বাংলার ভোর প্রতিবেদক
চরম নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়েছে যশোরের নওয়াপাড়া নৌবন্দর। গত এক বছর ধরে মাদকসেবী ও সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বেড়েছে। অব্যাহতভাবে ঘটছে চুরি, ছিনতাইয়ের ঘটনা। এতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন জাহাজের মাস্টার, সুকানি ও কর্মচারীরা। বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন বন্দর কেন্দ্রীক ব্যবসায়ীরা। এদিকে সমস্যার সমাধানে নৌপুলিশসহ স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশনা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
যশোরের নাওয়াপাড়া নৌ-বন্দরে বছরে পাঁচ হাজারের বেশি বার্জ, কার্গো-লাইটার জাহাজ ভেড়ে। মোংলা বন্দর থেকে আসা এসব জাহাজে থাকে সার, গম, কয়লা, পাথরসহ বিভিন্ন পণ্য। অভয়নগর উপজেলার চেঙ্গুটিয়া থেকে ফুলতলা পর্যন্ত এলাকাজুড়ে বিভিন্ন ঘাট পয়েন্টে এসব কার্গো-জাহাজ থেকে পণ্য আনলোড করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, গত এক বছর ধরে সন্ধ্যা নামলেই এসব জাহাজে একপ্রকার জোর করেই আড্ডা বসান স্থানীয় সন্ত্রাসী ও মাদকসেবীরা। তারা বিভিন্ন সময় চুরি ও ছিনিয়ে নিয়ে যান মোবাইল ফোন, টাকা-পয়সা, জামাকাপড়সহ অন্যান্য জিনিসপত্র। কখনও বা তাদের জিম্মি করে পণ্য লুটের ঘটনাও ঘটায়। এতে করে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন জাহাজের মাস্টার, সুকানি ও কর্মচারীরা।
লেবার সরদার মনিরুজ্জামান মানিক বলেন, গত এক বছর ধরে প্রতিদিনই চুরি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। কিছু মাদকাসক্ত ব্যক্তি জাহাজের কেবিন দখল করে মাদক সেবন ও অসমাজিক কাজে লিপ্ত হচ্ছে। জাহাজ শ্রমিকরা বাধা দিলে তাদের সঙ্গে মারপিট ও হুমকির ঘটনা ঘটছে। এছাড়া শ্রমিকদের মোবাইল, টাকা-পয়সা চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। লাভলু হোসেন নামে এক সুকানি বলেন, নওয়াপাড়ার চেঙ্গুটিয়া থেকে ফুলতলা পর্যন্ত শতাধিক ঘাট পয়েন্টে জাহাজ মালামাল খালাসের অপেক্ষায় থাকে দীর্ঘদিন। এক একটি জাহাজকে প্রায় ১০-১২ দিন বা তারও বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়। সংঘবদ্ধ চক্র প্রতিরাতে এসব কার্গো জাহাজ থেকে বিভিন্ন প্রকার মালামাল হাতিয়ে নেয়। এসব মালামালের মধ্যে রয়েছে ডিজেল, মবিল, সার, সিমেন্ট, কয়লা, গম, ভুট্টাসহ জাহাজের মূল্যবান যন্ত্রাংশ ও লোহালক্কড়। বাধা দিলে হত্যার হুমকি দেয়। এভাবে জাহাজে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে। নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন বন্দর কেন্দ্রীক ব্যবসায়ীরাও। তাদের দাবি এ অপতৎপরতা বন্ধ না করা গেলে বন্দর কেন্দ্রিক ব্যবসায়ী টিকিয়ে রাখা দুরূহ হয়ে পড়বে।
ব্যবসায়ী নেতা নূরে আলম পাটোয়ারি বলেন, ‘বখাটে ও দুর্বৃত্তরা আমাদের পণ্যবাহী জাহাজগুলোতে উঠে চুরি ছিনতাই করছে। এ সময় তারা জাহাজের কর্মীদের মারপিটও করে। আমরা প্রায় প্রতিদিনই এ ধরনের অভিযোগ পাচ্ছি। আমরা বিষয়টি নৌ পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েছি। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না। আমরা ব্যবসায়ী হিসেবে চাইবো বন্দর কেন্দ্রিক দুর্বৃত্তদের এই অপতৎপরতা বন্ধে প্রশাসন কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করুক। যাতে জাহাজের কর্মীরা নিরাপদে পণ্য আনা ও আনলোড করতে পারে।’ যশোরের সার আমদানিকারক ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শাহজালাল হোসেন বলেন, দুর্বৃত্তদের অত্যাচার দিন দিন বাড়ছে। এটা অব্যাহত থাকলে এই নদী বন্দর কেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যে আগ্রহ হারাবে ব্যবসায়ীরা। তিনি বলেন, ‘এখানে প্রতিদিন প্রায় ৫০০ কার্গো নোঙর করে। নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে সুকানিসহ জাহাজের কর্মীরা এ বন্দরে জাহাজ নিতে আসতে আগ্রহী হবে না। তখন আমাদের এই মোকাম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ এজন্য বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি। এদিকে সমস্যার সমাধানে নৌপুলিশসহ স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশনা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
নওয়াপাড়া নৌবন্দরের বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে কথা বলেছি। নৌপুলিশকে প্রয়োজনে পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকেও ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে।’ দ্রুতই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে বলে আশ্বস্ত করেন তিনি। প্রসঙ্গত, ১৯৯০ সালে যাত্রা শুরু হওয়া এ বন্দরের দৈর্ঘ্য ১২ কিলোমিটার। তিন যুগ অতিবাহিত হলেও এ বন্দরের অবকাঠামোগত কাক্সিক্ষত উন্নয়ন হয়নি।
