বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ানো প্রতিরোধ করতে গত বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সন্ধ্যা থেকে বন্ধ করে দেয়া হয় মোবাইল সিম অপারেটরগুলোর ইন্টারনেট কানেকশন। এদিন রাজধানীতে আন্দোলনকারীদের মধ্যে কিছু দুষ্কৃতকারীরা আগুন দেয় ডাটা সেন্টারে। কেটে দেয় ব্রডব্যান্ড লাইন। তারপর থেকে সারাদেশে ব্রডব্যান্ড বা ওয়াইফাই ইন্টারনেট সংযোগও বিছিন্ন হয়ে যায়। এরপর থেকে বুধবার (২৪ জুলাই) দিবাগত রাত থেকে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে ব্যক্তি পর্যায়ে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট।
ইন্টারনেট সেবা সাময়িক বন্ধ থাকায় লক্ষাধিক টাকা লোকসানের সম্মুখীন হয়েছেন ইন্টারনেট নির্ভর যশোর জেলার ফ্রিল্যান্সাররা। যশোর শহরের গাজিরবাজার এলাকার ফ্রিল্যান্সার আকিব জাবেদ বলেন, প্রায় এক সপ্তাহ ইন্টারনেট কানেকশন এবং ব্রডব্যান্ড সংযোগ ছিল না।
ফলে ওয়েবসাইটে কোন কাজ না করতে পারায় আমাদের মতো ফ্রিল্যান্সাররা বেকার সময় কাটিয়েছেন। ব্যক্তিগতভাবে আমার হাতে তিনটি প্রজেক্ট ছিল সেই তিনটি প্রজেক্টে প্রায় চার লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু হয়েছে গতকাল রাত থেকে, তবুও অনেক ধীরগতি। তবে ফ্রিল্যান্সারদের এ ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা যাবে বলে মনে হয় না। আকাশ হোসেন নামের আরেক ফ্রিল্যান্সার বলেন, আমরা চারজন একসাথে ফ্রিল্যান্সিং করি।
আমাদের যে পার্মানেন্ট গ্রাহক ছিল সে আমাদের সপ্তাহে ৪০০ ডলার দিত। গত ছয় দিন ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় আমাদের প্রজেক্টগুলো বন্ধ। এতে আমাদের প্রায় লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমরা সকলেই স্টুডেন্ট এবং এর উপরেই আমাদের পরিবার নির্ভরশীল। এটিই আমাদের একমাত্র আয়ের উৎস।
তিনি আরও বলেন, ‘ইন্টারনেট সংযোগ চালু হয়েছে, তবে এ ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা যাবে না। বরং ওই বিদেশি গ্রাহক আমাদের হাতছাড়া হয়ে যাবে, আমরা আর কাজ পাবো না, এটা নিয়ে আমাদের আরও ভোগান্তিতে পড়তে হবে।
যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার কায়েমকোলা এলাকার অন্যতম ফ্রিল্যান্সার এবং কম্পিউটার প্রশিক্ষণ সেন্টারের মালিক বিএম সাগর হোসাইন জানান ‘গত বৃহস্পতিবার থেকে ইন্টারনেট কানেকশন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তার প্রতিষ্ঠানের ফ্রিল্যান্সারদের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এ কয়দিনে প্রায় লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে ওই প্রতিষ্ঠানে।’
তিনি আরও জানান, ইন্টারনেট সংযোগ গতকাল রাত থেকে চালু হয়েছে। ব্যক্তিপর্যায়ে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট লাইন দিয়ে আমাদের মতো ফ্রিল্যান্সাররা কাজ করি। ইন্টারনেটে এখনও অনেক ধীরগতি। ফলে এখনো অনেক ওয়েবসাইট ওপেন করা যাচ্ছে না বা ওপেন হতে সময় লাগছে। এতে করে মনে হচ্ছে এভাবে আরও দু একদিন কেটে যাবে। সরকারের নিকট দাবি দ্রুত সম্ভব ইন্টারনেট কানেকশন পুরোপুরি স্বাভাবিক করে দেয়া হোক।
যশোরের মণিরামপুর উপজেলার ফ্রিল্যান্সার রাকিব বিশ্বাস জানান, তার প্রতিষ্ঠানে প্রায় ১০ জন ফ্রিল্যান্সার কাজ করেন। তাদের সকলের হাতেই বিভিন্ন বিদেশি প্রজেক্টের কাজ চলমান ছিল। ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সে কাজগুলো অনেকেরই হাতছাড়া বা বাতিল হয়ে গেছে। ফলে ওই সকল কাজের মূল্য তারা পাচ্ছেন না। ইন্টারনেট সংযোগ চালু হওয়ার পরেও ধীরগতিতে পুরোপুরি স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়নি তার ফ্রিল্যান্সিং প্রতিষ্ঠানে।