এস এম জালাল
যশোর টাউন হল ময়দানে আজ জেলা বিএনপির সমাবেশ। সমাবেশকে ঘিরে জেলা জুড়ে সাজ সাজ রব বইছে। সর্বত্র দলীয় নেতা-কর্মীরা দারুণভাবে উজ্জীবিত। সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ সমাবেশ থেকে তিনি নির্বাচনী বার্তা বলে জানিয়েছেন বিএনপির নেতারা। সমাবেশে সভাপতিত্ব করবেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগম। বিকেল তিনটায় যশোর টাউন হল ময়দানে এ সমাবেশ শুরু হবে।
সমাবেশ সফল করতে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা ৮টি উপজেলাসহ পৌর এলাকায় গণসংযোগ চালিয়েছে। ইতোমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির এড়াতে দলের স্বেচ্ছাসেবকের সাথে থাকবে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা। জেলা বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন এ সমাবেশে লক্ষাধিক লোকের সমাগম ঘটবে।
নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো, দ্রুত গণতান্ত্রিক যাত্রাপথে উত্তরণের জন্য নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা, রাষ্ট্রে পতিত ফ্যাসিবাদের নানা চক্রান্তের অপচেষ্টা মোকাবেলাসহ বিভিন্ন জনদাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে যশোর জেলা বিএনপি এ সমাবেশের আয়োজন করেছে।
গতবছর ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত। সেই থেকে প্রায় প্রতিদিন ছোট-বড় বিভিন্ন কর্মসূচি চলমান রয়েছে দলটির। এসব কর্মসূচিতে খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতসহ কেন্দ্র ও জেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকছেন। এরই মধ্যে আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সব পর্যায়ে নতুন কমিটি গঠনের প্রক্রিয়াও চলমান রয়েছে। এ অবস্থার মধ্যে আজ ১৮ ফেব্রুয়ারি জেলা বিএনপির সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সব মিলে জেলার নেতাকর্মীরা ব্যস্ত ও উজ্জীবিত হয়ে উঠেছেন।
সমাবেশে নেতা কর্মীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে কাজ করছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। জেলার আটটি উপজেলা, আটটি পৌরসভা ও ৯৩টি ইউনিয়নে গণসংযোগ করছেন। দলের ১৬ টি সাংগঠনিক ইউনিট বেশ সফল বলে জানিয়েছেন জেলা বিএনপি নেতৃবৃন্দ। জেলা থেকে থানা, পৌরসভা, ইউনিয়নের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে চলছে গণসংযোগ, প্রচার পত্র বিলি, মিছিল মিটিং। মূল লক্ষ্য আজকের সমাবেশকে সফল করা। আজ ঐতিহাসিক এ ময়দানে সমাবেশে মানুষের ঢল নামবে বলে মনে করছেন বিএনপির নেতারা।
জেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ নেওয়াজ ইমরান জানান, সমাবেশ সফল করতে ছাত্রদলের প্রতিটি ইউনিট এখন সক্রিয়। এ সমাবেশে ছাত্রদলের ব্যাপক সংখ্যক উপস্থিতি থাকবে।
জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রাজিদুর রহমান সাগর বলেন, বিগত দিনে ফ্যাসিস্টের রক্তচক্ষু উপেক্ষা এবং প্রশাসনের সর্বোচ্চ প্রতিবন্ধকতা পেছনে ফেলে অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের নেতৃত্বে আন্দোলন সংগ্রামের পাশাপাশি বিভিন্ন সভা সমাবেশ করেছি। হাসিনার পতনের পর উন্মুক্ত বাতাসে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সমাবেশকে ঘিরে আমার ইউনিটের প্রতিটি নেতাকর্মী দারুণভাবে উজ্জীবীত। পূর্বের যেকোন সমাবেশের চেয়ে এই সমাবেশে ছাত্রদল তার সর্বোচ্চ সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত থাকবে।
জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা আমির ফয়সাল বলেন, আমরা ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন করেছি এবং আন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটিয়েছি। সমাবেশকে ঘিরে দলীয় নেতাকর্মীরা দারুণভাবে উজ্জীবিত।
জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার রবিউল ইসলাম বলেন, বিএনপির সমাবেশ সফল করতে স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রতিটি ইউনিট সক্রিয় ছিলো। লিফলেট বিতরণ ও প্রস্তুতি সভা ও উপজেলা পর্যায়ে মিছিল মিটিং অব্যাহত রেখেছে। এ সমাবেশে স্বেচ্ছাসেবক দলের সর্বোচ্চ জনসমর্থন উপস্থিত থাকবে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, মানুষ অস্বাভাবিক বাজার ব্যবস্থার কারণে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো না। সব মিলিয়ে দেশের এই অবস্থার উত্তরণ ঘটাতে মানুষ দ্রুত সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন দেখেতে চায়। কেননা একটি গণতান্ত্রিক সরকার দেশ পরিচালনা করলেই কেবল দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি ঘটবে।
সদর উপজেলা বিএনপির সম্পাদক আনজারুল হক খোকন বলেন, সমাবেশ ঘিরে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত। সমাবেশ সফল করতে গ্রামে গ্রামে গণসংযোগ করায় সমাবেশে ব্যাপক জনসমাগম ঘটবে।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান খান বলেন, ৫ আগস্টের পর এই সমাবেশটি যশোরের ইতিহাসে স্মরণকালের শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক সমাবেশ হবে। দীর্ঘ ১৭ বছর বিএনপি জনগণের ভোট ও ভাতের অধিকারের জন্য আন্দোলন করেছে। জনগণের রায়ে একটি সরকার ক্ষমতায় এসে রাষ্ট্র পরিচালনা করুক। যাতে করে দেশের গণতন্ত্র টেকসই থাকে। সেই প্রত্যাশা নিয়ে আমাদের এই সমাবেশ।
তিনি বলেন, এ সমাবেশ থেকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নির্বাচনী বার্তা দেবেন । এ সমাবেশে লক্ষাধিক নেতাকর্মী ও সমর্থক উপস্থিত থাকবেন বলে জানান তিনি।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন বলেন, সমাবেশ সফল করতে বিএনপির সকল ইউনিট ও অঙ্গ সংগঠনগুলো ঐক্যবদ্ধ। সমবেশকে ঘিরে সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে। সমাবেশ সফল ও সার্থক করার লক্ষ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, সমাবেশ ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। সমবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হবে বলে আমরা আশাবাদী। সমাবেশস্থলে যাতে কোনো অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়, সেজন্য দলের স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করবে। অন্যদিকে আইনশৃংখলা বাহিনী তাদের দায়িত্ব পালন করবেন।
এ সমাবেশ সফল পথসভা, শহরে গণসংযোগ, প্রচারপত্র বিলি করেছে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল। শহরের লাল দীঘিস্থ দলীয় কার্যালয়ে থেকে এ মিছিল বের হয়ে শহরের চিত্রার মোড়, দড়াটনা, চুয়াডাঙ্গা বাজারসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রচারপত্র বিলি করে তারা। এ সময় মিছিলে উপস্থিত ছিলেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার রবিউল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা আমির ফয়সাল, সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্মল কুমার বিট, যুগ্ম-সম্পাদক রেজোয়ানুল ইসলাম খান রিয়েল, আলী হায়দার রানা প্রমুখ।