বাংলার ভোর ডেস্ক
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিরক্ষা থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ক্রিটিকাল থ্রেটস প্রজেক্ট এবং ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার (সিটিপি-আইএসডাব্লিউ) জানিয়েছে, ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী ইরানের বিভিন্ন স্থানে, ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তুতে ইরানের হামলার তুলনায় পাঁচগুণ বেশি বিমান হামলা চালিয়েছে। সিটিপি-আইএসডব্লিউ তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, ১৩ জুন ইরানের ওপর ইসরায়েলের আক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর দ্বারা ইরানের ওপর ১৯৭টি বিমান হামলার রিপোর্ট বা নিশ্চিতকরণ তথ্য পাওয়া গেছে। বিপরীতে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে থিঙ্ক ট্যাঙ্কগুলো ইসরায়েলে ৩৯টি ইরানি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বা ইন্টারসেপ্টর আঘাতের রিপোর্ট বা নিশ্চিতকরণ তথ্য পেয়েছে।
সিটিপি-আইএসডব্লিউ সম্প্রতি ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার আকার সীমিত হয়ে আসার বিষয়টি লক্ষ্য করেছে। ইসরায়েলি বিমান হামলায় ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র লঞ্চার ও ক্ষেপণাস্ত্র সংরক্ষণাগার ধ্বংস হওয়াটাকে এর কারণ বলে ধারণা করা হয়েছে।
বুধবার ভোরে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে মধ্য ইসরায়েলের একটি এলাকায় আগুন লেগেছে। ইরানের ফার্স নিউজ জানিয়েছে, লক্ষ্যবস্তুগুলোর মধ্যে একটি ছিল উত্তর ইসরায়েলে অবস্থিত মেরন বিমানঘাঁটি। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বলছে, মেরন বিমানঘাঁটিতে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হেনেছে কিনা, তার কোনো স্পষ্ট ইঙ্গিত নেই।
ইসরায়েলে যুদ্ধকালীন সময়ে সামরিক সেন্সরশিপ থাকে এবং যদি সংবেদনশীল লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করা হয়, তাহলে সংবাদমাধ্যমগুলোকে তা প্রকাশ করার অনুমতি দেয়া হয় না। এর আগে মঙ্গলবার ইরানের একটি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের হার্জলিয়া এলাকায় সরাসরি আঘাত হেনেছিল। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো বলেছে, সেখানে একটি বাসে আগুন লেগেছে। তবে ইরানের সংবাদমাধ্যমগুলো বলেছে, হামলাস্থলটি ইসরায়েলের একটি সামরিক স্থাপনা ছিল।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, গত কয়েক ঘণ্টায় তাদের ৫০টিরও বেশি যুদ্ধ বিমান ইরানে একটি বড় আক্রমণ চালিয়েছে। এসব হামলায় ইরানের একটি ‘ সেন্ট্রিফিউজ উৎপাদন কেন্দ্র’- যা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ও বেশ কয়েকটি অস্ত্র উৎপাদন কারখানাকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।
টেলিগ্রামে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আরো বলেছে, এই হামলা ‘সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে’ পরিচালিত হয়েছে, যা দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা সরবরাহ করেছে। খবর আল জাজিরার। সেনাবাহিনীর দাবি, এই হামলা ছিল ‘ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচিকে ধ্বংস করতে পরিচালিত একটি বৃহৎ প্রচেষ্টার অংশ’। তবে ইরান বারবার দাবি করে এসেছে, তারা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে না। জাতিসংঘের পারমাণবিক তদারকি সংস্থা আইএইএ এবং যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সর্বশেষ প্রতিবেদনে একই ধরনের মূল্যায়ন করা হয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর বিবৃতিতে আরো বলা হয়, তারা এমন সব উৎপাদন কারখানাকেও লক্ষ্য করেছে, যেখানে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের কাঁচামাল ও উপাদান তৈরি করা হতো।
ইসরায়েলি হামলায় ইরানে ৫৮৫ জন নিহত
ইরানে ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৫৮৫ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটনভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টস। সংগঠনটি আরো জানায়, নিহতদের মধ্যে ২৩৯ জন বেসামরিক নাগরিক এবং ১২৬ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য রয়েছেন। এছাড়া, হামলায় আহত হয়েছেন ১ হাজার ৩২৬ জন। তবে ইরান সরকার এখনও নিয়মিতভাবে হতাহতের সংখ্যা প্রকাশ করছে না। সর্বশেষ সোমবার প্রকাশিত সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ইসরায়েলি হামলায় ২২৪ জন নিহত এবং ১ হাজার ২৭৭ জন আহত হয়েছে বলে জানানো হয়েছিল। ইরান-ইসরায়েলের সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িয়ে পড়তে পারে এমন আশঙ্কার মধ্যেই পূর্ব ইংল্যান্ডের মার্কিন ঘাঁটি থেকে বেরিয়েছে চারটি যুদ্ধবিমান। বুধবার (১৮ জুন) ভোরে রয়্যাল এয়ারফোর্স লেকেনহিথ থেকে অন্তত চারটি এফ ৩৫ বিমান ঘাঁটি ছেড়েছে বলে বিবিসির খবরে বলা হয়েছে। এই বিমানগুলোর সঙ্গে ছিল একটি জ্বালানির ট্যাংকার বিমানও।
এছাড়া, ইরানের মাটির গভীরে তৈরি স্থাপনায় হামলা করতে পারে যে বি টু স্পিরিট বোম্বার বিমান, সেগুলোও ভারত মহাসাগরে ইরান থেকে চার হাজার কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে একটি ঘাঁটিতে রাখা হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
গত তিন দিনে যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত ৩০টি মিলিটারি বিমান যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্পেইন, স্কটল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের বিভিন্ন ঘাঁটিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এসব বিমান ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের কারণে ইউরোপে নেয়া হয়েছে কিনা, তা এখনো নিশ্চিতভাবে জানা যাচ্ছে না।
অন্যদিকে, বিবিসির মার্কিন সহযোগী সিবিএস নিউজের সূত্র বলছে, ইরানের পরমাণু কার্যক্রমের কেন্দ্রগুলোতে হামলায় ইসরায়েলের সঙ্গে যোগ দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। এমন পরিস্থিতিতে বুধবার ভোরে ইরানের শীর্ষ নেতা আলী খামেনি বলেছেন, ইরান জায়নিস্টদের সঙ্গে সমঝোতা করবে না।
মঙ্গলবার রাতে ‘এক্স’ বার্তায় খামেনি লিখেছেন, “আমাদের সন্ত্রাসী ইহুদিবাদী শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কঠোর জবাব দিতে হবে। আমরা ইহুদিবাদীদের কোনো দয়া দেখাব না।
এর আগে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির বিষয়ে ইঙ্গিত করে ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে দেন। সেখানে তিনি বলেন, “আমরা ঠিক জানি তথাকথিত ‘সর্বোচ্চ নেতা’ কোথায় লুকিয়ে আছেন।
এর আগে দেয়া আরেক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, “ইরানের আকাশসীমা আমাদের নিয়ন্ত্রণে। এই পোস্ট দুটির পরপরই তৃতীয় আরেকটি পোস্টে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উল্লেখ করেন, তিনি ইরানের নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ চান। ট্রাম্পের এসব মন্তব্যের পরপরই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ’ শুরুর ঘোষণা দিয়েছেন খামেনি।
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপের আহ্বান পুতিনের
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইসরায়েল-ইরান সংকট নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এবং মধ্যস্থতা করার প্রস্তাবও দিয়েছেন। রাশিয়ার রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত সংবাদ সংস্থা তাস জানিয়েছে, পুতিন এই বিষয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান-এর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন।
ফোনালাপে চলমান উত্তেজনা নিয়ে উভয় নেতা ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছেন। তারা বিশ্বাস করেন, এই সংঘাতের দ্রুত সমাধান প্রয়োজন, না হলে এর প্রভাব গোটা অঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
পুতিন জানান, রাশিয়া সংকট নিরসনে মধ্যস্থতা করতে প্রস্তুত এবং তিনি ইতোমধ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক নেতার সঙ্গে আলোচনায় রয়েছেন।
এই মন্তব্যগুলো এমন সময় এসেছে যখন মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা তুঙ্গে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সম্ভাব্য বড় ধরনের যুদ্ধ এড়াতে কূটনৈতিক সমাধানের খোঁজে আছে।
রাশিয়ার প্রস্তাবিত মধ্যস্থতা কূটনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ দেশটি ইসরায়েল ও ইরান উভয়ের সঙ্গেই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছে এবং পশ্চিমা বিশ্বের প্রভাবের বাইরে থেকে কিছুটা নিরপেক্ষ অবস্থানে থেকে আলোচনার সুযোগ তৈরি করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ারি রাশিয়ার
রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র যদি সরাসরি ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা দেয়, তাহলে সেটি মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতিকে মারাত্মকভাবে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। রাশিয়ার সংবাদ সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স লিখেছে, রিয়াবকভ বলেছেনম, “আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করছি; ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা দেওয়া বা তা বিবেচনাও করা যেন না হয়। এর ফলে পুরো অঞ্চল বিস্ফোরণমুখী হয়ে উঠতে পারে।” মস্কো বর্তমানে ইসরায়েল ও ইরান- উভয়ের সঙ্গেই সরাসরি যোগাযোগে রয়েছে, যাতে উত্তেজনা কমানো যায়। রাশিয়া মনে করে, এখন দরকার কূটনৈতিক সংলাপ ও উত্তেজনা প্রশমনের উদ্যোগ। রাশিয়া পূর্বে মধ্যপ্রাচ্যে (বিশেষত সিরিয়ায়) একটি প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে ভূমিকা রেখেছে এবং এখন ইসরায়েল-ইরান সংঘাতেও নিজেদের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে উপস্থাপন করতে চায়।
এই হুঁশিয়ারি এমন সময়ে এসেছে যখন যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে ইউএসএস নিমিৎজ বিমানবাহী রণতরী মোতায়েন করেছে এবং মধ্যপ্রাচ্যে অতিরিক্ত যুদ্ধবিমান পাঠিয়েছে, যা রাশিয়ার দৃষ্টিতে সংঘাতের বিস্তার ডেকে আনতে পারে।
জাতির উদ্দেশে খামেনি: আরোপিত যুদ্ধ বা শান্তি মানবে না ইরান, আত্মসমর্পণও করবে নাইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের হুমকিতে নতুন উত্তেজনা তৈরি হলেও ইরান তার অবস্থান থেকে সরবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়ে দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন, “কারো আরোপিত যুদ্ধ কিংবা শান্তি, ইরান কোনোটাই মেনে নেবে না, আত্মসমর্পণও করবে না। বুধবার (১৮ জুন) জাতির উদ্দেশে ভাষণে আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে তার দেশের কঠোর অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, ইরান যেমন আরোপিত যুদ্ধ দৃঢ়ভাবে প্রতিরোধ করবে, তেমনি আরোপিত শান্তির বিরুদ্ধেও দৃঢ় অবস্থানে থাকবে। এই জাতি কারো চাপের মুখে কখনোই আত্মসমর্পণ করবে না। তেহরানভিত্তিক বার্তা সংস্থা তাসনিম খামেনির বক্তব্য সরাসরি সম্প্রচার করেছে।
খামেনি বলেন, যারা ইরানের ইতিহাস ও জাতিগত চরিত্র জানে, তারা জানে, হুমকির ভাষায় ইরানিরা কখনোই সাড়া দেয় না।
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। তাতে ঘি ঢালছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই যুদ্ধে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে ভাবছেন বলে খবর রয়েছে। ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের সংঘাতের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়েছে।
ট্রাম্প প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে বলেছেন, আমরা জানি ইরানের তথাকথিত ‘সুপ্রিম লিডার’ কোথায় লুকিয়ে আছেন। তিনি সহজ লক্ষ্যবস্তু। তবে আমরা এখনই তাকে হত্যা করব না, অন্তত এখন নয়।
খামেনি ট্রাম্পের এই হুমকির সরাসরি জবাব দিয়ে বলেন, আমেরিকানদের বুঝতে হবে, তাদের যেকোনো সামরিক হস্তক্ষেপের পরিণাম হবে ভয়াবহ ও অপূরণীয়। ইরান বর্তমানে একাধিক ফ্রন্টে চাপের মুখে রয়েছে। গাজায় ইসরায়েলি অভিযান নিয়ে তেহরান সরাসরি তেলআবিবের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। সৌদি আরব ও আমিরাতের সঙ্গে সাম্প্রতিক কিছু পুনর্মিলনের পরও শিয়া-সুন্নি উত্তেজনা পেছনের দরজা দিয়ে এখনো সক্রিয়।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আসছে এবং নতুন করে নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে খামেনেয়ির ভাষণে একটি বার্তা স্পষ্ট, আর তা হলো: ইরান কোনো বিদেশি চাপ, হুমকি বা রাজনৈতিক সমঝোতার নামে জোরপূর্বক শান্তি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা মেনে নেবে না। তাদের প্রতিরোধ, আত্মমর্যাদা ও স্বাধীনতা প্রশ্নে তারা আপসহীন।
জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে আমরা যেকোনো সংকট কাটিয়ে উঠব: ইরানি প্রেসিডেন্ট
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসউদ পেজেশকিয়ান মন্ত্রিসভা বৈঠকে বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি চলমান সংকট মোকাবিলায় ‘জাতীয় ঐক্য রক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা’ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, যদি জনগণ আমাদের পাশে থাকে, তাহলে কোনো সমস্যাই দেশের জন্য হুমকি হয়ে উঠতে পারবে না। এজন্যই আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপের লক্ষ্য হওয়া উচিত জাতীয় ঐক্য অটুট রাখা। আমি বিশ্বাস করি, জাতীয় সংহতি ও ঐক্যের মাধ্যমে আমরা যেকোনো সংকট সফলভাবে অতিক্রম করতে পারব। তাসনিম বার্তা সংস্থার বরাতে জানা যায়, প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সহানুভূতি ও সমর্থনের প্রস্তাবের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন এবং মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের এসব দেশের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
যুদ্ধের ঘোষণা দিলেন খামেনি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুমকির পর মুখ খুলেছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেয়া এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, “যুদ্ধ শুরু হলো।” কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
খামেনির এই ঘোষণাটি এসেছে এমন এক সময়, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের শীর্ষ নেতাকে নিয়ে একাধিকবার মন্তব্য করেছেন।
মঙ্গলবার রাতে ‘এক্স’ বার্তায় খামেনি লিখেছেন, আমাদের সন্ত্রাসী ইহুদিবাদী শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে কঠোর জবাব দিতে হবে। আমরা ইহুদিবাদীদের কোনো দয়া দেখাব না। এর আগে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির বিষয়ে ইঙ্গিত করে ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে দেন। সেখানে তিনি বলেন, আমরা ঠিক জানি তথাকথিত ‘সর্বোচ্চ নেতা’ কোথায় লুকিয়ে আছেন।
এর আগে দেওয়া আরেক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, ইরানের আকাশসীমা আমাদের নিয়ন্ত্রণে। এই পোস্ট দুটির পরপরই তৃতীয় আরেকটি পোস্টে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উল্লেখ করেন, তিনি ইরানের নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ চান। মূলত ট্রাম্পের এসব মন্তব্যের পরপরই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ শুরুর’ ঘোষণা দিলেন খামেনি।
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিতে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইরান
ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি যোগ দিলে চুপ থাকবে না তেহরান। সে কারণে এখন থেকেই মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিগুলোকে নিশানা করে হামলা চালানোর জন্য প্রস্তুত হচ্ছে ইরান। ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’ পত্রিকাকে এমনটাই জানিয়েছেন ইরানের দুই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। তারা বলেছেন, ইরান প্রথমে ইরাকে থাকা মার্কিন বাহিনীকে লক্ষ্য করে হামলা চালাবে। এরপর অন্যান্য আরব দেশে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিগুলোতে হামলা চালাবে ইরান। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ইরানের ফরদো পারমাণবিক কেন্দ্রে ইসরায়েলের হামলা পরিকল্পনায় সমর্থন দেয়ার কথা বিবেচনা করার মধ্যেই ইরানের মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে হামলা প্রস্তুতির এই খবর এল। ইরানের পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত ফোর্দো পারমাণবিক স্থাপনা, যেটি এখনও পর্যন্ত টিকে রয়েছে, সেটিকে লক্ষ্য করেই নতুন হামলার পরিকল্পনা চলছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী চান, ইরানের ভূগর্ভস্থ পারমাণবিক স্থাপনা ফর্দোয় বোমা ফেলুক যুক্তরাষ্ট্র। কারণ, এই স্থাপনা ধ্বংস করতে যে বোমা দরকার তা কেবল যুক্তরাষ্ট্রের আছে। এ পরিস্থিতিতেই ইরানের আশঙ্কা, যে কোনও সময় যুক্তরাষ্ট্র তাদের উপর হামলা চালাতে পারে। আর এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে পাল্টা জবাব দেবে ইরানও। তেহরানের কর্মকর্তারা আরও সতর্ক করে বলেছেন, প্রয়োজনে ইরান হরমুজ প্রণালীতে মাইন পেতে দিতে পারে। এই প্রণালী বিশ্বব্যাপি জ্বালানি সরবরাহের একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ। সেখানে মাইন পেতে দেয়া হলে আন্তর্জাতিক জাহাজ চলাচলে বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। এতে বিশ্বজুড়ে জ্বালানির দাম বাড়তে পারে হঠাৎ করেই।
তাছাড়া, ইরান-সমর্থিত ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরাও আবার লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এর মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উড়োজাহাজগুলোকে আটলান্টিক পেরিয়ে যেতে দেখা গেছে, যা ওয়াশিংটনের তরফে সামরিক প্রস্তুতি জোরদারের ইঙ্গিত বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ওদিকে, দ্য টেলিগ্রাফকে একজন মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, ট্রাম্প এখন এই সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি জড়ানোর ব্যাপারে আগের চেয়ে অনেক বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।