বাংলার ভোর ডেস্ক
ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দ্বারপ্রান্তে দাবি করে ইসরায়েল গত সপ্তাহে দেশটির বিরুদ্ধে ব্যাপক হামলা চালায়, যার জবাবে সঙ্গে সঙ্গে তেহরানও পাল্টাহামলা চালায়। ১৩ জুন থেকে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় এখন পর্যন্ত ২৫ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ২২৪ জন নিহত হওয়ার খবর জানিয়েছেন ইরান, যাদের মধ্যে সামরিক কমান্ডার, পরমাণু বিজ্ঞানী ও বেসামরিক লোকজন রয়েছে।
এদিকে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ভয়ে ইতিমধ্যে কমপক্ষে আট হাজার ইসরায়েলি ঘর-বাড়ি ছেড়ে বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
ইরানের সবশেষ হামলায় শুক্রবার ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে বহু মানুষ আহত হওয়ার খবর জানিয়েছে দেশটির জরুরি সেবা বিভাগ ম্যাগেন ডেভিড অ্যাডম (এমডিএ)।
তাদের হিসাবে, বিস্ফোরণে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে। যার মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর। এ ছাড়া কারমিয়েল এলাকার একটি আশ্রয়কেন্দ্রে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৫১ বছর বয়সী এক নারীর মৃত্যু হয়েছে বলেও জানানো হয়েছে।
এর মাঝেই রেডিও তেহরানের বাংলা অনুষ্ঠানে কর্মরত সিনিয়র সাংবাদিক ও উপস্থাপক গাজী আবদুর রশীদ তেহরান থেকে কালের কণ্ঠকে ফোনে সেখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কে জানান।
শহরের আজকের অবস্থা কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তেহরানের অবস্থা এখন একেবারে মৃত্যুপুরির মতো। লোকজন বেশির ভাগই চলে গেছে। দোকানপাট সব কিছুই একরকম বন্ধ, বাজারঘাট বন্ধ, সরকারি কিছু বাজার সরকারের নির্দেশে খোলা আছে। কিন্তু সেখানে কোনো ক্রেতা নেই।
রাস্তায় গাড়ি-ঘোড়া একেবারেই চলছে না। দুই-একটা গাড়ি যাও চলছে, সেগুলো সাঁই সাঁই করে তেহরান ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। তবে সাবওয়ে চলছে শহরের মধ্যে।’
‘ইরানিরা ভিত না এবং বাচ্চা ও পরিবারের জন্য অনেকে তেহরান ছাড়তে বাধ্য হয়েছে’ জানিয়ে তিনি আরো বলেন, বেশির ভাগ ইরানি বলছেন, ‘আমরা তেহরান কেন ছাড়ব’ এবং যুদ্ধকে তারা কোনোভাবেই যে ভয় পায় না সে কথাটা খুব স্পষ্ট করে বোঝা যায়।
এ ছাড়া এদিন ইসরায়েলবিরোধী সমাবেশ হয়েছে বলেও জানান আবদুর রশীদ।
তিনি বলেন, শহর খালি হয়ে যাওয়ার পরও সেখানে ভালো সমাগম হয়েছে এবং ইসরায়েলবিরোধী কথাবার্তা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, আজ ইরান ঘোষণা দিয়েছে, তারা খুব শিগগিরই আধুনিক প্রজন্মের যে ক্ষেপণাস্ত্রগুলো রয়েছে, সেগুলো নিক্ষেপ করবে।
ইরানি হামলার ভয়ে ঘরছাড়া ৮ হাজারের বেশি ইসরাইলি
ইসরাইলের চালানো হামলার জবাব দিচ্ছে ইরান। তেল আবিবে প্রতিশোধমূলক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে তেহরান।
ইসরাইলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এড়িয়ে সে সব ক্ষেপণাস্ত্র আছড়ে পড়ছে দেশটির বহুতল ভবনে। আর এমন পরিস্থিতিতে মৃত্যু ভয়ে ঘর ছেড়েছেন ইসরাইলের ৮ হাজারেরও বেশি বাসিন্দা। কাতার ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরা জানাচ্ছে এমন তথ্য।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের প্রতিশোধমূলক হামলার ফলে আট হাজারেরও বেশি ইসরাইলি বাস্তুচ্যুত হয়েছে। ইসরাইলি সম্পত্তি কর ক্ষতিপূরণ তহবিল ইয়েদিওথ আহরোনোথের বরাত দিয়ে এমন তথ্য জানিয়েছে সংবাদ মাধ্যমটি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ভবন বা যানবাহনের ক্ষতিপূরণের জন্য প্রায় ৩০ হাজার অনুরোধ করা হয়েছে তাদের কাছে।
এদিকে অষ্টম দিনেও তেহরানে হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরাইল। শুক্রবারও তেহরানে ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। ইরানের সংবাদমাধ্যম আসরিরান জানিয়েছে, ইরানের রাজধানীর কেন্দ্রীয় গিশা জেলার একটি আবাসিক ভবনের একটি অ্যাপার্টমেন্টে একটি ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইসরাইল।