ড দেশসেরা হয়েছিল এসএসসিতে।
বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সাল থেকে প্রথমবারের মতো যশোর শিক্ষা বোর্ডে পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য স্কুলপর্যায়ে শক্তিশালী একটা উদ্যোগ নেয়। সেটা হলো নিজস্ব প্রশ্ন ব্যাংক। খুলনা বিভাগের ১০ জেলার বাছাইকৃত দক্ষ শিক্ষকেরা প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করে প্রশ্নব্যাংকে জমা দেন। ওই শিক্ষকেরাই আবার তা মডারেট করেন। পরে মডারেট করা প্রশ্নপত্র বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির বার্ষিক ও অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়।
এতে শিক্ষার্থীরা মানসম্মত প্রশ্নের সঙ্গে পরিচিত হয়। এর প্রভাব পড়ে বোর্ড পরীক্ষায়। গত কয়েক বছর ধরে এই প্রক্রিয়াতেই স্কুল পর্যায়ের পরীক্ষাগুলোতে প্রশ্নব্যাংকের মাধ্যমে পরীক্ষা গ্রহন করা হয়। কিন্তুবৃহস্পতিবার বোর্ডটির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অফিস আদেশে বন্ধ হয় অনলাইন প্রশ্নব্যাংকের কার্যক্রম। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, স্ব-স্ব বিদ্যালয় পরীক্ষার প্রশ্নপত্র (পাবলিক পরীক্ষা ব্যতীত) নিজেরাই প্রণয়ন করবেন। কোনো অবস্থাতেই অন্য কোনো উৎস থেকে সংগৃহীত প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেয়া যাবে না মর্মে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত থাকায় যশোর শিক্ষা বোর্ড পরিচালিত প্রশ্নব্যাংকের সকল কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
এদিকে, শিক্ষাবোর্ডের এই কার্যক্রম নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রীয়া দেখা দিয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষকদের মধ্যে। পক্ষে বিপক্ষে মতামত দিচ্ছেন অনেকেই। যশোর সদরের আমদাবাদ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পারভেজ মাসুদ বলেন, ‘আসলে বোর্ডের প্রশ্ন ব্যাংকে মানসম্মত প্রশ্নপত্র প্রণয়ন হতো। ১০ জেলার সেরা শিক্ষক দিয়ে এই প্রশ্ন করা হতো। এতে মূলবই থেকে প্রশ্ন হওয়ায় গাইড নির্ভরতা কমেছিলো শিক্ষার্থীদের ভিতর।
তিনি বলেন, অনেক মফস্বলের শিক্ষার্থীরা কোন ক্যাডেট বা জিলা স্কুলের মতো শিক্ষকদের প্রশ্নে পরীক্ষা দিতো। সেই কারণে তারা সেই সব নামিদামি স্কুলের শিক্ষার্থীদের মতোই গড়ে উঠতো। এছাড়া শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী উভয়েই সৃজনশীল প্রশ্নোত্তরে দক্ষ হয়েছিলো। পরীক্ষার কিছু সময় আগে বোর্ড অনলাইনে প্রশ্নপত্র দিয়ে দেয়ায় ফাঁসের ঝুঁকি বা প্রবণতাও কমে গেছে। এই উদ্যোগটা আমার কাছে ভালোই ছিলো।’
যশোর জেলা শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিএম জহুরুল পারভেজ জানান, প্রশ্ন ব্যাংকের প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়ায় আমাদের কোন আপত্তি নেই। কিন্তু এর মাধ্যমে পরীক্ষা নেয়ায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আয় করেছে শিক্ষা বোর্ড। সেই টাকায় দুর্নীতি করেছে। এখন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা প্রশ্ন তৈরি করে পরীক্ষা নেবে। প্রশ্ন তৈরি করতে শিক্ষকদের বই পড়তে হবে। এতে করে শিক্ষকরা মানসম্মত প্রশ্ন তৈরি করতে পারবেন। হঠাৎ পদ্ধতি পরিবর্তন হওয়াতে কিছুটা সমস্যা হলেও আস্তে আস্তে এটা স্বাভাবিক হবে।’
যশোর বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর ড. আব্দুল মতিন বলেন, ‘এটা আমাদের মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত। আমরা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছি। একমাত্র যশোর বোর্ডই প্রশ্নব্যাংকের মাধ্যমে পরীক্ষা গ্রহণ করতো। এটা আসলেই নান্দনিক উদ্যোগ ছিলো। প্রশ্ন ব্যাংকের মাধ্যমে সেরা সেরা শিক্ষকেরা প্রশ্ন করতো। এতে অজপাড়াগাঁর শিক্ষার্থীরাও ভালো শিক্ষক ও ভালো মানের প্রশ্নে পরীক্ষা দিতো। এটা থেকে উপকৃত হতো শিক্ষার্থীরা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষকেরা। এখন প্রশ্ন ব্যাংক বন্ধ হওয়াতে উপকৃত হবে গাইড ব্যবসায়ীরা।’
টাকা নেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি নতুন এসেছি। শুনেছি ১০ টাকা করে দেয়া হতো। সেটা বন্ধ করে দেয়া হয়েছিলো।’