স্বাধীন মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ
বুধবার সকাল ১০ টায় বাঘারপাড়া থেকে চিকিৎসার জন্য যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে এসেছেন আবদুস সামাদ। কাউন্টারে টিকিট কাটতে গিয়ে বিপাকে পড়েন তিনি। কাউন্টার থেকে টিকিট না দিয়ে তাকে জানানো হয়েছে ডাক্তাররা আন্দোলন করছে এখন টিকিট দিতে পারবে না।
হাসপাতাল চত্বরে একটা এক্স-রে কাগজ হাতে দাঁড়িয়ে সদর উপজেলার বলরামপুর এলাকার ছবিরন বেগম। কোনো রকম টিকিট কেটে ডাক্তারের চেম্বরের সামনে অপেক্ষা করছিলেন তিনি। একটু পরেই ১০ থেকে ১৫ জন সাদা অ্যাপ্রোন পরা ছেলে মেয়ে ডাক্তারের রুমে রুমে প্রবেশ করে। পরে ছবিরন বেগমকে জানানো হয় ডাক্তারকে রোগী দেখতে দিচ্ছে না। এখন আর কোনো রোগী দেখা হবে না।
হাসপাতাল চত্বরে আব্দুস সামাদ, ছবিরন বেগমের মত ১০ থেকে ১৫ জন রোগী ও রোগীর স্বজনের সাথে কথা হয়। তারা অভিযোগ করে বলেন, ডাক্তার দেখাতে এসে শুনতে হচ্ছে ডাক্তাররা আন্দোলন করছে রোগী দেখবে না। দূর দূরন্ত থেকে আসা রোগীদের বাড়তি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। গরীব মানুষেরা স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা সেবা নিতে সরকারি হাসপাতালে আসে। কিন্তু সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারেরা ঠিকমত সেবা দিচ্ছেন না।
বাঘারপাড়ার আব্দুস সামাদ বলেন, ক্লিনিকে ডাক্তার দেখানোর মত টাকা নেই। আমরা দিন আনি দিন খাই। ক্লিনিকে ডাক্তার দেখাতে গেলে ৫শ’ থেকে ৬শ টাকা লাগবে। এত টাকা খরচ করার মত সামর্থ নেই। টিকিটের জন্য অপেক্ষা করছি। শুনলাম ডাক্তাররা নাকি আন্দোলন করছে রোগী দেখবে না। রোগীদের কষ্ট তারা কি বুঝবে।
সদরের বলরামপুরের ছবিরন বেগম বলেন, রোজা থেকে হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে এসেছি। আমার মত অনেকেই এসেছে। রোজার মাসে সকাল সকাল হাসপাতালে আসলাম। ভাবলাম দ্রুত ডাক্তার দেখায়ে বাড়ি চলে যাবো। এখানে এসে দেখছি অন্য খেলা। সব ডাক্তারা চলে যাচ্ছে আন্দোলন করতে। রোগী দেখবে না নাকি। বসারও জায়গা পাচ্ছি না। বয়স হয়েছে এত কষ্ট করতে পারি না এখন। আর একটু দেখি অপেক্ষা করে ডাক্তার বসে যদি।
এদিকে, হাসপাতালে রোগীদের সেবা বঞ্চিত করে আন্দোলনে নেমেছে এন্টার্নী ডাক্তার অ্যাসোসিয়েশন (আইডিএ)। ন্যাশনাল স্ট্রিয়ারিং কমিটির দাবির সাথে একাগ্রতা প্রকাশ করে তারা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন। ইনডোর ও আউটডোরে সকল প্রকার সেবা বন্ধ রেখে, হাসপাতালের গেটের সামনে চিকিৎসক ও মেডিকেল শিক্ষার্থীরা অবস্থান ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছেন।
আইডিএ যশোরের সভাপতি ডা. ইমাম আল আজমের নেতৃত্বে এই অবস্থান ও বিক্ষোভ কর্মসূচি করা হয়। সংগঠনটির সহ সভাপতি ডা. মাসুদুর রহমান বলেন, আইসিইউ, পুরুষ ও মহিলা সার্জারি ওয়ার্ড, গাইনি ওয়ার্ড, কার্ডিওলজি ওয়ার্ড ও জরুরি বিভাগ চালু রাখা হয়েছে। বাকি ওয়ার্ডগুলোর চিকিৎসকরা তাদের সাথে একমত পোষণ করে কর্মবিরতি পালন করছে।
হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে এসে রোগীদের ভোগান্তির বিষয়ে যশোর জেলার সিভিল সার্জন ডা. মাসুদ রানা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নো কমেন্টস।