বাংলার ভোর প্রতিবেদক
বহুল কাক্সিক্ষত যশোরের ভৈরব নদ খনন হলেও তার কোনো সুফল মিলছে না। অপরিকল্পিত কিছু ব্রিজ কালভার্টের কারণে আবারও ভাগাড়ে পরিণত হওয়ার উপক্রম হয়েছে নদটি। এজন্য পানি প্রবাহ স্বাভাবিক করতে অপরিকল্পিত ব্রিজ কালভার্ট অপসারণের পাশাপাশি উজানে নদী সংযোগ তৈরির দাবি যশোরবাসীর। পানি উন্নয়ন বোর্ডের দাবি, ব্রিজ কালভার্ট অপসারণে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ কাজ সম্পন্ন হলে নদী তার প্রাণ ফিরে পাবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, সরকারের ‘জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্পের’ আওতায় ভৈরব নদ খননে ব্যয় হয়েছে ২৭২ কোটি ৮২ লাখ ৫৪ হাজার টাকা।
গঙ্গা থেকে উৎপত্তি হয়ে মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, যশোর, খুলনা হয়ে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত ধারা ছিল ভৈরব নদের। কিন্তু অপরিকল্পিত বাঁধ, কালভার্ট, সেতু নির্মাণের পাশাপাশি অবৈধ দখলের কারণে ধীরে ধীরে নাব্যতা হারাতে থাকে নদটি। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার মৃতপ্রায় এ নদে জোয়ার-ভাটা ফেরাতে খননের উদ্যোগ নেয়।
এরপর ২০১৮ সালের ১৮ জানুয়ারি যশোরের চৌগাছা উপজেলার তাহেরপুর থেকে অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়ার আফরাঘাট পর্যন্ত ৯৬ কিলোমিটার নদ খনন শুরু হয়। নদটির খনন শেষ হলেও তার কোনো সুফল মিলছে না। অপরিকল্পিত কিছু ব্রিজ কালভার্টের আবারও ভাগাড়ে পরিণত হওয়ার উপক্রম হয়েছে নদটি। এজন্য পানি প্রবাহ স্বাভাবিক করতে অপরিকল্পিত ব্রিজ কালভার্ট অপসারণের পাশাপাশি উজানে নদী সংযোগ তৈরির দাবি যশোরবাসীর।
ভৈরব সংস্কার আন্দোলনের নেতা জিল্লুর রহমান ভিটু বলেন, ‘ভৈরব নদের উপরে প্রায় ৫২ টি ছোট ছোট ব্রিজ রয়েছে। যা এ নদীকে সংকোচিত করেছে। খননের সময় সেগুলো অপসারণ করা হয়নি। উজানে নদী সংযোগ দেয়া হয়নি। সে কারণে এই খননের সুফল যশোরবাসী পাইনি। তাছাড়া সুফল পাওয়ার জন্য যেভাবে খনন করা দরকার ছিল সেভাবে খনন হয়নি। কর্তৃপক্ষ নদীকে খালে পরিণত করা হয়েছে। এই নদী আবারও ভরাট হয়ে যাবে। এ নদের কোনো অভিভাবক নেই, দেখাশোনার কোনো লোকজন নেই। ফলে ময়লা আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।’
অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ভৈরব নদ খননের সময় আমরা এক বুক আশা বেঁধেছিলাম। নদীতে আবার ছোটখাটো নৌযান চলাচল করবে। কিন্তু খনন শেষ হওয়ার আগেই নদ আবার ভরাট হবার উপক্রম হয়ে গেছে। কচুরিপানার কারণে এখন আর নদটি চেনা যায় না। পুনঃখননের মাধ্যমে এই নদের জোয়ার ভাটা ফিরে আনার দাবি জানাচ্ছি।’
পলাশ বিশ্বাস বলেন, ‘নদ যখন খনন হয় সেই খননের মাটি নদের পাড়েই রাখা হয়েছিল। মাটি আবার নদীতে এসে নদী ভরাট হয়েছে। নদের দুই পাড় কাটা হলেও মাঝখানে কাটা হয়নি। তাছাড়া নদের দুই ধারে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়নি। যার ফলে যশোরবাসী এই নদ খননের সুফল পাচ্ছে না। পুনঃখননের মাধ্যমে এই নদে জোয়ার ভাটা আনার দাবি জানাচ্ছি।’
এদিকে যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জির দাবি, অপরিকল্পিত ব্রিজ কালভার্ট অপসারণে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট সব বিভাগকে চিঠি দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে এবং কিছু নির্মাণাধীন। এ কাজ সম্পন্ন হলে নদী তার প্রাণ ফিরে পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।