বাংলার ভোর প্রতিবেদক
ঋণ খেলাপী ও সিআইবি রিপোর্টে তালিকাভুক্ত থাকায় ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর ও বসুন্দিয়া) আসনে তালহা শাহরিয়ার আইয়ুবের (টিএস আইয়ূব) প্রার্থিতা গ্রহণ না করতে চিঠি দিয়েছে ব্যাংক।
মঙ্গলবার যশোরের রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ আশেক হাসানকে চিঠিটি দিয়েছে ঢাকা ব্যাংক। ব্যাংকটির ঢাকা ধানমন্ডি মডেল ব্রাঞ্চের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ রিয়াদ হাসান ও সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার এসএম রাইসুল ইসলাম নাহিদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে টিএস আইয়ূবকে ‘ঋণ খেলাপী ও সিআইবি রিপোর্টে তালিকাভূক্ত’ উল্লেখ করা হয়েছে।
টিএস আইয়ূব সাইমেক্স লেদার প্রোডাক্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে আসনটির বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ও কৃষকদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
আসনটিতে টিএস আইয়ুব ছাড়াও বিএনপি থেকে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেরুল হক সাবু ও অভয়নগর বিএনপির সভাপতি মতিয়ার ফারাজী।
এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন টিএস আইয়ুবের ছেলে ফারহান সাজিদ। দলীয় নেতাকর্মীরা বলছেন, দলীয় কৌশল হিসাবে দল আসনটিতে বিকল্প প্রার্থী হিসাবে দুইজনকে রেখেছেন।
এই বিষয়ে আসনটির বিএনপির মনোনীত প্রার্থী টিএস আইয়ুব বলেন, ‘ঋণ খেলাপি ছিলাম, আদালতের মাধ্যমে এখন নাই। তার পরেও যদি ব্যাংক কোন চিঠি দিয়ে থাকে, তাহলে বিস্তারিত ব্যাংক বলতে পারবে। আমি এখন ঋণ খেলাপি নাই বলে তিনি দাবি করেন।’
যশোরের রিটার্নিং অফিসারের কাছে ঢাকা ব্যাংকের পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, তালহা শাহরিয়ার আইয়ুব আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর-৪ হতে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন। প্রকৃতপক্ষে, তালহা শাহরিয়ার আইয়ুব সাইমেক্স লেদার প্রোডাক্টস লিমিটেড নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
প্রতিষ্ঠানটির নামে ঢাকা ব্যাংকের ধানমন্ডি মডেল শাখা হতে তিনি ঋণ গ্রহণ করেন। ২০১৮ সাল হতে তিনি একজন ঋণখেলাপী। যা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিআরপিডি সার্কুলার অনুযায়ী একজন ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপী হিসাবে চিহ্নিত। বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরো রিপোর্টে তিনি একজন মন্দজনিত ঋণ খেলাপী।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, টিএস আইয়ূব তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে ঢাকা ব্যাংক হতে ঋণ গ্রহণ করেন এবং বৈদেশিক রপ্তানি প্রক্রিয়া সংক্রান্ত দলিলাদি জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেন।
যে টাকা অনাদায়ী ও অপ্রত্যাবশিত হিসাবেই আছে। যার প্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন কর্তৃক তার বিরুদ্ধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা দায়ের এবং চার্জশিট প্রদান করেন।
এছাড়া ঢাকা ব্যাংক ঋণের টাকা আদায়ের জন্য তার বিরুদ্ধে অর্থঋণ মামলা দায়ের করলে আদালত ব্যাংকের পক্ষে রায় ও ডিক্রি প্রদান করেন। পরবর্তিতে ব্যাংক অর্থজারি মোকদ্দমা দায়ের করে, বর্তমানে নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর্যায়ে আছে। উক্ত মামলা ছাড়াও ব্যাংক তার বিরুদ্ধে চেক ডিজ-অনার সংক্রান্ত সি. আর মামলা রয়েছে। যা বর্তমানে শুনানী পর্যায়ে রয়েছে।
উপরোক্ত অবস্থার প্রেক্ষিতে, ঋণ খেলাপী ও সিআইবি রিপোর্টে তালিকাভুক্ত তালহা শাহরিয়ার আইয়ুবের নির্বাচনী এলাকা থেকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রার্থিতা গ্রহণ না করাসহ যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছে ব্যাংকটি।
দলীয় নেতাকর্মী সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির এই প্রার্থী সরকারি-বেসরকারি খাতের অন্তত চার ব্যাংকে ১৩৮ কোটি টাকার ঋণখেলাপি। জানা গেছে, ঢাকা ব্যাংকের ধানমন্ডি মডেল শাখা থেকে সাইমেক্স লেদার প্রোডাক্টের নামে ২০১৭ সালে ১৪টি ভুয়া এলসির বিপরীতে ২১ কোটি ২৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন।
২০১৯ সালে এ বিষয়ে মামলা করে ব্যাংক। সুদসহ বর্তমানে তার কাছে ব্যাংকটির পাওনা দাঁড়িয়েছে ৪৫ কোটি টাকা। সর্বশেষ গত বছরের এপ্রিলে টি এস আইয়ুব ও তার স্ত্রী তানিয়া রহমানকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত। সরকার পতনের পর তিনি কারামুক্ত হন। এরই মধ্যে তাকে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করে বাংলাদেশ ব্যাংকে রিপোর্ট করেছে ঢাকা ব্যাংক।
টিএস আইয়ুবের সাইমেক্স লেদার প্রোডাক্ট স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ধানমন্ডি শাখায় ৭০ কোটি টাকার খেলাপি। ঋণটি পুনঃতপশিল করতে তাকে এক কোটি ৪০ লাখ টাকা ডাউন পেমেন্ট জমার শর্ত দিয়েছে ব্যাংক। তিনি মাত্র ৬৫ লাখ টাকা জমা দেয়ায় তা নিয়মিত হয়নি। এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় মালিকানার জনতা ব্যাংকে ১১ কোটি টাকার ঋণখেলাপি তিনি।
এর বাইরে তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট আরেক প্রতিষ্ঠান অগ্রণী ব্যাংকে ১২ কোটি টাকার খেলাপি। এই বিষয়ে যশোরের রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ আশেক হাসান বলেন, ‘টিএস আইয়ূবের বিরুদ্ধে ঢাকা ব্যাংক থেকে চিঠি এসেছে। মনোনয়ন যাচাই বাছাইকালে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

