বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার সুলতাননগর গ্রামে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুবের বিরুদ্ধে আদালতের স্থিতিশীল আদেশ থাকা অর্পিত সম্পত্তিতে ব্যক্তিগত স্থাপনা নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করার অভিযোগ উঠেছে।
ক্ষমতার দাপটে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের মধ্য দিয়ে বিচারাধীন ওই জমি অবৈধ দখলে গেছেন স্থানীয় ধলগা ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি হুমায়ুন কবির ওরফে কবির মাস্টার। গত ১ নভেম্বর এই ঘটনা ঘটে। শুধু দখলেই সীমাবদ্ধ নেই, ভুক্তভোগী ধর্মীয় সংখ্যালঘু পরিবারের সদস্যদের নানাভাবে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরিও করেছেন ভুক্তভোগীরা। আদালতের স্থিতিশীল আদেশ থাকায় ব্যক্তি জমিতে স্থাপনা নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করায় সমালোচনার মুখে পড়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা টিএস আইয়ুব। বিষয়টি ভালভাবে নিচ্ছেন না দলের সচেতন নেতাকর্মীরাও।
আদালত সূুেত্র জানা গেছে, যশোরের বাঘারপাড়ার সুলতাননগর গ্রামের মৃত নন্দ দুলাল কুন্ডু পৈত্রিক সূত্রে ৮ দাগের এক একর ১৬ শতক জমির মধ্যে এক তৃতীয়াংশের মালিক। তাদের তিন ভাইয়ের অবর্তমানে এ জমির মালিক পৈত্রিক সূত্রে তাদের ছেলেরা। মৃত নন্দ দুলাল কুন্ডুর অপর ভাইয়ের ওয়ারেশ নিরোধ কুন্ডু ৪৫ ও ৬৬ দাগ থেকে ৮ শতক জমি পার্শবতী আন্দুলবাড়িয়া গ্রামের বিএনপি নেতা হুমায়ুন কবীরের ওরফে কবীর মাস্টারের কাছে বিক্রি করেন। যা তার ভোগ দখলে আছে। এ জমির অংশিদার এএস রেকর্ডিয় মালিক জগবন্ধু সাধু খা ও অধির কুমার কুন্ডু ১৯৫৬ সালে পার্শবর্তী দেশ ভারতে গিয়ে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ফলে ১৯৯০ সালের রেকর্ডের সময় জগবন্ধু সাধু খাঁ ও অধির কুমার কুন্ডুর প্রাপ্ত সাড়ে ২৭ শতক জমি অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে রেকর্ড হয়। দীর্ঘ বছর ধরে জমির ভোগ দখল করছে মৃত নন্দ দুলাল কুন্ডুর ওয়ারেশগণ। ২০১১ সালে অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে রেকর্ড হওয়া ৪৫, ৪৬ দাগের বসতবাড়িসহ অন্যান্য জমি নিজেদের নামে রেকর্ড সংশোধনের জন্য সরকারকে বিবাদী করে ল্যান্ড সার্ভে আদালতে মামলা করেন মৃত নন্দ দুলাল কুন্ডুর ছেলে সুকুমার কুন্ডু। এ সংবাদ জানতে পেরে হুমায়ুন কবীর তার ক্রয়কৃত ৮ শতক জমি নিজ দখলে রেখে পাশে জোর করে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেন। মৃত নন্দ দুলাল কুন্ডুর ওয়ারেশদের বাধা উপক্ষো করে কবীর ভবনের নির্মাণ অব্যহত রাখে।
নিরুপায় হয়ে আদালতে স্মরণাপন্ন হন ক্ষতিগ্রস্থ নন্দ দুলালের ওয়ারেশগন। আদালতে আদেশে কাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হন হুমায়ুন কবির। দীর্ঘ বিচার শেষে ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোরব ল্যান্ড সার্ভে আদালতের রায়ে নালিশী বসত বাড়ির দুই দাগসহ অন্যান্য দাগের সাড়ে ২৭ শতক জমি অর্পিত সম্পত্তির তালিকা থেকে অবমুক্তের আদেশ দেন তৎকালিন সিনিয়র সহকারী জজ অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যাবর্তন অতিরিক্তি ট্রাইব্যুনালের বিচারক বেগম সেলিনা আক্তার। এ রায়ের পক্ষে সরকার ও এ সব জমির ওয়ারেশ নয় বিএনপি নেতা হুমায়ুন কবীর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আপিল করে। ২০২৩ সালের ১৬ মার্চ এক রায়ে অতিরিক্ত জেলা জজ ৪র্থ আদালতের বিচারক রায়ে মৃত নন্দ দুলালের ওয়ারেশদের সাড়ে ২৭ শতক জমির মধ্যে ৪৫, ৪৬, ৫১ ও ৫২ দাগের সাড়ে ৯ শতক জমি অর্পিত সম্পত্তির তালিকা থেকে অবমুক্তির আদেশ দেন। এ রায়ের বিপক্ষে ওই বছর হাইকোর্টে আপিল করেন সুকুমার কুন্ডু। যার নম্বর ৫৩৭৯ /২৩। ২০২৩ সালের ৪ ডিসেম্বর শুনানি শেষে এক আদেশে আপিলের চূড়ান্ত শুনানি না হওয়ায় পর্যন্ত বিরোধীয় জমির স্থিতিশীল অবস্থা বজায় রাখার আদেশ দেয় হয়।
এদিকে, ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কবির মাস্টার গং। গত ১ নভেম্বর বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুবকে দিয়ে স্থাপনা নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করিয়েছেন। সে কাজ এখনো চলমান।
এ বিষয়ে নন্দদুলাল কুণ্ডুর ওয়ারেশ তাপস কুন্ডু জানান, ‘আদালত ওই জমিতে নিষেধাজ্ঞা দিলেও হুমায়ুন কবির ওরফে কবির মাস্টারের লোকজন দিয়ে আমাদের প্রতিনিয়ত হুমকি দিত মামলা তুলে নিতে। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর কবির মাস্টার বেপরোয়া হয়ে উঠে। ৫ আগস্টের পর আদালতে নিষেধাজ্ঞা থাকা জমিতে স্থাপনা নির্মাণ করার জন্য জিনিসপত্র আনে। নির্মাণ কাজ বন্ধ করতে জেলা ও উপজেলা বিএনপির কাছে অভিযোগ দিই। কিছুদিন কাজ বন্ধ থাকলেও গত ১ নভেম্বর ওই জমিতে স্থাপনা নির্মাণ কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন বিএনপি নেতা টিএস আইয়ুব ও তার স্ত্রী। উদ্বোধনের পর নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন কবির মাস্টার।
তাপস কুণ্ডু দাবি করেন, স্থাপনা নির্মাণ উদ্বোধনের পর থানায় অভিযোগ করেছি। তারপরেও পুলিশ কোন ব্যবস্থা নেয়নি। বরং পুলিশের সামনে কবির মাস্টারের লোকজন আমাকে মারধর করে। আমরা খুবই আতংকে রয়েছি। এমনকি আমার স্ত্রী-স্বজনরাও তাদের ভয়ে জমি নিয়ে কোথাও বক্তব্য কিংবা অভিযোগ দিতে নিষেধ করেছে।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বাঘারপাড়ার ধলগা ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি হুমায়ুন কবির বলেন, ‘জমিতে স্থগিত আদেশের কোন কপি পাইনি। তবে মামলা চলমান রয়েছে। আগে স্থানীয় সংসদ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বাড়ি নির্মাণ করতে নিষেধ করেছিলেন; তাই করেনি। এখন আমাদের নেতা টিএস আইয়ূব কাজ শুরু ও উদ্বোধন করে দিয়েছে; তাই বাড়ি কাজ শুরু করেছি।’
এদিকে স্থিতিশীল আদেশ থাকায় ব্যক্তি জমিতে স্থাপনা নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করায় সমালোচনার মুখে পড়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুব। নাম না প্রকাশে উপজেলা বিএপির এক নেতা বলেন, ‘বিরোধপূর্ণ জমিতে নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করায় হুমায়ুন কবির একধরনের সাহস পেয়েছেন। এমনকি রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের অনেক বিশৃঙ্খলা কাজ করাতে সমালোচনার মুখে বিএনপি। এর মধ্যে দায়িত্বশীল জায়গায় থেকে এধরণের কাজ করা ঠিক হয়নি। অনেকেই সমালোচনা করে বলছেন হুমায়ুন কবির যেন সুলতান নগর গ্রামে টুইন টাওয়ারের পুঃনভিত্তিপ্রস্ত করালেন। সেই কাজের উদ্বোধন করলেন টিএস আইয়ূব।
এ বিষয়ে জানতে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ইঞ্জিনিয়ার টিএস আইয়ুবের নাম্বারে কয়েকদফা ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
তবে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, ‘এমন কোন অভিযোগ পাইনি। ব্যক্তির দায় কখনো দল নেবে না।’
বাঘারপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর আরিফ বলেন, ‘এমন কোন অভিযোগ পাইনি। তাছাড়া থানায় নতুন যোগদান করেছি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’