বাংলার ভোর প্রতিবেদক
যশোর শহরের ব্যস্ততম সড়ক হাজী মুহাম্মদ মহসীন (এইচএমএম) রোডের প্রবেশদ্বার দড়াটানা মোড়। এই সড়কে প্রবেশের মুখে ট্রাফিক বিভাগের ব্যারিকেট সরিয়ে নেয়া হয়েছে। অস্থায়ী দোকানের দৌরাত্ম্যে ভোগান্তি বিন্দুমাত্র কমেনি পথচারীদের। এখনও নিয়মিত বসছে প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা হকারদের দোকানপাট। এসব অবৈধ দোকানপাট বসানোর নেপথ্যে রয়েছে চাঁদাবাজি। প্রতিদিন ফুটপাতের দোকান থেকে চাঁদা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রভাবশালী চক্র। ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এই সড়কে চাঁদাবাজি হাতবদল হয়েছে। এদিকে পথচারিদের ভোগান্তি বেড়েছে। অন্যদিকে ব্যবসায়ী ও হকারদের চাঁদার রেট বেড়েছে।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের দড়াটানা মোড় থেকে বড়বাজারের দিকে যেতে সড়কের দুই পাশে এবং মাঝে অবৈধভাবে অসংখ্য দোকানপাট বসানো হয়েছে। ফলে সড়কের অনেকটা অংশ জুড়ে যানজট লেগেই থাকছে। চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন পথচারী ও যানবাহন চালকেরা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এই অবৈধ দোকানপাট বসানোর নেপথ্যে রয়েছে একটি শক্তিশালী সিণ্ডিকেট। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, পতিত সরকারের আমলে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শাহাজাহান কবীর শিপলুর নেতৃত্বেই এই অস্থায়ী দোকান বসানোর রমরমা বাণিজ্য চলত। সে সময় সড়কের পাশে ট্রাফিক পুলিশের ব্যারিকেড থাকা সত্ত্বেও শিপলু ও তার সহযোগীরা কয়েকজন অস্থায়ী দোকানদারের কাছ থেকে প্রতিদিন এক হাজার টাকা করে ভাড়া আদায় করতেন। ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবের কারণে ব্যবসায়ীরা মুখ খুলতে সাহস পাননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী জানান, গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর শিপলু ও তার দল আত্মগোপনে চলে গেলেও সড়কের চাঁদাবাজি থামেনি। তাদের নিযুক্ত লোকজন এখনও প্রতিদিন দোকানদারদের কাছ থেকে একই হারে ভাড়ার নামে চাঁদা আদায় করছে। ব্যবসায়ীরা জানান, তারা কয়েকজন মিলে প্রতিদিন এক হাজার টাকা ভাড়া দেন এবং অজ্ঞাতপরিচয় দুইজন ব্যক্তি এসে সেই টাকা নিয়ে যায়।
বড়বাজারে আসা সাধারণ মানুষ ও পথচারীরা এই অবৈধ দখলের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তারা জানান, সড়কের প্রবেশমুখে দোকানপাট বসানোর কারণে তাদের চলাচল করতে অসুবিধা হয়। বিশেষ করে বাজারের দিনগুলোতে এই ভোগান্তি চরমে পৌঁছায়। সড়কের ওপর দোকান থাকার কারণে প্রায়শই যানজট সৃষ্টি হয়। এতে করে পথচারীদের মূল্যবান সময় নষ্ট হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে যুবলীগ কর্মী মিলন, পুরাতন কসবা কাজী পাড়া এলাকার ছিনতাইকারী আসাদের ছেলে আসিফ এবং একই এলাকার আয়নাল এই অবৈধ দখলের নেতৃত্ব দিচ্ছে। এরা সকলেই শাহাজাহান কবীর শিপলুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরেও শিপলুর সাগরেদরা বহাল তবিয়তে থাকায় স্থানীয়দের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
ট্রাফিক বিভাগ ব্যারিকেড সরিয়ে নেয়ার পরেও সড়কের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে। স্থানীয়রা মনে করছেন, শুধুমাত্র ব্যারিকেড সরিয়ে দিলেই সমস্যার সমাধান হবে না। অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে সড়কটিকে জনসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করাই এখন সময়ের দাবি। তারা প্রশাসনের কাছে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে যশোর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী বিএম কামাল আহমেদ জানান, আমাদের অভিযান অব্যহত রয়েছে। এই রাস্তাটি পথচারীদের চলাচলের জন্য স্বাভাবিক রাখা হবে। দোকানদাররা তো আমাদের বলে না কারা এসে টাকা নিয়ে যায়। আমরা দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নেবা।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে চেষ্টা করে যশোর ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমানের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।