নিজস্ব প্রতিবেদক
দীর্ঘ তিন বছর বন্ধ থাকার পর যশোরের শিল্পাঞ্চল নওয়াপাড়া রাজঘাটে অবস্থিত রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল যশোর জুট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড (জেজেআই) চালু হতে যাচ্ছে। এ পর্যায়ে ইজারার মাধ্যমে নতুন নামে চালু হচ্ছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই পাটকলটি। পাটকলটি ইজারা গ্রহণকারী আকিজ গ্রুপের হাতে পাটকলটি তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। জানুয়ারি মাসে কারখানাটি আকিজ জুট পার্ক নামে চালু হবে বলে জানিয়েছে লিজ গ্রহীতা আকিজ গ্রুপ।
ইজারা নেয়ার পর এখন কারখানা গোছানোর কাজ চলছে। এর জন্য চুক্তিভিত্তিক ৪০-৫০ জন শ্রমিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নতুন কিছু মেশিন কেনা হয়েছে। সেগুলো বসানোর কাজ চলছে। তবে নতুন ব্যবস্থাপনার ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না পাটকলটির চাকরি হারানো শ্রমিকরা। তাদের দাবি, ইজারার পরিবর্তে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় আবারও পাটকলটি চালু করা হোক।
তিন বছর আগে খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি পাটকল বন্ধ হয়ে যায়। তার মধ্যে একটি জেজেআই জুট মিল। মিলটি বন্ধ হওয়ায় ওই সময় কর্মহীন হয়ে পড়েন জেজেআই মিলের অন্তত ৫ হাজার শ্রমিক। এখন তারা অপেক্ষায় আছেন, একদিন পাটকলটি চালু হবে, আর তাদের সংকট দূর হবে। কথা ছিল তিন মাসের মধ্যে মিল চালুর উদ্যোগ নেয়া হবে। কিন্তু সেই উদ্যোগ তিন বছর পর বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে।
এদিকে দীর্ঘদিন মিলটি বন্ধ থাকায় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে গেছে প্রায় ৪৫০টি তাঁতসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি। ফলে পাটকলটি চালু হলে এই যন্ত্রপাতি দিয়ে উৎপাদন শুরু করা সম্ভব কি না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকায় শ্রমিক কোয়ার্টার বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
শ্রমিকরা জানান, লোকসানের কারণ দেখিয়ে ২০২০ সালের ২ জুলাই নওয়াপাড়ার রাষ্ট্রায়ত্ত জেজেআই ও কার্পেটিং জুট মিলসহ খুলনা অঞ্চলের ৯টি পাটকল বন্ধ করে দেয় সরকার। তখন বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন (বিজেএমসি) ঘোষণা দিয়েছিল, মিলগুলো ইজারা দিয়ে আধুনিকায়ন করে তিন মাসের মধ্যে আবার চালু করা হবে। কিন্তু তা হয়নি। মিল বন্ধ হওয়ায় অনেকে এলাকা ছেড়ে সপরিবারে নিজ জেলায় ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন। বন্ধ হয়ে গেছে কারখানাকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য ও দোকানপাট। নিষ্প্রাণ হয়ে গেছে এই শিল্প এলাকা।
বিজেএমসি সূত্র জানায়, খুলনার ক্রিসেন্ট, খালিশপুর, ইস্টার্ন এবং যশোরের নওয়াপাড়া রাজঘাটের কার্পেটিং জুট মিলও ইজারার বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। খুলনার স্টার ও প্লাটিনাম জুট মিল ইজারা দেওয়ার জন্য আবারও দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া চলছে।
জেজেআই মিলের সিবিএর সাবেক সভাপতি ইকবাল হোসেন খান বলেন, ‘মিল বন্ধের পর তিন বছর পেরিয়ে গেলেও সব শ্রমিকের বকেয়া এখনও পরিশোধ করা হয়নি। আমাদের দাবি ছিল, মিলগুলো আধুনিকায়ন করে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় চালু করা হোক। কিন্তু আমাদের দাবি উপেক্ষা করে মিল ইজারা দেওয়া হয়েছে।’
পাটকল রক্ষায় গঠিত সম্মিলিত নাগরিক পরিষদের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট কুদরত-ই-খুদা বলেন, শ্রমিকদের দাবি ইজারার মাধ্যমে নয়, রাষ্ট্রীয় মালিকানায় রেখে মিল আবার চালু করা হোক। এ দাবিতে শ্রমিকরা সভা-সমাবেশও করেছেন।
কার্পেটিং জুট মিল সিবিএর সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফারাজী নজরুল ইসলাম বলেন, ইজারার মাধ্যমে মিল চালুর পর আগের শ্রমিকদের নিয়োগ দেওয়া হবে কি না এবং বেতন কাঠামো কেমন হবে, তা আমরা জানি না। আমাদের দাবি, শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে যেন আগে কর্মরতদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। এ ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত থাকাকালে যে বেতন কাঠামো ছিল, তা বহাল রাখার দাবি জানান তিনি।
আকিজ গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান আকিজ জুট মিলের নির্বাহী পরিচালক (ইডি) আব্দুল হাকিম বলেন, বন্ধ থাকা জেজেআই জুট মিলের ২৭ একর জমি আকিজ গ্রুপ ইজারা নিয়েছে। মিলটি চালু করার জন্য মিলের অভ্যন্তরে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ চলছে। আগামী মাসের মধ্যে মিলটি চালু করা হবে বলে আশা করি। ইতোমধ্যে রক্ষণাবেক্ষণের জন্যে ৪০-৫০ জন শ্রমিক চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শেষ হলে শ্রমিক-কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হবে।
মিলের পুরোনো শ্রমিকদের নিয়োগ দেয়া হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে যেসব শ্রমিক কারখানাগুলোতে কাজ করতেন, তাদের মধ্যে যারা কর্মক্ষম তাদের নিয়োগ দেয়া হবে। দক্ষ শ্রমিকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হবে। মিলটি চালু হলে এলাকার অনেকের বেকারত্ব ঘুচবে।
বিজেএমসির খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের আরসিও গোলাম রব্বানী বলেন, প্রায় চার মাস আগে যশোরের শিল্পাঞ্চল নওয়াপাড়া রাজঘাট এলাকার জেজেআই জুট মিলটি ইজারাগ্রহীতা প্রতিষ্ঠান আকিজ গ্রুপকে হস্তান্তর করা হয়। তারা কারখানাটি চালু করতে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছে। আগে পাটকলগুলোতে যেসব পণ্য উৎপাদন হতো, আকিজ গ্রুপ এখনও একই পণ্য উৎপাদন করবে। কারণ তাদের কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। যদিও নিয়োগের ক্ষেত্রে ইজারা নেয়া প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা রয়েছে।
বিজেএমসির মহাব্যবস্থাপক নাসিমুল ইসলাম বলেন, আকিজ গ্রুপ ৩০ বছরের জন্য জেজেআই মিল ইজারা নিয়েছে। আশা করছি, খুব তাড়াতাড়ি তারা মিলটি চালু করবে।