# মালিক পক্ষের অভিযোগ বিপু-রিপন যুবদল কর্মী
বাংলার ভোর প্রতিবেদক
ঈগল পরিবহনের যশোর শহরের মণিহার টিকিট কাউন্টারসহ তিনটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে যুবদলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। সোমবার সন্ধ্যায় এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। দুই দিন ধরে প্রতিষ্ঠানগুলো তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে।
ঈগল পরিবহনের সূত্রে জানা গেছে, ঈগল পরিবহনের মণিহার এলাকার দুইটি টিকিট কাউন্টার বন্ধ থাকায় খুলনা থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী কোনো বাস যশোরে আসছে না। খুলনা থেকে গোপালগঞ্জ হয়ে বাসগুলো চলাচল করছে। এদিকে সোমবারের আগে প্রতিদিন ঈগল পরিবহনের ১০ থেকে ১২টি ট্রিপ যশোর থেকে ঢাকার মধ্যে চলাচল করত। এখন শহরের নিউ মার্কেট কাউন্টার থেকে এক থেকে দুইটি ট্রিপ ঢাকা-যশোরের মধ্যে চলাচল করছে। ফলে পরিবহনের শ্রমিকেরা কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছেন। ঈগল পরিবহনের সত্ত্বাধিকারী পবিত্র কাপুড়িয়ার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এমকে মটরস ও দাউদ খানের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খান মটরস নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে তালা ঝুলাতে বাধ্য করা হয়। দুইদিন ধরে প্রতিষ্ঠান দুইটি খোলা হচ্ছে না। কর্মচারিরা ভয়ে দোকান খুলতে পারছে না।
বুধবার বিকেলে শহরের মণিহার প্রেক্ষাগৃহ এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ঈগল পরিবহনের দুইটি টিকিট কাউন্টার বন্ধ রয়েছে। এছাড়া এমকে মটরস ও খান মটরস নামে দুই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ রয়েছে।
ঈগল পরিবহনের সত্ত্বাধিকারী ও আন্তঃজেলা বাস সিন্ডিকেটের সাধারণ সম্পাদক পবিত্র কাপুড়িয়া বলেন, ‘গত সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে জেলা যুবদলের সহসভাপতি সাইদুর রহমান বিপু ও যুবদলের কর্মী রিপনের নেতৃত্বে ৪০ থেকে ৫০ জন ঈগল পরিবহনের টিকিট কাউন্টারে কর্মচারিদের দিয়ে জোর করে কাউন্টার বন্ধ করে দেয়। এরপর আমার এমকে মটরস কার্যালয়ে এসে আমাকে বলে, এখনি দোকান বন্ধ করে বাড়ি যান। বন্ধ না করলে ঝামেলা আছে। তখন আমার কর্মচারিরা ভয়ে দোকান বন্ধ করে দেয়। আমরা বাড়িতে চলে আসি। এরপর আন্তঃজেলা বাস সিণ্ডিকেটের সভাপতি দাউদ খানের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খান মটরস-এ গিয়ে হামলা করে দোকান বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকে সব বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি বিএনপির শীর্ষ নেতা ও পুলিশ সুপারকে জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি’।
আন্তঃজেলা বাস সিণ্ডিকেটের (আইডিবিএস) সভাপতি দাউদ খান বলেন, ‘সেদিন রিপন ও বিপুর নেতৃত্বে ৩০ থেকে ৪০ জন বকচর এলাকার আইডিবিএস কার্যালয়ে গিয়ে শ্রমিক কর্মচারিদের কার্যালয়ে থেকে বের করে তালা লাগাতে বাধ্য করে। এরপর আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এসে দোকান বন্ধ করে দেয়। সেই থেকে আইডিবিএস ও আমার দোকান বন্ধ রয়েছে। আমার ছেলেকেও তারা মারধর করেছে’।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর জেলা যুবদলের সহসভাপতি সাইদুর রহমান বিপু বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দেয়া হয়েছে তা সত্য না। মূলত রিপনের সাথে আইডিবিএস সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অন্যায় অবিচার করেছে। তাই রিপনসহ কয়েকজন তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘পবিত্র কাপুড়িয়া আওয়ামী লীগের পৃষ্ঠপোষক। সোমবার আতিকুর রহমান বাবুর নেতৃত্বে শহরে আওয়ামী লীগের যে ঝটিকা মিছিল হয়েছে। তার মধ্যে সুমন অধিকারী নামে একজন ছিলো। মিছিল করে সে ঈগল পরিবহন কাউন্টারে গিয়ে বসেছিলো’।
ঈগল পরিবহন ও আইবিডিএস এর কর্মচারিরা জানান, রিপন ও বিপু যুবদলের নেতাকর্মী হলেও তারা আইডিবিএস এর শ্রমিক। দুইজনই পরিবহন কাউন্টারে স্ট্যাটারের কাজ করেন। পেশাগত কারণে তারা সংগঠনের সভাপতি দাউদ খান ও সাধারণ সম্পাদক পবিত্র কাপুড়িয়ার উপরে ক্ষুব্ধ। সেই ক্ষুব্ধতা থেকেই এই হামলার ঘটনা ঘটেছে।
তবে জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আনছারুল হক রানা বলেন, ‘সাইদুর রহমান বিপু ভালো ছেলে। দোকানপাট বন্ধ করে দেয়ার মতো কাজ করতে পারে না। তার পরেও আমাদের কাছে অভিযোগ আসলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে যশোরের পুলিশ সুপার জিয়াউদ্দীন আহম্মেদ বলেন, ‘যুবদলের কর্মী পরিবহন শ্রমিক একরামুল হোসেন রিপন নামে এক যুবক সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে শুনেছি। কিন্তু কেউ কোনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি। আমরা দেখছি, বিষয়টি নিয়ে যাতে আইনশৃঙখলার আর কোনো অবনতি না হয়। উভয় পক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। আশা করছি, আজকের মধ্যে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে’।