এস এম জালাল
গণতন্ত্রের জন্য ১৬ বছর ধরে লড়ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দলের সর্বস্তরের নেতৃত্ব নির্বাচনের উদ্যোগ নিয়েছে দলটি। উৎসবমুখর পরিবেশে কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে যশোর জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়েছে। সভাপতি পদে নির্বাচিত হয়েছেন অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু। ছাত্রদলের রাজনীতি থেকে জেলা বিএনপির শীর্ষ পদের দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি। নতুন পথচলায় চ্যালেঞ্জ, ভবিষৎ পরিকল্পনা ও অতীতের রাজনীতি নিয়ে বাংলার ভোরের সাথে স্মৃতিচারণ করেছেন যশোর জেলা বিএনপির নবনির্বাচিত সভাপতি অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু।
তিনি বলেন, জেলা বিএনপির কাউন্সিলে তৃণমূলের নেতারা ভোট দিয়েছেন। তাদের ভোটে সভাপতি নির্বাচতি হয়েছি। নেতাকর্মীরা আমাকে সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি অভিভাবক হিসেবে সবাইকে সমন্বয় করে অর্পিত দায়িত্ব পালন করব। যশোর জেলা বিএনপির সভাপতি হওয়ার মত আরো ২ থেকে ৫ জন নেতা রয়েছে। সবাই তো আর সভাপতি হবেন না। একজনই নির্বাচিত হন। নেতা নির্বাচন ক্ষেত্রে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তবে নির্বাচনের পরে দলের ভিতর কোন ভেদাভেদ নেই। বিএনপি নেতাকর্মীরা এখন আরও ঐক্যবদ্ধ।’
তিনি বলেন, যশোর জেলা বিএনপির কাউন্সিল নির্বাচন এইবারই প্রথম নয়। আগেও নির্বাচন হয়েছে। তখন যশোর জেলায় মোট নয়টি ইউনিট ছিল। ভোটার ছিল মাত্র ১৮ জন। প্রত্যেক ইউনিটেরে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তখন ভোট দিয়ে নেতা নির্বাচন করতেন। আগে ভোটের মাধ্যমেই সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচন করে জয় লাভ করেন তিনি। ২০১০ সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বি না থাকায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলাম।’
বিএনপি গণতান্ত্রিক দল উল্লেখ করে অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, বিভিন্ন দল অনেক সময় বলে থাকেন বিএনপিতে নেতা নির্বাচনে গণতন্ত্র নেই। সেটি আমরা ইতোমধ্যে ভুল প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। দেশব্যাপি দলের নেতা নির্বাচন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হচ্ছে। ব্যালট ও তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে নেতা নির্বাচন চলছে। যশোরে একই প্রক্রিয়ায় নেতা নির্বাচন হয়েছে। তৃণমূল থেকে শুরু করে জেলার নেতা নির্বাচনে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন করা হয়েছে।’
আন্দোলন সংগ্রামের কথা তুলে ধরে সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতন হয়েছে। এ বিজয় একদিনের আন্দোলনের ফসল নয়। এ আন্দোলন সফল করতে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। বিএনপির অনেক নেতাকর্মী প্রাণ দিয়েছে। অনেকেই গুম হয়েছে। নেতাকর্মীরা জেল খেটেছে, হামলা, মামলার শিকার হয়েছে। দলের ৬০ লাখ নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। এ সব কিছু মাথায় নিয়ে বিএনপি রাজপথে ছিল। দীর্ঘ আন্দোলনের ফলই হচ্ছে আজকের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্র পরিচালনায় খুব বেশি সফল হয় না, যদি দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ না থাকে। এ মূহূর্তে দেশে একটি নির্বাচন হওয়া জরুরী। যে নির্বাচনে জনগণের প্রতিফলন ঘটবে এবং জনগণের সরকার গঠিত হবে। যারা এ দেশ জনগণের অধিকার, সংকট, সমস্যা সম্পর্কে অবহিত আছেন, তারাই আগামী দিনে জনগণের সমস্যার সমাধান করবেন।’
সংস্কার তো এক দিনেই হয়না, বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে সংস্কার হয় জানিয়ে সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সংস্কার করতে হবে। রাষ্ট্র সংস্কার করতে হবে বাস্তবতার নিরিখে। বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ২০২২ সালে রাষ্ট্র মেরামতের জন্য যে ৩১ দফা দিয়েছে, তা বাস্তবায়ন করতে পারলে দেশের অর্থনীতি সংকটসহ দেশের জনগণের সকল সমস্যার সমাধান হবে।’
আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে সাবেরুল হক সাবু বলেন, নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা আছে। তবে রাজনীতিতে স্থায়ী কেউ বন্ধু হয় না, আবার কেউ শত্রু হয় না। যারা আমাদের মিত্র ছিল, আপনারা আজ তাদেরকে আমাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখছেন? তবে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় গিয়ে অনেক কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করবেন। রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে বলব আজকের যে প্রেক্ষাপট, সেটি নির্বাচনকালীন থাকবে না। রাজনীতি দল হিসেবে বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল। অনেক বার দেশ পরিচালনা করেছে। সুষ্ঠু ভোট হলে জনগণের রায়ে আবার রাষ্ট্র পরিচালনা করবে।’
স্কুল জীবন থেকেই রাজনীতি সচেতন ছিলেন সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু। প্রায় ৫ দশকের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে নানা চড়াই উৎরায় পেরিয়ে আজকের অবস্থানে এসেছেন। ১৯৭৯ সালে যশোর পৌর ছাত্রদলের সভাপতি নির্বাচিত হন। একই বছর জেলা ছাত্রদলের আহবায়ক কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। তাঁর নেতৃত্বের প্রতিফলন ঘটতে থাকে। ১৯৮৩ সালে জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৮৭ সালেই তিনি জেলা ছাত্রদলের সভাপতির দায়িত্ব পান। সে সময় এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলন দানা বাঁধতে শুরু করে। বাংলাদেশ ছাত্রদলের পক্ষ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিভিন্ন সময় ছাত্র ধর্মঘট, ক্লাস বর্জন ও হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। তখন সৈয়দ সাবেরুল হক সাবুর নেতৃত্বে প্রতিটি কর্মসূচি পালন করতেন। লাগাতার আন্দোলনের ফলে স্বৈরাচারী এরশাদের পতন ঘটে। ১৯৯১ তত্ববাধায়ক সরকারে অধীনে নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করে। স্বৈরাচারী এরশাদের পতনের ব্যাপক ভূমিকা রাখায় তৃণমূল বিএনপিতে ব্যাপক পরিচিতি ভাল করেন সাবু। ১৯৯৩ সালে যশোর জেলা বিএনপি কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু যশোর জেলা বিএনপির সংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। এরপর অনেক প্রতিকূল পরিবেশের সম্মুখীন হলেও কখনও দল ও রাজপথ ছেড়ে যাননি। ২০১০ সালে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০১৯ সাল পর্যন্ত সুনামের সাথে এ দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৯ সালে যশোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনোনীত হন। সর্বশেষ ২০২৫ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি সম্মেলনে কাউন্সিলরদের ভোটে জেলা বিএনপির সভাপতি নির্বাচিত হন অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু।