কালীগঞ্জ প্রতিনিধি
নতুন ঘরে মাথা গোজার ঠাঁই মিলেছে জন্ম থেকে প্রতিবন্ধী দুই ভাই বোনের। প্রতিবন্ধী লিপি দাস (২৬) ও শিমুল দাস (২২) জন্মের পর থেকেই বাড়ির উঠানে এক ঝুপড়িতে দুর্বিসহ জীবন কাটাচ্ছিলেন। তাদের করুণ অবস্থা দেখে কালীগঞ্জ ইউএনও’র সার্বিক প্রচেষ্টায় তৈরি করা হয় নতুন ঘর।
গতকাল দুপুরে উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর সিদ্দিক ঠান্ডু, ইউএনও, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানসহ এনজিও ও গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতিতে তাদেরকে ওই ঘরে তোলা হয়। প্রতিবন্ধী ভাই বোন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার সিঙ্গি গ্রামের বাসিন্দা।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসরাত জাহান জানান, বেশ কিছুদিন আগে অসহায়দের মাঝে খাবার বিতরণের ছবিতে এক মহিলাকে শুয়ে থেকে খাবার নেয়ার ছবি দেখেন। খোঁজ খবর নিয়ে কয়েকদিন পর তিনি সরেজমিনে ওই বাড়িতে যান। সেখানে দেখতে পান বসত ঘরের অভাবে বাড়ির উঠানে একটি টিনের ছাবড়ার নিচে প্রতিবন্ধী দুই ভাই বোন শুয়ে আছে। যা তার মনে বেশ দাগ কাটে। তখনই পরিকল্পনা করেন তাদের জন্য একটি ঘরের ব্যবস্থা করার। সে মোতাবেক তিনি ব্যক্তিগত প্রচেষ্টা ও কিছু এনজিও প্রতিষ্ঠানসহ সুধীজনদের আর্থিক সহায়তায় পাকা ঘরের নির্মাণ কাজ শেষ করেন। তিনি জানান, এতিম দুই প্রতিবন্ধী পরিবারের জন্য আরো সহায়তার চেষ্টা করা হবে।
এনজিও কর্মী সোনার বাংলা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শিবুপদ বিশ^াস জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্তার মানবিক প্রচেষ্টায় প্রতিবন্ধী দুই ভাই বোনকে একটি ঘর নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে। ইট ও টিনের তৈরি ঘরটি নির্মাণে প্রায় ৮০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
ঘর প্রদানকালে প্রতিবন্ধীদের বাড়িতে উপস্থিত তার বড় ভাই হতদরিদ্র ভ্যানচালক রিপন দাস জানান, তার দুই ভাই বোন জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী। চলাফেরা এমনকি নিজেরা হাত দিয়েও ঠিকমতো খেতে পারেন না। তিনি জানান, ১৫ বছর আগে তাদের বাবা ও তার এক বছর পর মা মারা যান। সেই থেকে প্রতিবন্ধী ভাই বোনকে পিতৃস্নেহে আগলে রেখেছেন। নিজে ভ্যান চালান। স্ত্রী অন্যের পান বরজে কামলা খাটে। তাদের দু’জনের আয়ে কোনরকমে চলে সংসার। এখন ঘরের ব্যবস্থা হলেও প্রতিবন্ধী ভাই বোনসহ পরিবারটির ভরণপোষণ নিয়েও দুঃশ্চিন্তা রয়েই গেল।
রিপন দাস আরো জানান, সংসারে তার স্ত্রী, দুই সন্তান ও প্রতিবন্ধী দুই ভাই বোন নিয়ে ৬ সদস্য। ভিটে বাড়ি ছাড়া মাঠে তাদের কোন জমাজমি নেই। প্রতিবন্ধী দুই ভাই বোনের সরকারি ভাতার কার্ড আছে। কিন্তু সেই ভাতার টাকা দিয়ে মাসের খাবার তো দূরের কথা, ওষুধ কেনার টাকাও থাকে না।
কালীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর সিদ্দিক ঠান্ডু বলেন, পরিবারটি অত্যন্ত অসহায়। প্রতিবন্ধী দুই ভাই বোনসহ পরিবারটির জন্য তারা আরো সহযোগিতার ব্যবস্থা করবেন। এ সময় উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শাহানাজ পারভীনও পরিবারটির প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়াতে একমত প্রকাশ করেন।

Share.
Leave A Reply Cancel Reply
Home
News
Notification
Search
Exit mobile version